জনি বেয়ারস্টো ও মঈন আলির বিস্ফোরক দু’টি ইনিংসের সুবাদে দুর্দান্ত জয় দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করলো স্বাগতিক ইংল্যান্ড।
গতরাতে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ড ৪১ রানে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ফলে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ইংলিশরা। বেয়ারস্টো ৫৩ বলে ৯০ ও মঈন ১৮ বলে ৫২ রান করেন। চতুর্থ উইকেটে মাত্র ৩৭ বলে ১০৬ রান তুলেন মঈন-বেয়ারস্টো।
ব্রিস্টলে টস জিতে প্রথমে বোলিং করতে নামে দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্যাট হাতে শুরুতেই মারমুখী হয়ে খেলতে থাকেন অধিনায়ক জশ বাটলার। প্রথম ওভারেই ১টি করে চার-ছক্কা মারেন বাটলার। তৃতীয় ওভারেও একই চিত্র দেখা যায় তার ব্যাটে। তবে ঐ ওভারের চতুর্থ বলে বাটলারের বিদায় নিশ্চিত করেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার লুঙ্গি এনগিদি। মাত্র ৭ বল খেলে ২২ রান করেন বাটলার। আরেক ওপেনার জেসন রয়কে ৭ রানের বেশি করতে দেননি এনগিদি।
৪১ রানের মধ্যে দুই ওপেনারের বিদায়ে চাপে পড়ে ইংল্যান্ড। সেখান থেকে দলকে চাপমুক্ত করেন ডেভিড মালান ও জনি বেয়ারস্টো। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের উপর চড়াও ছিলেন তারা। প্রতিপক্ষ স্পিনার তাবরিজ শামসির করা ইনিংসের ১০ম ওভার থেকে ২১ রান তুলেন মালান-বেয়ারস্টো।
দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার আন্দিলে ফেলুকুওয়ায়ের করা ১২তম ওভারের চতুর্থ বলে ছক্কা ও পঞ্চম বলে চার মারেন মালান। তবে ওভারের শেষ বলে থামতে হয় তাকে। ১টি চার ও ৪টি ছক্কায় ২৩ বলে ৪৩ রান করেন মালান। বেয়ারস্টোর সাথে ৪৫ বলে ৭১ রান তুলেন মালান। মালানের বিদায়ের পর ৩৭ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের অষ্টম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন বেয়ারস্টো। অন্যপ্রান্তে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের উপর চড়াও ছিলেন মঈন আলিও। ফেলুকুওয়ায়ের করা ১৭তম ওভার থেকে ৩৩ রান তুলেন বেয়ারস্টো-মঈন। ঐ ওভারের প্রথম দুই বলে ২টি ছক্কা মারেন বেয়ারস্টো। আর শেষ তিন বলে তিনটি ছক্কা মারেন মঈন।
এনগিদির করা ১৮তম ওভার থেকে আসে ১৭ রান। ঐ ওভারের তৃতীয় বলে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মেরে মাত্র ১৬ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের পঞ্চম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান মঈন। টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডের পক্ষে দ্রুততম হাফ-সেঞ্চুরির রেকর্ড এটি। আর ঐ ওভারের পঞ্চম বলে মঈনকে থামান এনগিদি। ২টি চার ও ৬টি ছক্কায় ১৮ বলে ৫২ রান করেন মঈন। চতুর্থ উইকেটে মঈন-বেয়ারস্টো জুটি মাত্র ৩৭ বলে ১০৬ রান যোগ করে ইংল্যান্ডকে রানের পাহাড়ে বসার সুযোগ করে দেন। ১৮ ওভার শেষে ইংল্যান্ডের রান ছিলো ৪ উইকেটে ২১৮। তবে শেষ দুই ওভারে ১৬ রানের বেশি তুলতে পারেনি ইংল্যান্ড। শেষ ওভারে লিয়াম লিভিংস্টোসকে ৫ ও বেয়ারস্টোকে ৯০ রানে বিদায় দেন এনগিদি। ৩৯ রানে ৫ উইকেট নেন তিনি। টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে ৫ বা ততোধিক উইকেট শিকারে সবচেয়ে বেশি রান দিয়ে রেকর্ডও গড়েন এনগিদি। ২৬ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত ৫ উইকেট নিলেন এনগিদি।
বেয়ারস্টোর ৫৩ বলের ইনিংসে ৩টি চার ও ৮টি ছক্কা ছিলো। ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৩৪ রান করে ইংল্যান্ড। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডের এটি সর্বোচ্চ দলীয় রান। আর ঘরের মাঠে এই ফরম্যাটে সর্বোচ্চ রানের দেখা পেল ইংলিশরা।
২৩৫ রানের বিশাল টার্গেটে শুরুটা ভালো হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার। ২ ওভারে ৭ রানে ২ উইকেট হারায় তারা। কুইন্টন ডি কককে ২ ও রিলি রোসৌকে ৪ রানে আউট করেন ইংল্যান্ডের পেসার রিচি টপলি। তৃতীয় উইকেটে ৩৬ বলে ৬৫ রান তুলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে লড়াইয়ে ফেরান রেজা হেনড্রিক্স ও হেনরিচ ক্লাসেন। ক্লাসেনকে ২০ রানে শিকার করে ইংল্যান্ডকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন স্পিনার আদিল রশিদ। ২৮ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের অষ্টম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন হেনড্রিক্স। মঈনের প্রথম শিকার হয়ে ৫৭ রানে আউট হন তিনি। ৩৩ বল খেলে ৯টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন হেনড্রিক্স। মিডল-অর্ডারে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ডেভিড মিলারকে ৮ রানে থামিয়ে ইংল্যান্ডের সহজ জয়ের পথ তৈরি করে ফেলেন রশিদ। কিন্তু ইংলিশদের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান ট্রিস্টান স্টাবস। ক্যারিয়ারের তৃতীয় ম্যাচে প্রথমবারের মত ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে ঝড় তুলেন স্টাবস। ১২তম ওভারে মঈনকে তিনটি ছক্কা মারেন তিনি। এরপর জর্ডান-রশিদকে ১টি করে ছক্কা হাঁকান স্টাবস। মাত্র ১৮ বলে টি-টোয়েন্টিতে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন এই ডান-হাতি ব্যাটার।
রিচার্ড গ্লেসনের করা ১৬তম ওভার থেকে ২১ রান তুলেন স্টাবস ও ফেলুকুওয়াও। শেষ ৪ ওভারে ৬৪ রান দরকার ছিলো দক্ষিণ আফ্রিকার। কিন্তু গ্লেসনের করা ১৯তম ওভারে ৩ উইকেট হারালে হার নিশ্চিত হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৯৩ রান তুলে প্রোটিয়ারা। ২টি চার ও ৮টি ছক্কায় ২৮ বলে ৭২ রান করেন স্টাবস। ইংল্যান্ডের গ্লেসন ৩টি, টপলি-রশিদ ২টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন মঈন।
আজ রাতেই সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে আবারও মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা।