সিলেট সানরাইজার্সের ইনিংসের ১৮তম ওভারে হ্যাট্টিক করে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে জয়ের ধারায় ফেরালেন বাঁ-হাতি পেসার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি। আজ আসরের ১২তম ম্যাচে চট্টগ্রাম ১৬ রানে হারায় সিলেট সানরাইজার্সকে। বিপিএলের অভিষেকেই হ্যাট্টিক করলেন মৃত্যুঞ্জয়। এবারের আসরেও এটি প্রথম হ্যাট্টিক।
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ২০২ রানের বড় স্কোর করে চট্টগ্রাম। জবাবে মৃত্যুঞ্জয়ের হ্যাট্টিকে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৮৬ রান করে ম্যাচ হারে সিলেট।
৫ ম্যাচে ৩ জয় ও ২ হারে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে উঠলো চট্টগ্রাম। আর ৪ ম্যাচে ১ জয় ও ৩ হারে ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতে সিলেট।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রন জানান সিলেট সানরাইজার্সের অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন। প্রথমে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েই ব্যাট হাতে জ¦লে উঠেন চট্টগ্রামের বিদেশী ওপেনার ইংল্যান্ডের উইল জ্যাকস।
প্রথম ওভারে ৬ রান তুললেও, পরের তিন ওভারে যথাক্রমে- ১২, ১৫ ও ১৯ রান তুলেন জ্যাকস ও আরেক ওপেনার ওয়েস্ট ইন্ডিজের কেনার লুইস। এতে চতুর্থ ওভারেই দলীয় ৫০ রানে পৌঁছে যায় চট্টগ্রাম। লুইস ছিলেন একেবারেই সতর্ক মুডে। তাই জ্যাকস যখন ১৫ বলে ৪২ রানে দাঁিড়য়ে, তখন লুইসের রান ৯ বলে ৪ রান।
পঞ্চম ওভারের প্রথম তিন বলে ১০ রান তুলে মাত্র ১৮ বলে হাফ-সেঞ্চুরিতে পা রাখেন জ্যাকস। হাফ-সেঞ্চুরি পুর্ন করার পরের ডেলিভারিতে সিলেটের পেসার তাসকিন আহমেদের বলে শর্ট ফাইন লেগে লেন্ডন সিমন্সকে ক্যাচ দেন জ্যাকস।
৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় মাত্র ১৯ বলে ৫২ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন জ্যাকস। স্ট্রাইক রেট ছিলো ২৭৩ দশমিক ৬৮।
জ্যাক ফেরার ৪ বল পর থামেন লুইসও। সিলেটের স্পিনার সোহাগ গাজীর বলে আউট হওয়া লুইস ৮ রান করেন।
২৮ বলে ৬২ রানের উদ্বোধনী জুটির পর দ্রুতই প্যাভিলিয়নে ফিরেন চট্টগ্রামের দুই ওপেনার। ৫ বল ও ৪ রানে ব্যবধানে ফিরেন জ্যাকস ও লুইস। এরপর দলের স্কোরের ভিত গড়েন আফিফ হোসেন ও সাব্বির রহমান। বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন তারা। এতে বড় স্কোর গড়ার পথ পায় চট্টগ্রাম।
উইকেটে জমে যাওয়া আফিফ ও সাব্বিরের জুটি ভেঙ্গে ১৩তম ওভারে সিলেটকে দারুন এক ব্রেক-থ্রূ এনে দেন অধিনায়ক মোসাদ্দেক। ২৯ বলে ৩১ রান করেন সাব্বির। আর তৃতীয় উইকেটে ৪৫ বলে ৪৭ রানের জুটি গড়েন তারা।
১৩তম ওভারে সাব্বির আউট হওয়ার পর মারমুখী হয়ে উঠেন আফিফ। মুক্তার আলি-রবি বোপারার করা ৪ বল খেলে ১৭ রান তুলেন তিনি। বোপারাকে ছক্কার মারার পরের ডেলিভারিতে ইর্য়রকারে বোল্ড হন আফিফ। তার আগে ২৮ বলে ১টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৩৮ রান করেন আফিফ। এরপর চট্টগ্রামের নতুন অধিনায়ক নাইম ইসলাম ৮ রানে থামলেও, ব্যাট হাতে ঝড় তুলেন ইংল্যান্ডের বেনি হাওয়েল ও চট্টগ্রামের হয়ে প্রথম ৪ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করা মেহেদি হাসান মিরাজ।
হাওয়েল-মিরাজ ঝড়ে শেষ ২৮ বলে ৬৫ রান তুলে চট্টগ্রাম। এতে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ২০২ রান পায় চট্টগ্রাম। এবারের বিপিএলে এটিই সর্বোচ্চ দলীয় রান।
২১ বলে ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় অপরাজিত ৪১ রান করেন হাওয়েল। ৪ বলে ২টি ছক্কায় অপরাজিত ১৩ রান করেন মিরাজ। পেসার তাসকিনের করা শেষ ওভার থেকে ২২ রান নেন হাওয়েল ও মিরাজ। সিলেটের পাঁচ বোলার ১টি করে উইকেট নেন।
জয়ের জন্য পাহাড় সমান ২০৩ রান তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই হোচট খায় সিলেট। চট্টগ্রামের স্পিনার নাসুম আহমেদের বলে উইকেট ছেড়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্প হন গতকালই মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকার বিপক্ষে ১১৬ রান করা ওয়েস্ট ইন্ডিজের লেন্ডন সিমন্স। এবারের বিপিএলের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান ছিলেন তিনি। পরে ঐ ম্যাচেই আসরের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করেন ঢাকার ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল।
শুরুতেই উইকেট হারালেও, সেটি আমলে না নিয়ে ব্যাট হাতে ঝড় তুলেন ওপেনার এনামুল হক ও দক্ষিণ আফ্রিকার কলিন ইনগ্রাম। ৬ ওভারে ৪৬ রান উঠলেও, ১০ ওভার শেষে ৯১ রান পায় সিলেট। রেজাউর রহমানের করা ১০ম ওভারে ২১ রান তুলেন এনামুল ও ইনগ্রাম। ৩২ বল খেলে ১২তম ওভারে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ১১মত হাফ-সেঞ্চুরি করেন এনামুল।
৩৬ বলে ১৪তম ওভাওে ক্যারিয়ারের ৪৪তম হাফ-সেঞ্চুরিতে পা রাখেন ইনগ্রাম। ঐ ওভারেই এনামুল -ইনগ্রামের জুটি ভেঙ্গে চট্টগ্রামকে স্বস্তি এনে দেন মিরাজ। ৩৭ বল খেলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কাঢ ৫০ রান করেন ইনগ্রাম। দ্বিতীয় উইকেটে এনামুল-ইনগ্রাম ৭৫ বলে ১১২ রান যোগ করেন। এরপর আলাউদ্দিন বাবুকে ১ রানে থামান নাসুম।
তবে চতুর্থ উইকেটে ২০ বলে ৪২ রানের ঝড়ো জুটি গড়ে সিলেটকে লড়াইয়ে রাখেন এনামুল ও বোপারা। এক পর্যায়ে জয়ের জন্য শেষ ৩ ওভারে ৪৯ রানের প্রয়োজন পড়ে। ১৮তম ওভারের প্রথম দুই বলে ১০ রান তুলেন এনামুল। তবে ঐ ওভারের বাকী বলগুলোতে সিলেটের মহাসর্বনাশ করেন বাঁ-হাতি পেসার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি। বিপিএল অভিষেকে তৃতীয়-চতুর্থ ও পঞ্চম, টানা তিন বলে উইকেট শিকার করে হ্যাট্টিক করেন মৃত্যুঞ্জয়।
বিপিএল ইতিহাসে সব মিলিয়ে ষষ্ঠ, বাংলাদেশি হিসেবে তৃতীয় এবং অভিষিক্ত দ্বিতীয় বোলার হিসেবে হ্যাট্টিকের রেকর্ড গড়েন ২০ বছর বয়সী মৃত্যুঞ্জয়। এর আগে বাংলাদেশিদের মধ্যে বিপিএলের অভিষেকে হ্যাট্টিক করেন আলিস আল ইসলাম। এছাড়া বাংলাদেশের মধ্যে অন্য হ্যাট্টিক আল-আমিন হোসেনের।
নিজের তৃতীয় ওভারে এনামুলকে ৭৮ রানে, মোসাদ্দেক হোসেনকে ০ ও বোপারাকে ১৬ রানে বিদায় দেন মৃত্যুঞ্জয়। এনামুল তার ইনিংসে ৯টি চার ও ৩টি ছক্কা মারেন।
১৯তম ওভারে ৩ উইকেট পতনে ম্যাচ হার নিশ্চিত হয় সিলেটের। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৮৬ রান করে সিলেট। চট্টগ্রামের মৃত্যুঞ্জয় ৩৩ রানে ৩টি উইকেট নেন। নাসুম ১৮ রানে ২ উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স : ২০২/৫, ২০ ওভার (জ্যাকস ৫২, হাওয়েল ৪১*, গাজী ১/২৩)।
সিলেট সানরাইজার্স : ১৮৬/৬, ২০ ওভার (এনামুল ৭৮, ইনগ্রাম ৫০, মৃত্যুঞ্জয় ৩/৩৩)।
ফল : চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ১৬ রানে জয়ী
ম্যাচ সেরা : মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি (চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স)।