প্রথম দল হিসেবে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ফাইনালে উঠলো সাকিব আল হাসানের ফরচুন বরিশাল।
আজ প্রথম কোয়ালিফাইয়ারে বরিশাল ১০ রানে হারায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে। প্রথম কোয়ালিফাইয়ার হারলেও, ফাইনাল খেলার সুযোগ এখনও আছে কুমিল্লার।
আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ারে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের মুখোমুখি হবে কুমিল্লা। আজ এলিমিনেটর ম্যাচে খুলনা টাইগার্সকে ৭ রানে হারিয়ে দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ারে খেলার টিকিট পায় চট্টগ্রাম। দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ারের বিজয়ী দল ১৮ ফেব্রুয়ারির ফাইনালে বরিশালের মুখোমুখি হবে।
ফাইনাল নিশ্চিত করার ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪৩ রান করে বরিশাল। জবাবে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৩৩ রান করতে পারে কুমিল্লা।
ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্বান্ত নেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক ইমরুল কায়েস।
প্রথমে ব্যাট করার সুযোগটা ভালোভাবে কাজে লাগান ফরচুন বরিশালের দুই ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল। পাওয়ার প্লেতে বিনা উইকেটে ৫৭ রান তুলেন তারা।
স্পিনার নাহিদুল ইসলামের করা প্রথম ওভার থেকেই ১৬ রান তুলেন শাহরিয়ার। ২টি ছক্কা ও ১টি চার মারেন তিনি। আর একই ওভারে টি-টোয়েন্টিতে ২০ ম্যাচে ৫শ রান পূর্ণ হয় শাহরিয়ারের।
পরের ওভারে পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের চতুর্থ বলে ছক্কা মারেন শাহরিয়ার। শাহরিয়ারের চার-ছক্কার উৎসব অন্যপ্রান্তে দাঁড়িয়ে দেখেছেন টি-টোয়েন্টির বিধ্বংসী ব্যাটার গেইল।
৩ ওভার শেষে দলের রান যেখানে ২৯, সেখানে গেইলের রান ৩। তাই আর চুপ মেরে থাকতে পারেননি গেইল। বাঁ-হাতি স্পিনার তানভীর ইসলামের চতুর্থ ওভারে চারটি বাউন্ডারি মারেন গেইল।
পাওয়ার প্লে শেষে সপ্তম ওভারের দ্বিতীয় বলে গেইলকে তুলে নিয়ে কুমিল্লাকে প্রথম সাফল্য এনে দেন পেসার শহিদুল ইসলাম। ১৯ বলে ৪টি চারে ২২ রান করেন গেইল।
দলীয় ৫৮ রানে গেইল ফিরলেও ব্যাট হাতে নিজের মারমুখী মেজাজেই ছিলেন শাহরিয়ার। কুমিল্লার ইংল্যান্ড স্পিনার মঈন আলির করা অস্টম ওভারে ১টি করে চার-ছক্কা মারেন তিনি। তবে দশম ওভারে সুইপ করতে গিয়ে তানভীরের বলে লেগ বিফোর আউট হন শাহরিয়ার। লেগ বিফোর নিয়ে কোন সন্দেহ না থাকায় এডিআরএস নেননি ৩০ বলে ৪৪ রান করা শাহরিয়ার। ইনিংসে ২টি চার ও ৪টি ছক্কা মারেন তিনি।
শাহরিয়ারের আউটে বিপদ ঘনিয়ে আসে বরিশালের। দলীয় ৮৪ রানে দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে আউট হন শাহরিয়ার। এরপর ১১০ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় বরিশাল।
এসময় সাকিব আল হাসান ১ রান করে রান আউট হন। তিন নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্তকে ১৩ রানে ও তৌহিদ হৃদয়কে ১ রানে শিকার করেন মঈন। মারমুখী মেজাজে ইনিংস শুরু করেছিলেন জিয়াউর রহমান। ২টি চার ও ১টি ছক্কা মারার পর, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সুনীল নারাইনের প্রথম শিকার হন ১২ বলে ১৭ রান করা জিয়াউর।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডোয়াইন ব্রাভো ও উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহানের কারণে বরিশালের রান গোলার গতি হঠাৎ মন্থর হয়ে পড়ে। কুমিল্লার বোলারদের কাউন্টার অ্যাটাক না করে, দেখেশুনে খেলতে থাকেন তারা। সপ্তম উইকেটে ২৩ বলে ২৭ রানের জুটিতে ১টি করে চার-ছক্কা মারেন ব্রাভো ও নুরুল।
১৯তম ওভারে ব্রাভো-নুরুলকে বিদায় দেন শহিদুল। ২১ বলে ১টি ছক্কায় ১৭ রান করেন ব্রাভো। আর ১৩ বলে ১টি চারে ১১ রান করেন নুরুল।
মুস্তাফিজের করা শেষ ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি আদায় করে নিয়েছিলেন বরিশালের আফগানিস্তানের ক্রিকেটার মুজিব উর রহমান। তবে পরের পাঁচ বলে মাত্র ১ রান দেন ফিজ। ফলে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪৩ রানের সংগ্রহ পায় বরিশাল। ৬ বলে ৬ রানে অপরাজিত থাকেন মুজিব। কুমিল্লার শহিদুল ৩ ওভারে ২৫ রানে ৩ উইকেট নেন। এছাড়া মঈন ৪ ওভারে ২৩ রানে ২ উইকেট নেন।
১৪৪ রানের টার্গেট পেয়ে শুরুটা বেশ ভালেঅই করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। সাবধানী শুরুতে পাওয়ার প্লেতে ৩৮ রান তুলেন দুই ওপেনার লিটন দাস ও মাহমুদুল হাসান জয়। পাওয়ার প্লেতে ২টি চার ও ১টি ছক্কা ছিলো কুমিল্লা। অবশ্য শাহরিয়ারের করা চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলে লিটনের সহজ ক্যাচ ফেলেন শাহরিয়ার।
সপ্তম ওভারে ১২ রান তুলে নিয়ে দলের স্কোর ৫০এ নিয়ে যান লিটন ও জয়। ১০ ওভারে ৫৯ রান পায় কুমিল্লা।
রানের গতি কম থাকলেও কুমিল্লার উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গতে চিন্তায় ছিলেন বরিশালের অধিনায়ক সাকিব। অবশেষে ১১তম ওভারে পঞ্চম বোলার হিসেবে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসেই উইকেট তুলে নেন বাঁ-হাতি পেসার মেহেদি হাসান রানা। ৩০ বলে ২০ রান করেন জয়কে বোল্ড করেন রানা।
উইকেটে এসে বাউন্ডারি দিয়ে রানের খাতা খুলেছিলেন কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল। তবে বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হন তিনি। ১২তম ওভারের তৃতীয় বলে শফিকুলের বলে আউট হবার আগে ৫ রান করেন ইমরুল। আর পঞ্চম বলে উইকেটে সেট লিটনকে শিকার করেন শফিকুল। ৪টি চারে ৩৫ বলে ৩৮ রান করেন লিটন। এক ওভারে ২ উইকেট তুলে নিয়ে বরিশালকে খেলায় ফেরান শফিকুল।
এরপর দলের হাল ধরেন আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা দক্ষিণ আফ্রিকার ফাফ ডু-প্লেসিস। সাথে সঙ্গী ছিলেন মঈন। ১৩তম ওভারে মুজিবকে ও ১৪তম ওভারে সাকিবকে ছক্কা মারেন মঈন। আর শান্তর করা ১৫তম ওভার থেকে ১৪ রান পায় কুমিল্লা। এতে শেষ ৫ ওভারে ৪৬ রানের সমীকরন দাঁড় করায় কুমিল্লা।
ছক্কা হাঁকিয়ে ১৬তম ওভার শুরু করেছিলেন মঈন। কিন্তু ব্রাভোর পরের বলেই বোল্ড হন তিনি। ৩টি ছক্কায় ১৫ বলে ২২ রান করেন মঈন। মঈনের আউটের পর ১১ বল বাউন্ডারিহীন ছিলো কুমিল্লা। এতে আস্কিং রেট বেড়ে যায় কুমিল্লার। শেষ ১৮ বলে জয়ের সমীকরন দাঁড়ায় ৩২ রান।
১৮তম ওভারে ১০ রান পায় কুমিল্লা। ১৯তম ওভারে মাত্র ৪ রান দিয়ে ডু-প্লেসিসের উইকেট তুলে নেন রানা। এখানেই ম্যাচের লাগাম বরিশালের হাতে চলে যায়। কারন শেষ ওভারে ১৮ রানের দরকার পড়ে কুমিল্লার।
শেষ ওভারে বল হাতে নিয়ে ৭ রান দিয়ে ২ উইকেট তুলে বরিশালের জয় নিশ্চিত করেন মুজিব। ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৩৩ রান করে হারের লজ্জা পায় কুমিল্লা।
বরিশালের মুজিব-শফিকুল ও রানা ২টি করে উইকেট নেন। সাকিব ২৭ রান দিয়ে উইকেটশুন্য ছিলেন। ম্যাচ সেরা হন ৩ ওভারে ১৫ রানে ২ উইকেট নেয়া রানা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ফরচুন বরিশাল : ১৪৩/৮, ২০ ওভার (শাহরিয়ার ৪৪, গেইল ২২, শহিদুল ৩/২৫)।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স : ১৩৩/৭, ২০ ওভার (লিটন ৩৮, মঈন ২২, রানা ২/১৫)।
ফল : ফরচুন বরিশাল ১০ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মেহেদি হাসান রানা (ফরচুন বরিশাল)।