লিভারপুলকে ইংল্যান্ড ও ইউরোপ জয়ে সহায়তা করেছিলেন সাদিও মানে ও মোহাম্মদ সালাহ। এখন তারাই এগিয়ে যাচ্ছেন আফ্রিকান নেশন্স কাপের শিরোপা জয়ের পথে।
দুই জনই রোববার ক্যামেরুনে নেশন্স কাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে মাঠে নামছেন। মানের অনুপ্রেরানা পাওয়া সেনেগাল এদিন মুকোমুখি হবে তাক লাগানো ইকুয়াটোরিয়াল গিনির। আর সালাহর দল মিশর লড়বে মরোক্কোর বিপক্ষে।
মানে বলেছেন, নেশন্স কাপের শিরোপা জয়ের জন্য তিনি এযাবৎ যেসব পদক লাভ করেছেন তার সবগুলোই বিসর্জন দিতে রাজি আছেন। অপরদিকে সালাহ বলেছেন, ২০১০ সালের শিরোপা জয়ের পর মিশরিয় জনগনকে আরেকটি শিরোপা এনে দেয়ার জন্য তিনি মরিয়া।
তারা যদি দলকে এভাবে এগিয়ে নিতে থাকেন তাহলে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি আফ্রিকার সেরা স্পোর্টিং ইভেন্টের ফাইনালে দুইবারের রানার আপ সেনেগাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে রেকর্ড ছয়বারের চ্যাম্পিয়ন মিশরের বিপক্ষে।
আসন্ন কোয়ার্টার ফাইনালের জন্য চারটি দল তিউনিশিয়া, ক্যামেরুন, মিশর ও সেনেগালকেই ফেভারিট মনে করছে বার্তা সংস্থা এএফপি। যদিও ফুটবল হচ্ছে অনিশ্চয়তার খেলা, যেখানে যে কোন অঘটন ঘটার সুযোগ রয়েছে।
বুরকিনাফাসো বনাম তিউনিশিয়া
আসরের সবচেয়ে বড় অঘটনটি ঘটেছে গত সপ্তাহে। এ সময় ধুকতে থাকা তিউনিশিয়া শক্তিশালী নাইজেরিয়াকে হারিয়ে শেষ আটে জায়গা করে নিয়েছিল। শেষ ষোলর ওই ম্যাচে ইউসুফ মাসাকনির একমাত্র গোলে তিউনিশিয়া ১-০ গোলে জয়লাভ করে।
শনিবারের ম্যাচে আরো শক্তিশালী হয়ে ফিরতে পারে কার্থেজ ঈগলসরা। কারণ তারা ফিরে পেয়েছে প্রধান কোচ মন্দের কেবাইয়েরসহ বেশ কয়েকজন তারকা ফুটবলারকে। এই দলে আছে অধিনায়ক ও ফরোয়ার্ড ওহাবী খাজরী, যিনি সদ্য করোনা সংক্রমন থেকে ফিরেছেন।
তারপরও তিউনিশিয়া হচ্ছে আনপ্রেডিকটেবল একটি দল, যারা ক্যামেরুনে দুইবার হেরেও প্রথমবারের মত কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে যাচ্ছে। অপরদিকে বুরকিনাফাসোকে নিয়েও আগাম ধারনা করার কোন সুযোগ নেই। তারা এক ম্যাচে জয় পেলেও দুইটিতে ড্র এবং এটিতে হেরে গেছে।
এর আগে শেষ আটে দুইবার মুখোমুখি হয়েছিল দল দুটি। দুইবারেই জয়লাভ করেছে বুরকিনাফাসো।
ক্যামেরুন বনাম গাম্বিয়া
চলতি টুর্নামেন্টে এ পর্যন্ত চার ম্যাচে ৯ গোল করেছে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ক্যামেরুন। যা দলটিকে শিরোপা জয়ের অন্যতম ফেভারিটের আসনে বসিয়েছে। তবে অদম্য সিংহরা একমাত্র দল, যারা কোয়ার্টার ফাইনালে প্রতিবারই গোল হজম করেছে।
আসরে এ পর্যন্ত ছয় গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার আসন দখল করেছে ক্যামেরুনের অধিনায়ক ভিনসেন্ট আবুবকর। দলের বাকী তিন গোল করেছেন সতীর্থ ফরোয়ার্ড কার্ল টোকো একাম্বি। সুতরাং গাম্বিয়া জানে আসলে তাদের জন্য হুমকি হবে কারা।
আসরে যে ২৪টি দল কোয়ালিফাই হয়েছে তাদের মধ্যে বিস্ময়কর দল হচ্ছে অভিষিক্ত গাম্বিয়া। বিশ্ব র্যাংকিংয়ের ১৫০তম দলটি এখনো পর্যন্ত আসরে অপরাজিত আছে। তারা একটি মাত্র গোল হজম করেছে, তাও পেনাল্টি থেকে।
টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে রাতারাতি তারকা বনে গেছেন ইতালীর সিরি এ লীগের ক্লাব বোলনিয়ার মুসা ব্যারো। সতর্ক থাকতে হবে গাম্বিয়ার আরেক ফুটবলার আবলি জালোর বিষয়েও।
মিশর বনাম মরোক্কা
উত্তর আফ্রিকার এই দুই জায়ান্টের লড়াইটি হবে চার কোয়ার্টার ফাইনালের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ম্যাচ। এর আগে নেশন্স কাপের প্রতিদ্বদ্বিতায় মরোক্কা ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে। সালাহ কঠোর পরিশ্রম করলেও ক্যামেরুনে এখনো পর্যন্ত একটি মাত্র গোল করেছেন।
অপরদিকে মরোক্কোর রয়েছে পেনাল্টি থেকে ম্যাচ জয়ের নায়ক ফরোয়ার্ড ইউসেফ এন- নেসিরি ও সোফিয়ান বাউফল। শেষ ষোলর ম্যাচে তাদের শিকার হয়েছে মালাভি। প্যারিস সেন্ট জার্মেইর (পিএসজি) ফুল ব্যাক আচরাফ হাকিমিরও রয়েছে অসাধারণ দক্ষতা।
গিনি বনাম সেনেগাল
সাদিও মানে বলেন,‘ হত্যার কাছ থেকে বেচেঁ গেলে আপনাকে শক্তিশালী করে তুলবে’। আসন্ন ম্যাচে তিনি কেপ ভার্দের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষাকে কাজে লাগাতে চান। শেষ ষোলর লড়াইয়ে দলটির বিপক্ষে জয় পেতে অকাতরে ঘাম ঝড়াতে হয়েছে তাদের। লাল কার্ড দেখে ভার্দের দুইজন খেলোয়াড় মাঠ ছাড়ার পর নয়জনের দলের বিপক্ষে তারা শেষ পর্যন্ত গোল করতে পেরেছে। শুধু তাই নয়, আগের চার ম্যাচের মধ্যে মাত্র দুটিতে গোল করতে পেরেছে সেনেগাল।
তবে নাপোলির সেন্টার ব্যাক কালিদু কুলিবালি ও চেলসির গোল রক্ষক এডুয়ার্ড মেন্ডির কারণে সেনেগালের রক্ষনভাগ বেশ সংহত। কোয়ার্টার ফাইনালিস্টদের মধ্যে তারাই একমাত্র দল, যারা এখনো পর্যন্ত একটি গোলও হজম করেনি।
এদিকে টানা ৩৫ ম্যাচে অপরাজিত থাকা আলজিয়াকে থামিয়ে এবং টাইব্রেকারে মালিকে হারিয়ে শেষ আটে স্থান করে নেয়া গিনিও অপেক্ষায় আছে অসাধারণ কিছু করে দেখানোর। সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার সাউল কোকো এবং এস্তেবান ওবিয়াং ওত পেতে আছেন মানের পরীক্ষা নিতে।