মেহেদি হাসান রানার বোলিং দুর্দান্ত বোলিং নৈপুন্যে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ(বিপিএল) টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে জয়ের ধারায় ফিরেছে ফরচুন বরিশাল। টুর্নামেন্টের অস্টম আসরে খুলনা টাইগার্স ইনিংসের ১৯তম ওভারে ৩ উইকেটে শিকার করে বরিশালকে জয়ের ধারায় ফেরালেন বাঁ-হাতি পেসার রানা। তার দুর্দান্ত বোলিং নৈপুন্যে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে বরিশাল ১৭ রানে হারিয়েছেন খুলনাকে। ১৭ রানে ৪ উইকেট নেন রানা।
৪ ম্যাচে ২ জয় ও ২ হারে এখন ৪ পয়েন্ট বরিশালের। প্রথম ম্যাচ জয়ের পর পরের দুই খেলায় হারে বরিশাল। বরিশালের মত টেবিলের চিত্র একই খুলনারও।
আজ আসরের ১১তম ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৪১ রান করে বরিশাল। জবাবে ১৯ ওভারে ১২৪ রানে গুটিয়ে যায় খুলনা।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বোলিং করতে নামে খুলনা টাইগার্স। নিজের প্রথম দুই ম্যাচে মিডল-অর্ডারে নামলেও আজ ইনিংস শুরু করেন ফরচুন বরিশালের ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল। সঙ্গী ইংল্যান্ডের জ্যাক লিন্টটকে নিয়ে শুরুতেই মারমুখী হন গেইল। কামরুল ইসলামের প্রথম ওভারেই তিনটি বাউন্ডারি আদায় করে ইউনিভার্স বস। তৃতীয় ওভারের প্রথম দুই বলে দু’টি চার মারেন লিন্টট। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৬ বলে ব্যক্তিগত ১১ রানে স্পিনার শরিফুল্লাহর বলে বোল্ড হন লিন্টট।
এরপর পিঞ্চ হিটার হিসেবে নেমে সুবিধা করতে পারেননি জিয়াউর রহমান। ১৩ বলে ১০ রান করেন তিনি। তবে পাওয়ার প্লের সুবিধা নেন গেইল। ৬ ওভারে ৪৭ রান পায় বরিশাল। অস্টম ওভারে থামেন জিয়া। দ্বিতীয় উইকেটে ৩৮ রান যোগ করেন গেইল-জিয়া।
জিয়া আউট হওয়ার পর গেইলকে হাফ-সেঞ্চুরি বঞ্চিত করেন শ্রীলংকার স্পিনার সেক্কুজে প্রসন্ন। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে সৌম্য সরকারকে ক্যাচ দিয়ে ৩৪ বলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৫ রানে আটকে যান গেইল।
গেইলের আউটের পরের ওভারে নুরুলকে হারিয়ে চাপে পড়ে বরিশাল। ১১ বলে ৮ রান করে মাহেদির শিকার হন তিনি। ৮৭ রানে চতুর্থ উইকেট পতনের দলের হাল ধরেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও তৌহিদ হৃদয়। উইকেটে সেট হয়ে বেশি দূর যেতে পারেননি তারা। হৃদয়কে ২৩ রানে ফেরান ফরহাদ রেজা। আর শান্তর উইকেট উপড়ে ফেলেন শ্রীলংকার থিসারা পেরেরা। ২১ বলে ২৩ রান করেন হৃদয়।
রান খড়ায় ভুগতে থাকা অধিনায়ক সাকিক আল হাসান আজ ব্যাটিং অর্ডারে নিচের দিকে নেমেছিলেন। কিন্তু সাত নম্বরে নেমেও সুবিধা করতে পারেননি সাকিব। ৯ বলে ৭ রান করেন প্রথম তিন ম্যাচে ৩৭ করা এ অলরাউন্ডার। পেরেরার দ্বিতীয় শিকার হবার আগে ২টি চার মারেন সাকিব। শেষদিকে ইরফান শুক্কুর ২, আফগানিস্তানের মুজিব উর রহমান ৭ ও মেহেদি হাসান রানা ১ রানে অপরাজিত ছিলেন। ফলে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৪১ রানের পুঁিজ পায় বরিশাল। খুলনার কামরুল ৩০ রানে ও ফরহাদ রেজা ১৮ রানে ২ উইকেট নেন।
খুলনাকে ১৪২ রানের টার্গেট দিয়ে শুরুতেই বল হাতে জ¦লে উঠেন এবারের আসরে বরিশালের হয়ে প্রথম খেলতে নামা আফগানিস্তানের স্পিনার মুজিব-উর- রহমান। ইনিংসের প্রথম ওভারে আক্রমনে এসেই দুই উইকেট তুলে নেন মুজিব। দ্বিতীয় ডেলিভারিতে বাউন্ডারি মেরেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে ফ্লেচার। তবে পরের ডেলিভারিতে ফ্লেচারকে ৪ রানে থামান তিনি। চতুর্থ বলে সৌম্যকে লেগ বিফোর আউট করেন মুজিব।
প্রথম ওভারে দুই উইকেট হারানোর চাপ সামলাতে গিয়ে সর্তকতা অবলম্বন করেন রনি তালুকদার ও মাহেদি হাসান। ২৬ বলে কোন বাউন্ডারি মারতে পারেননি তারা। ষষ্ঠ ওভারে ১টি করে চার-ছক্কায় ১৩ রান নেন রনি-মাহেদি। সপ্তম ওভারে সাকিবকে ছক্কা মারার পরই আউট হন মাহেদি। ২৩ বলে ১৭ রান করেন তিনি। অষ্টম ওভারে রনি ১৪ রানে থামেন। এতে ৪০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে আবারও চাপে পড়ে খুলনা।
এই চাপ সামলে উঠতে ইয়াসিরকে নিয়ে লড়াই শুরু করেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। নিজেদের মুখোমুখি হওয়া ২২ বলে কোন বাউন্ডারি পাননি তারা। ১২তম ওভার থেকে রানের গতি বাড়াতে থাকেন মুুশফিক-ইয়াসির। তারপরও ১৪ ওভার শেষে আস্কিং রেট ১০ ছুঁইয়ে ফেলে। এমন অবস্থায় ১৫তম ওভারে বাঁ-হাতি পেসার মেহেদি হাসান রানার বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বোল্ড হন ইয়াসির। ২০ বলে ২৩ রান করেন তিনি।
ইয়াসিরের বিদায়ে উইকেটে এসেই মারমুখী হয়ে উঠেন পেরেরা। ১৬তম ওভারে মুজিবকে ১টি করে চার ও ছক্কা মারেন । পরের ওভারে শফিকুলকে ছক্কা মারার পরের ডেলিভারিতে বিদায় নেন পেরেরা। ৯ বলে ১টি চার ও২টি ছক্কায় ১৯ রান করেন পেরেরা। এরপর প্রসন্নও ২ রানে ফিরেন। এমন অবস্থায় জয়ের জন্য শেষ ১৪ বলে ২৮ রান দরকার পড়ে খুলনার। উইকেটে মুশফিক থাকায় জয়ের আশা ছিলো খুলনার। প্রসন্নর বিদায়ের ওভারে ছক্কা মেরে শেষ ২ ওভারে জিততে ২১ রানের সমীকরন পায় খুলনা। হাতে উইকেট ছিলো ৩টি।
১৯তম ওভারে বল হাতে নিয়ে বিধ্বংসী রুপ নেন রানা। ওভারের দ্বিতীয় বলে ফরহাদ রেজা, পঞ্চম বলে শরিফুল্লাহকে এবং ষষ্ঠ বলে মুশফিককে শিকার আউট করে বরিশালকে দারুন এক জয় এনে দেন রানা। ১৯ ওভারে ১২৪ রানে অলআউট হয় খুলনা। ৩৬ বলে ১টি করে চার-ছক্কায় ৪০ রান করেন মুশফিক।
৩ ওভারে ১৭ রানে ৪ উইকেট নেন রানা। মুজিব-লিন্টট ২টি করে উইকেট নেন। এছাড়া সাকিব ২৪ রানে ১ উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন বরিশালের রানা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ফরচুন বরিশাল : ১৪১/৯, ২০ ওভার (গেইল ৪৫, হৃদয় ২৩, রেজা ২/১৮)।
খুলনা টাইগার্স : ১২৪/১০, ১৯ ওভার (মুশফিক ৪০, ইয়াসির ২৩, রানা ৪/১৭)।
ফল : ফরচুন বরিশাল ১৭ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মেহেদি হাসান রানা (ফরচুন বরিশাল)।