১৯৯৪ সালে আনসার বিদ্রোহের ঘটনায় অভিযোগ থেকে খালাস পাওয়াদের মধ্যে যাদের বয়স ও শারীরিক-মানসিক সক্ষমতা আছে তাদের চাকরিতে পুনর্বহাল প্রশ্নে আপিল আবেদন নিষ্পত্তি করেছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ এ আদেন দেন।
তবে রায় কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ।
আইনজীবীরা জানান, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশে পেলে পর্যবেক্ষণগুলো জানা যাবে।
আবেদনকারীদের পক্ষে আজ আদালতে ছিলেন সিনিয়র এডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সিনিয়র এডভোকেট মো. সালাহ উদ্দীন দোলন ও ব্যারিস্টার অনীক আর হক। অন্যদিকে আনসার ভিডিপি মহাপরিচালকের পক্ষে ছিলেন এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
এর আগে গত ১৬ জুন প্রায় তিন দশক আগে ১৯৯৪ সালে আনসার বিদ্রোহের ঘটনায় অভিযোগ থেকে খালাস পাওয়া প্রায় ২ হাজার ৩৬৩ জন রিটকারীর মধ্যে যাদের বয়স ও শারীরিক-মানসিক সক্ষমতা রয়েছে তাদের চাকরিতে পুনর্বহাল বিষয়ে রায়ের জন্য আজ ২ আগস্ট দিন ধার্য করেছিলেন আপিল বিভাগ।
বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে ১৯৯৪ সালের ৩০ নভেম্বর আনসার বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। যা পরবর্তীকালে বিদ্রোহে রূপ নেয়। সেনাবাহিনী, বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) ও পুলিশের সহযোগিতায় ওই বছরের ৪ ডিসেম্বর বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এ ঘটনায় পরবর্তী সময়ে ২ হাজার ৬৯৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে কয়েকজনকে চাকরিতে পুনর্বহাল হলেও বাকি ২ হাজার ৪৯৬ আনসার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
পরে চাকরিচ্যুতদের বিরুদ্ধে পৃথক সাতটি ফৌজদারি মামলা করা হয়। এরমধ্যে ১৩২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। অভিযুক্তরা বিচারে খালাস পান। এ অবস্থায় তারা চাকরি ফিরে পেতে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেন। কিন্তু তাদের চাকরিতে ফিরিয়ে নেয়া হয়নি।
এ কারণে প্রথমে ২৮৯ জন ও পরে ১ হাজার ৪৪৭ জন চাকরিতে পুনর্বহাল এবং প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। পরবর্তীকালে ৬৪৭ জন পৃথক দুটি রিট করেন।
২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিল ২৮৯ জন এবং ওই বছরের ১০ জুলাই ১ হাজার ৪৪৭ জনকে চাকরিতে পুনর্বহালের রায় দেন হাইকোর্ট। ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ৬৭৪ জন নিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট।
রায়ের পর আইনজীবীরা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ১৯৯৪ সালের ৩০ নভেম্বর সংঘটিত আনসার বিদ্রোহের ঘটনায় চাকরিচ্যুত আনসারদেরকে চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে যাদের শারীরিক-মানসিক সক্ষমতা আছে তারাই চাকরি ফেরত পাবেন। কিন্তু যাদের সক্ষমতা নেই তারা যতদিন চাকরিতে ছিলেন তাদের ততদিনের পেনশন সুবিধা দিতে বলা হয়েছে।
আদালতের এ নির্দেশ রায় পরবর্তী সময়ে তিন মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
এরপর আনসার ভিডিপির মহাপরিচালক আপিল বিভাগে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করেন। সে আবেদনের শুনানি শেষ করে আজ আপিলসমূহ নিস্পত্তি করলো সর্বোচ্চ আদালত।