জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট হারে করারোপ জরুরি। শনিবার জাতীয় সংসদের পার্লামেন্ট মেম্বার’স ক্লাবে ‘জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে প্রত্যাশিত তামাক কর ব্যবস্থাপনা ও করণীয়’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভায় জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্যরা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
দ্য ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুারো (বিইআর) ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি) এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারির সভাপতিত্বে সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এস এম আব্দুল্লাহ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পাবনা-১ আসনের মো. সামসুল হক টুকু। এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে চাঁপাই নবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. হারুনর রশিদ, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আবিদা আঞ্জুম মিতা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অনলাইন জুমের মাধ্যমে সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ডা. হাবিবে মিল্লাত, নীলফামারি-৩ আসনের রানা মোহাম্মদ সোয়াইল ও সংরক্ষিত নারী আসনের অপরাজিতা হক অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
মো. সামসুল হক টুকু বলেন, তামাকের উচ্চ মূল্য তামাক ব্যবহারে বিশেষ করে কিশোর তরুণদের তামাকের ব্যবহার শুরু করতে নিরুৎসাহিত করে। সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন তিনি।
ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, তামাকের জন্য ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন মানুষ দক্ষিণ এশিয়ায় মারা যাচ্ছে। এ মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য। নতুন নতুন তামাক ব্যবহারকারীদের রুখতে তামাকের উপর করহার বাড়াতে হবে। তামাকমুক্ত দেশ গড়তে দ্রুত একটি জাতীয় কর নীতি প্রণয়নের কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও রাজস্ব বৃদ্ধিতে আগামী অর্থবছরেই তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট করারোপের দাবি জানাচ্ছি।
মো. হারুনর রশিদ বলেন, তামাকের ব্যবহার যদি না রুখা যায়, তাহলে আমরা এসডিজির লক্ষ্য পৌছাতে পারব না। তামাকের মত ক্ষতি কর পন্য বিক্রিতে অবশ্যই লাইসেন্স বাধ্যমূলক করতে হবে। তিনি তামাক চাষের জমিগুলোকে তালিকাভুক্ত করে নানা প্রণোদনার মাধ্যমে তামাক চাষীদের বিকল্প চাষে উৎসাহিত করার আহবান জানান।
ডা. হাবিবে মিল্লাত বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের জন্য একটি জাতীয় কর নীতি থাকলে ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করতে সুবিধা হবে। এ জন্য সরকারের যথেষ্ঠ সদিচ্ছা আছে। চার স্তরভিত্তিক অ্যাডভেলরেম করারোপ পদ্ধতির পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে অতিদ্রুতই সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
মূল প্রবন্ধে এস এম আব্দুল্লাহ বলেন, এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ স্বল্প মূল্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি হয়। সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি হওয়ায় ভোক্তারা সহজেই তা ক্রয় করতে পারছে। প্রতি প্যাকেট সিগারেট সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়ায় সরকার গত অর্থবছরে ৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে। যেটা চলতি অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব ফাঁকি বন্ধে সরকারকে খুচরা শলাকায় সিগারেট বন্ধের পাশাপাশি সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্যে সুনির্দিষ্ট করারোপ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের (এনটিসিসি) সমন্বয়কারী হোসেন আলী খন্দকার, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহাদৎ হোসেন মাহমুদ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপচার্য অধ্যাপক ড. গণেশ চন্দ্র শাহা, হার্ট ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক ড. সোহেল রেজা চৌধুরী, ক্যান্সার হোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দীন ফারুক, ভাইটাল স্ট্রাটেজিসের প্রোগ্রাম হেড মো. শফিকুল ইসলাম, দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রুমানা হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।