২৪ বছর পর পাকিস্তান সফরে খেলতে এসেই তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ জয়ে উচ্ছ্বসিত অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স।
ঘরের মাঠে দুর্দান্ত প্রতাপে অ্যাশেজ জয়ের কয়েক মাসের পর পাকিস্তানের ডেরায় ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ে রোমাঞ্চিত কামিন্স।
সিরিজের প্রথম দুই টেস্ট ড্র হয়। তবে লাহোর টেস্ট জয়ে সিরিজ নিশ্চিতের ম্যাচে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হওয়া কামিন্স বলেন, ‘আমি মনে করি, দলের সবাই অনেক বেশি উচ্ছ্বসিত। ঘরের মাঠে অ্যাশেজ জয় এবং বিদেশে জয় সব সময় হয়না।’
গত জানুয়ারিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের অ্যাশেজ সিরিজ ৪-০ ব্যবধানে জিতে পাকিস্তানের মাটিতে এসেছিল অস্ট্রেলিয়া।
সিরিজের শেষ টেস্টে ৮ উইকেট নিয়ে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হওয়া কামিন্স আরও বলেন, ‘গত ২৫ থেকে ৩০ দিনের জন্য এটি ছিল সত্যিকারের পরিশ্রম এবং এখানে আসাটা অস্ট্রেলিয়ার জন্য ছিল সম্পূর্ণ আলাদা সাথে ভিন্ন কন্ডিশনও।’
কামিন্স আরও বলেন, ‘সবকিছুই ছিলো চমৎকার, অনেক উপভোগ্য।
শুক্রবার লাহোর টেস্ট ১১৫ রানের জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ জিতে অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে স্পিনার নাথান লায়ন ৮৩ রানে ৫ উইকেট নেন। কামিন্স ২৩ রানে ৩ উইকেট নেন।
জয়ের জন্য পাকিস্তানকে ৩৫১ রানের টার্গেট দেয় অস্ট্রেলিয়া। মাত্র ২২ রানে শেষ পাঁচ উইকেট হারিয়ে ২৩৫ রানে গুটিয়ে যায় ইনিংস।
চতুর্থ দিন শেষে বিনা উইকেটে ৭৩ রান করেছিলো পাকিস্তান। কামিন্স বলেন, ‘আমি মনে করি, আগের দিন এক বা দু’টি উইকেট শিকার করতে পারলে ভালো হতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম ৩০ থেকে ৪০ ওভারে নতুন বলে টপ-অর্ডার উইকেট পাওয়া কঠিন ছিল। কিন্তু বল নরম হয়ে যাওয়ায় এটি রির্ভাস সুইংয়ের সুবিধা দিয়েছে। আমি জানতাম, প্রতি ওভারে তিন রানের কাছাকাছি করতে হলে ভিন্নধর্মী ব্যাট করতে হবে (পাকিস্তান)।’
পাকিস্তানের ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিককে ২৭ এবং আজহার আলীকে ১৭ রানে তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে জয়ের পথ দেখান লায়ন ও কামিন্স। এরপর শেষ দুই সেশনে পাকিস্তানকে গুটিয়ে দেয় অস্ট্রেলিয়া।
১৯৯৮ সালের পর প্রথমবারের মতো পাকিস্তান সফরে অস্ট্রেলিয়া। নিরাপত্তার কারনে অতীতে পাকিস্তান সফরে আগ্রহী ছিলো না অস্ট্রেলিয়া।
তবে গত কয়েক বছরে পাকিস্তানে নাটকীয়ভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আয়োজনের মাত্রা বাড়িয়েছে তারা।
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে জন্মগ্রহণ করেন সিরিজের সেরা খেলোয়াড় অস্ট্রেলিয়ার উসমান খাজা। চার বছর বয়সে পাকিস্তান ছেড়ে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমান খাজার বাবা-মা। এবারের সফরটি দারুণভাবে উপভোগ করেছেন তিনি।
সিরিজে ২টি করে সেঞ্চুরি ও হাফ-সেঞ্চুরিতে ৪৯৬ রান করা খাজা বলেন , ‘আমি পাকিস্তান এবং তাদের সমর্থকদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমরা একটি দুর্দান্ত সময় কাটিয়েছি। সবাই অনেক আন্তরিকতা দেখিয়েছে।’
ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রক্ষনাত্মক ক্রিকেটের জন্যই হার বরণ করতে হয় পাকিস্তানকে। কিন্তু এটি মানতে রাজি নন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম।
তিনি বলেন, ‘ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী ছিল আমাদের পরিকল্পনা ছিলো। আমরা প্রথম সেশন ভালো খেলেছি, কিন্তু আমাদের দু’টি উইকেট সফট ডিসমিসাল ছিলো এবং এটি আমাদের সর্বনাশ করে।’
পাকিস্তানের পক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ইমাম-উল-হক ৭০ এবং বাবর ৫৫ রান করেন।
বাবর আরও বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য তাড়া করতে চেয়েছি। এটা বলা সঠিক নয়, আমরা রক্ষণাত্মক খেলেছি। আমরা ভালো লড়াই করেছি কিন্তু শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়াই ভালো দল হিসেবে প্রমাণ করেছে।’
টেস্ট শেষে আগামী ২৯ মার্চ থেকে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু করবে পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়া। ওয়ানডে লড়াই শেষে ৫ এপ্রিল সফরের একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে লড়বে দু’দল।