লড়াই ছাড়াই ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে সেন্ট লুসিয়া টেস্ট ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম টেস্ট ৭ উইকেটে হেরেছিলো টাইগাররা। বিশ^ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ এই সিরিজে হোয়ায়ইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ। টেস্ট হারের পেছনে দলের বাজে পারফরমেন্সকে দায়ী করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
তিনি জানান, টেস্ট ম্যাচ জিততে চাইলে সব জায়গায় উন্নতি করতে হবে। আর টেস্টের সংস্কৃতি আমাদের দেশে কখনও ছিল না, এখনও নেই। উন্নতি করতে হলে, এখানেও নজর দেয়ার আহ্বান সাকিবের।
অবিস্মরনীয় জয় দিয়ে এ বছর টেস্টে যাত্রা শুরু করেছিলো বাংলাদেশ। বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ৮ উইকেটে জয় পেয়ছিলো টাইগাররা। এরপর সাত টেস্টের মধ্যে ছ’টিতে হার, ১টিতে ড্র করে বাংলাদেশ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টে ৭ ও দ্বিতীয় টেস্টে ১০ উইকেটে হার টাইগারদের।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে শেষ ম্যাচে হেরে শততম টেস্ট হারের স্বাদ পেলো বাংলাদেশ। টেস্ট ইতিহাসে আর কোন দলের এত কম ম্যাচে হারের সেঞ্চুরির রেকর্ড নেই।
তবে টেস্টে ভালো করতে হলে, সব বিভাগে উন্নতি করতে হবে জানালেন সাকিব। পরের টেস্ট সিরিজের আগে হাতে সময় থাকায় উন্নতির উপায়ও দেখছেন সাকিব।
সেন্ট লুসিয়ার টেস্ট শেষে সাকিব বলেন, ‘টেস্ট ম্যাচ জিততে চাইলে সব জায়গায় উন্নতি করতে হবে আমাদের। পরের সিরিজের আগে আমাদের সামনে সময় আছে। এই সময়ে যারা টেস্টে আগ্রহী বা খেলতে চায়, যার যার জায়গা থেকে তারা উন্নতির চেষ্টা করবে। উন্নতি ছাড়া আমাদের ভালো কিছু করার রাস্তা নাই। এছাড়া সেটআপ খেলোয়াড়ও নেই, যারা এসে ভালো করে ফেলবে। যারা আছি, বাইরের দু-চারজন আছে। সবাই মিলে পরিকল্পনা করে এগোতে পারি, তাহলে ভালো করা সম্ভব হবে। আমাদের বেশ কিছু জায়গায় পরিবর্তন আনতে হবে, সেজন্য আমাদের চিন্তাগত পরিবর্তন জরুরি।’
পুরো সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটার-বোলাররা আশানুরুপ পারফরমেন্স করতে পারেননি। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ১৩৮ রান ছিলো অধিনায়ক সাকিবের। আর সর্বোচ্চ ১০ উইকেট পেসার খালেদ তবে সিরিজ হারের জন্য দলের সতীর্থদের দোষ দিতে রাজি নন সাকিব।
তিনি বলেন, ‘এখানে খেলোয়াড়দের খুব বেশি দোষ দেওয়া ঠিক হবে না। শুধু খেলোয়াড়দের দোষ দিলে হবে না। আমাদের দেশের সিস্টেমটাই এমন। আপনি কবে দেখছেন, বাংলাদেশে ৩০ হাজার দর্শক টেস্ট ম্যাচ দেখছে বা ২৫ হাজার দর্শক মাঠে এসেছে টেস্ট দেখতে?’
টেস্টে উন্নতি না হবার পেছনে সাকিব মনে করেন, দেশে টেস্টের সংস্কৃতি নেই। তিনি বলেন, ‘ইংল্যান্ডের টেস্টের প্রতি ম্যাচে অনেক দর্শক থাকে। টেস্টের সংস্কৃতিটাই আমাদের দেশে ছিল না কখনো, এখনো নেই। টেস্ট সংস্কৃতি নেই বলে যে হবে না, সেটা কিন্তু নয়। এই বিষয়ে পরিবর্তন আনাই আমাদের বড় দায়িত্ব। সবাই মিলে যদি পরিকল্পনা করে আগানো যায়, হয়তো কিছু সম্ভব হবে। নয়তো আসলে খুব বেশি দূর আগানো সম্ভব হবে না। কারণ আমাদের টেস্টের সংস্কৃতিই নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যে টেস্ট ক্রিকেটকে খুব বেশি মূল্যায়ন করি, তা নয়। হ্যাঁ, হতে পারে আমরা ফল ভালো করিনি, এ কারণে মূল্যায়নও হয়নি। তবে একটার সঙ্গে আরেকটার সম্পর্ক আছে। একটার সঙ্গে আরেকটাকে সম্পৃক্ত করতে হবে। তাহলেই ভালো কিছু সম্ভব।’
টেস্ট সিরিজ শেষে এবার ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি লড়াই নামবে বাংলাদেশ। সীমিত ওভারের সিরিজ নিয়ে আশাবাদি সাকিব। তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই অনেক জায়গা আছে উন্নতির। দলগতভাবে খেলতে পারলে আমাদের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতা সম্ভব। আমাদের যদি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা চিন্তা করেন, তাহলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এই সিরিজ। এরপর এশিয়া কাপ খেলবো, তার পরই বিশ্বকাপ। সেদিক থেকে সময় নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো প্রতিন্দ্বন্দিমূলক দলের সাথে খেলাটা বড় চ্যালেঞ্জ। এখানে ভালো করতে পারলে শ্রীলংকায় এশিয়া কাপে খুব ভালোভাবে কাজে আসবে। আমরা জানি এশিয়া কাপ খুবই কঠিন হবে, যেখানে ভারত-পাকিস্তান (আছে), এমনকি আফগানিস্তান এশিয়ার ভালো একটা দল। শ্রীলংকাও ধারাবাহিকভাবে খুবই ভালো খেলছে। আমাদের অবশ্যই উন্নতির অনেক জায়গা আছে।’