- প্রকাশিত : ২০১৮-০৪-১১
- ৬৭৩ বার পঠিত
-
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিনিধি:- সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। ততক্ষণ ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের মুক্তিযুদ্ধা বিষয়ক উপ কমিটির বৈঠক শেষে এ কথা জানান ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক।
আন্দোলনকারীদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, ‘আজ সংসদে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্ব আছে। সেখানে এই কোটা প্রসঙ্গ চলে আসতে পারে। সেখানে দেখুন প্রধানমন্ত্রী কী বলেন।’
সরকারি চাকরিতে কোটা ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনাসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলেছে শিক্ষার্থীরা। সোমবার এক মাসের জন্য আন্দোলন স্থগিত করলেও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আবার আন্দোলনে ফেরে শিক্ষার্থীরা।
আর বুধবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কোটা সংস্কার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দাবি করা হয়। সাত দিনের মধ্যে এই বক্তব্য দিতে সময় বেঁধে দেয় আন্দোলনকারীরা। ততদিন আন্দোলন চলবে বলে জানিয়ে দেয় তারা।
এরই মধ্যে সকালে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। জাকির জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা তাদেরকে জানিয়েছেন, সরকারি চাকরিতে কোনো কোটা থাকবে না।
তবে আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগ সভাপতির বক্তব্যে সন্তুষ্ট হতে রাজি নয়। তারা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আসার আগে ক্লাসে ফিরতে রাজি নয়।
স্থগিতের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আন্দোলনে ফেরার বিষয়ে আগের দিন প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম এর মধ্যে ‘অন্য কিছু আছে’ বলে মন্তব্য করেন।
এইচ টি ইমামের এই বক্তব্যের পরদিন আর সরকারি চাকরিতে অনাগ্রহী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রাজধানীতে সড়কে অবস্থান নেয়। আবার এই আন্দোলনের মধ্যে সরকারবিরোধী বিভিন্ন গোষ্ঠী সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে বলে তথ্য আছে সরকারের কাছে।
দলের এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘একটু ধৈর্য ধরুন। কোন গুজবে কান দেবেন না। ডিভাইসিভ পলিটিক্সের শিকার হবেন না। কারণ অনেকেই ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে।’
‘আমি সেদিন যা বলেছি। আজও একই কথা বলব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে পাঠিয়েছিলেন। কোটা ব্যবস্থা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। আমি সেই বার্তা তাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।’
সোমবারের বৈঠকের কথা তুলে ধরে কাদের বলেন, ‘তাদের দাবিগুলো যৌক্তক ও ইতিবাচক ভাবে দেখা হচ্ছে। তারা আমাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে, সুর মিলিয়েছিলো। আন্দোলন স্থগিত করেছে। এরপর কী হলো? কেনো আবারও কী কারণ তারা আন্দোলনে আছে সেটি আমার জানা নেই।’
মুক্তিযোদ্ধা কোটা কমানোর দাবির তীব্র সমালোচনা করে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী সোমবার সংসদে বলেছিলেন, ‘পৃথিবীর দেশে দেশে মুক্তিযোদ্ধা, দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষাকারী, যারা লড়াই করে, জীবন দেয়, জীবনকে বাজি রাখে তাদের জন্য সুযোগ রাখে। এটা নতুন কিছু না। যারা জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছে তাদের ছেলে মেয়ে কিংবা বংশধরদের আরেকটি সিঁড়ি সুযোগ পাবে না? ওই রাজাকারের বাচ্চারা সুযোগ পাবে? তাদের জন্য মুক্তিযুদ্ধ কোটা সংকুচিত করতে হবে?’
মন্ত্রী বলেন, ‘দেশে একটি এলিট শ্রেণি তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। আমাদের মফস্বলের কলিমুদ্দিন, সলিমুদ্দিনের ছেলে মেয়েরা উপরে উঠতে না পারে।’
আন্দোলনকারীরা ধরে নিয়েছেন মতিয়া চৌধুরী তাদেরকে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলেছেন। আর সোমবার সকালে বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় তারা। পরে তারা আবার আন্দোলনে ফেরার ঘোষণা দেয়।
আবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, কোটা সংস্কারের জন্য তিনি নিজেও প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু এই কাজ করতে বাজেট পার হয়ে যাবে।
তবে শিক্ষার্থীরা এই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে রাজি নয়। তারা দুই মন্ত্রীর মন্তব্যে ভেবেছেন কোটা সংস্কারের বিষয়ে সরকার রাজি নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কেউ পার্সনাল কথা বলতেই পারেন। তিনি মন্ত্রী হতে পারেন, এমপি হতে পারেন,বড় নেতা হতে পারেন। সেটি তাদের নিজস্ব বক্তব্য। আমি যেটি বলেছি সেটিই সরকারের বক্তব্য।’
‘বিভ্রান্তি ছাড়ানোর জন্য এদেশে একটি মতলবি মহল আছে। প্রধানমন্ত্রীর কথা আস্থা রাখুন। কোটা আন্দোলনটা যেনো বিভক্তির রাজনীতির শিকার না হয়।’
‘শেখ হাসিনার সরকার ভুল হলেও ভুল সংশোধনের সৎ সাহস রাখে।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গির কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এনামুল হক শামীম প্রমুখ।
নিউজটি শেয়ার করুন
এ জাতীয় আরো খবর..