- প্রকাশিত : ২০১৮-০৪-০৯
- ৭৬১ বার পঠিত
-
নিজস্ব প্রতিবেদক
স্পোর্ট ডেস্ক:- সৎ বা ভালো কাজের পুরস্কার কী হতে পারে? নায়ককে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে চাকরি উপহার দেওয়া, এ তো সিনেমায় দেখা যায়। জীবনটা সিনেমা না হলেও ঢাকার ফুটবলে যে পুরস্কারের দৃষ্টান্ত ঘটেছে, তা হার মানাতে পারে টিভি পর্দার সিনেমার গল্পকেও। সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য নিজ ক্লাব আরামবাগের এক বলবয়কে ঢাকা থেকে মালয়েশিয়া নিয়ে চাকরি দিয়েছেন নাইজেরিয়ার ফুটবলার কিংসলে। বলবয় ২০ বছর বয়সী রাকিব হাওলাদার। দারুণ এই মহানুভবতার পেছনের গল্পটা কেমন ছিল?
আরামবাগের জার্সিতে এবারই প্রথম ঢাকার ফুটবলে নাম লিখিয়েছিলেন মালদ্বীপ নিউ রেডিয়ান্টে কয়েক বছর খেলা কিংসলে। ক্লাবের অন্য দুই বিদেশি ফুটবলার নাইজেরিয়ার বুকোলা ওলালেকান ও ক্যামেরুনের ইকাঙ্গার সঙ্গে একই রুমে থাকতেন। তাঁদের জামাকাপড় ধুয়ে দেওয়া, খাবার তৈরি করে দেওয়া, এটা-ওটা করে দেওয়ার কাজ ছিল রাকিবের। পুরো এক মৌসুম সৎ ও আন্তরিকভাবে দায়িত্বটা পালন করে গিয়েছেন। লক্ষ্মীপুরের লক্ষ্মী ছেলেটির এই নিষ্ঠা ও সততা চোখ এড়ায়নি কিংসলের।
রুমটিতে প্রায় সময়ই চোখের সামনে পড়ে থাকত টাকা বা ডলার। বরাবরই তুলে নিয়ে সযত্নে রেখে দিয়েছেন রাকিব। এ ছাড়া বাইরে থেকে কোনো কিছু কিনে আনার পরে বাকি টাকাটা হিসাব করে তুলে দিয়েছেন খেলোয়াড়দের হাতে। ফলে তাঁর প্রতি ভালোবাসা জন্মায় কিংসলের। রাকিবের পরিবারের অভাব-অনটনের কথা শুনে আরও বেশি সহানুভূতি জেগে ওঠে। অভাব-অনটনের মধ্যেও ছেলেটা এত সৎ দেখে রাকিবের জন্য কিছু করার তাড়না অনুভব করেন এ ডিফেন্ডার।
মৌসুম শেষ হতেই ফিরে গেছেন। কিন্তু ভোলেননি রাকিবকে। মালয়েশিয়া নিয়ে বন্ধুর গাড়ির শোরুমে জুটিয়ে দিয়েছেন একটি চাকরি। বন্ধুর বাড়িতে ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে থাকার জায়গাও। মার্চের ১৮ তারিখেই মালয়েশিয়া পাড়ি জমিয়েছেন টানা পাঁচ বছর আরামবাগ ক্লাবে বলবয়ের কাজ করা রাকিব।
এর আগে কিংসলেই নিজের টাকা দিয়ে করে দিয়েছেন পাসপোর্ট। দূতাবাসের কাজগুলোও নিজ দায়িত্ব নিয়ে করে দিয়েছেন। কিংসলের হাত ধরে নিজের জীবনের বাঁকবদলের গল্পটা মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে শোনালেন রাকিব, ‘জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। মালয়েশিয়া আসার মতো অবস্থা আমার ছিল না। কিংসলে ভাই আমাকে নিয়ে এসে আমার পরিবারটাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। এখানে ভালো টাকাই বেতন পাচ্ছি।’
রাকিবের মালিক স্টিভ মালয়েশিয়ান প্রিমিয়ার লিগে বড় ক্লাবে খেলে থাকেন।
২৭ বছর বয়সী কিংসলে নাইজেরিয়ার হলেও সংসার পেতেছেন মালয়েশিয়ায়। বাংলাদেশে আসার আগে বিভিন্ন দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার সুবাদে অর্থকড়িও জমিয়েছেন বেশ। তবে সবকিছুর চেয়ে তাঁর মনটাই বুঝি সবচেয়ে বড়। কিন্তু কিংসলে কোনো কৃতিত্বই নিতে রাজি নন, ‘আমি কিছুই না, এটা সৃষ্টিকর্তার অবদান। আমি শুধু একটা ভালো ছেলেকে বেছে নিয়ে ভালো একটা জায়গায় দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ওর প্রতি আমার আস্থা আছে বলেই আমার বন্ধুর বাসায় থাকারও ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’
নিউজটি শেয়ার করুন
এ জাতীয় আরো খবর..