প্লাস্টিক ও হালকা প্রকৌশল- এই দুই খাতের রপ্তানি উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় সরকার দু’টি আলাদা খসড়া রূপরেখা প্রণয়ন করেছে। এই রূপরেখা চূড়ান্তকরণে প্লাস্টিক ও হালকা প্রকৌশল শিল্পখাতের উদ্যোক্তা ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার ঢাকায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ‘এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভনেস ফর জবস’ (ইসিফোরজে) প্রকল্প কার্যালয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
সভায় গবেষণা সংস্থা বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড)-এর পক্ষ থেকে ‘প্লাস্টিক খাতের রপ্তানি রূপরেখা’ ও ‘হালকা প্রকৌশল খাতের রূপরেখা’ শীর্ষক এই দুই খসড়া রূপরেখা উপস্থাপন করা হয়। যেখানে দুই খাতের জন্য ২০৩০ নাগাদ হালনাগাদ রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণসহ বেশ কিছু নতুন প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, প্লাস্টিক বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাত। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে মানসম্মত নতুন নতুন পণ্য তৈরি বিশেষ করে প্লাস্টিক খেলনা রপ্তানির উপর জোর দিতে হবে। এক্ষেত্রে স্বত্বাধিকার সংক্রান্ত সমস্যা এড়াতে আমাদের নিজস্ব ডিজাইনের বিকাশ জরুরি, যার জন্য দরকার ডিজাইন সেন্টার।
তিনি বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশে মিউনিসিপ্যাল বিন ও মোবাইল টয়লেট তৈরি হয় প্লাস্টিক দিয়ে। আমরা এ বাজার ধরার চেষ্টা করতে পারি।
হালকা প্রকৌশল খাতের রপ্তানি রূপরেখার বিষয়ে তিনি বলেন, কম্বোডিয়ার মতো বাংলাদেশের হালকা প্রকৌশল খাতে বিশেষ করে বাইসাইকেল রপ্তানির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। ২০৩০ সাল নাগাদ এই খাত থেকে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি আয় অর্জন সম্ভব বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) হাফিজুর রহমান বলেন, ২০২৪ সাল নাগাদ আমাদের ৮০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তাই খাতভিত্তিক রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ রপ্তানি নীতিমালার সঙ্গে অব্যশই সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
ইসিফোরজে প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. মনসুরুল আলম বলেন, বর্তমানে সারাদেশে ৩০০ প্লাস্টিক রিসাইক্লিং কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় স্ক্র্যাপ থেকে প্লাস্টিক ফ্লেক উৎপাদন করা হয় এবং ইয়ার্ন তৈরির জন্য বছরে প্রায় ৪০ হাজার টন ফ্লেক রফতানি করা হয়।
তিনি আরো বলেন, এটি এখনই আমাদেরকে বন্ধ করতে হবে এবং বাংলাদেশে কিভাবে ফ্লেক থেকে ইয়ার্ন তৈরি করা যায় সে বিষয়ে ভাব জরুরি।
বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, অটোমোবাইল কম্পোনেন্ট ও প্লাস্টিকের খেলনা বর্তমানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য হিসেবে বিবেচিত। এ পণ্যগুলোর রপ্তানি সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধাসহ যথাযথ নীতি সহায়তা প্রদান করতে হবে।
বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, প্লাস্টিকখাতের প্রধান চারটি পণ্য হলো গৃহস্থালি পণ্য, ব্যাগ, স্যাকস ও খেলনা। মেডিকেল ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর বেশিরভাগ প্লাস্টিক পণ্য হলেও এইচএস কোড ভিন্ন হওয়ার ফলে এ খাতে এসব পণ্য যুক্ত হয় না। তিনি বলেন, খেলনার ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হলো স্বত্বাধিকার। এ সমস্যা নিরসনে জরুরিভিত্তিতে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ হালকা প্রকৌশল শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবদুর রাজ্জাক জানান, বর্তমানে বৈশ্বিক হালকা প্রকৌশলের ৭ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজার রয়েছে। এ বাজারের সুযোগ গ্রহণের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করা দরকার। তিনি হালকা প্রকৌশল শিল্পের উন্নয়নে আলাদা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করেন।