চট্টগ্রাম টেস্টে পাকিস্তানের কাছে হার এড়াতে অলৌকিক ঘটনা ঘটাতে হবে বাংলাদেশ। ম্যাচ জিততে পঞ্চম ও শেষ দিনে পাকিস্তানের ১০ উইকেট শিকার করতে হবে বাংলাদেশ। আজ ৩৩ ওভার বল করেও যা পারেনি টাইগাররা। ২০২ রানের টার্গেটে বিনা উইকেটে ১০৯ রান তুলে ফেলেছে পাকিস্তান। সিরিজের প্রথম টেস্ট জিততে আর মাত্র ৯৩ রান করতে হবে পাকিস্তানকে।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের করা ৩৩০ রানের জবাবে পাকিস্তান ২৮৬ রান করেছিলো। প্রথম ইনিংস থেকে ৪৪ রানের লিড পায় বাংলাদেশ। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫৭ রানে গুটিয়ে যায় টাইগাররা। জয়ের জন্য ২০২ রানের টার্গেট পায় পাকিস্তান
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৩৯ রান। অর্থাৎ ৬ উইকেট হাতে নিয়ে ৮৩ রানে এগিয়েছিলো টাইগাররা। কারন প্রথম ইনিংস থেকে ৪৪ রানের লিড পেয়েছিলো বাংলাদেশ।
চতুর্থ দিনের প্রথম বলেই বাউন্ডারি আদায় করে নেন বাংলাদেশের ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। তবে ঐ ওভারের তৃতীয় বলে বোল্ড হন তিনি। ১৬ রান করে পেসার হাসান আলির শিকার হন মুশফিক। ১২ রান নিয়ে দিনের খেলা শুরু করেছিলেন মুশফিক।
এরপর লিটন দাসকে নিয়ে দলের স্কোর বড় করতে থাকেন ইয়াসির আলি। ৮ রান নিয়ে দিন শুরু করেছিলেন ইয়াসির। কভার ড্রাইভ ও ফ্লিকে দারুন কিছু শটে বাউন্ডারি আদায় করে নেন ইয়াসির। এতে বড় ইনিংস খেলার ইঙ্গিতই দিচ্ছিলেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা ইয়াসির।
তবে ৩০তম ওভারে পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদির বাউন্সারে মাথায় বলের আঘাত পান ইয়াসির। ৩১তম ওভার ব্যাটও করেছিলেন তিনি। কিন্তু ঐ ওভারের শেষ বলে অস্বস্তি বোধ করায় মাঠ ছাড়েন ৬টি বাউন্ডারিতে ৭২ বলে ৩৬ রান করা ইয়াসির। লিটন-ইয়াসির ৪৭ রানের জুটি গড়েন।
এরপর মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে ২৫ রান যোগ করেন লিটন। ১১ রান করে পাকিস্তানী স্পিনার সাজিদ খানের বলে আউট হন মিরাজ।
মিরাজের আউটে ইয়াসিরের কনকাশন সাব হিসেবে ক্রিজে ব্যাট হাতে নামেন নুরুল হাসান সোহান । মধ্যাহ্ন-বিরতি পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন লিটন ও নুরুল। লিটন ৩২ ও নুরুল শুন্য রানে বিরতিতে যান।
বিরতির পর পাকিস্তানকে ব্রেক-থ্রূ এনে দেন সাজিদ। ১৫ রান করা নুরুলকে আউট করেন সাজিদ। আউট হওয়ার আগে লিটনের সাথে জুটিবদ্ধভাবে ৩৮ রান লিটন। এই জুটি গড়ার পথে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১০ম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান এ ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ১১৪ রান করা লিটন।
তবে নুরুলের আউটের পর ধস নামে বাংলাদেশের লোয়ার-অর্ডারে। ৭ বলের ব্যবধানে কোন রান ছাড়াই শেষ ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এতে ১৫৭ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
আফ্রিদির শিকার হন লিটন ও আবু জায়েদ। তাইজুলকে শিকার করেন সাজিদ। ৮৯ বলে ৬টি চারে ৫৯ রান করেন লিটন। তাইজল ও আবু জায়েদ খালি হাতে ফিরেন। পাকিস্তানের আফ্রিদি ৩২ রানে ৫ উইকেট নেন। টেস্ট ক্যারিয়ারে চতুর্থবারের মত পাঁচ বা ততোধিক উইকেট নেন আফ্রিদি। সাজিদ ৩টি ও হাসান ২টি উইকেট নেন।
২০২ রানের টার্গেটে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দিয়েছেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার আবিদ আলি ও আব্দুল্লাহ শফিক। প্রতিপক্ষের বোলারদের স্বাচ্ছন্দ্যে খেলে ৩০তম ওভারে শতরানের জুটি গড়েন আবিদ ও শফিক। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন তারা। ৩৩ ওভারে ১০৮ রান তুলেছেন আবিদ ও শফিক। প্রথম ইনিংসে ১৪৬ রানের জুটি গড়েছিলেন এ দু’জন। টেস্ট ইতিহাসে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার একই ম্যাচের দুই ইনিংসে উদ্বোধনী জুটিতে শতরান পেল পাকিস্তান। ২০০৩ সালে লাহোরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একই ম্যাচের দুই ইনিংসে যথাক্রমে ১০৯ ও ১৩৪ রানের জুটি গড়েছিলেন তৌফিক উমর ও ইমরান ফরহাত।
দিন শেষে হাফ-সেঞ্চুরি নিয়ে অপরাজিত থাকেন আবিদ ও শফিক। আবিদ ৫৬ ও শফিক ৫৩ রান করেন। আবিদ ও শফিক ৬টি করে চার মারেন। ১টি ছক্কা আসে শফিকের ব্যাট থেকে।
স্কোর কার্ড :
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৩৩০/১০, ১১৪.৪ ওভার (লিটন ১১৪, মুশফিক ৯১, হাসান ৫/৫১)
পাকিস্তান প্রথম ইনিংস : ২৮৬/১০, ১১৫.৪ ওভার (আবিদ ১৩৩, শফিক ৫২, তাইজুল ৭/১১৬)৩৯
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস (আগের দিন ৩৯/৪, ১৯ ওভার, মুশফিক ১২*, ইয়াসির ৮*)
সাদমান ইসলাম এলবিডব্লু ব আফ্রিদি ১
সাইফ হাসান ক এন্ড ব আফ্রিদি ১৮
নাজমুল হোসেন শান্ত ক শফিক ব আফ্রিদি ০
মোমিনুল হক ক আজহার ব হাসান ০
মুশফিকুর রহিম বোল্ড ব হাসান ১৬
ইয়াসির আলি আহত অবসর ৩৬
লিটন দাস এলবিডব্লু ব আফ্রিদি ৫৯
মেহেদি হাসান মিরাজ এলবিডব্লু ব সাজিদ ১১
নুরুল হাসান ক ফাহিম ব সাজিদ ১৫
তাইজুল ইসলাম স্টাম্প ব সাজিদ ০
আবু জায়েদ ক রিজওয়ান ব আফ্রিদি ০
এবাদত হোসেন অপরাজিত ০
অতিরিক্ত (বা-১) ১
মোট (অলআউট, ৫৬.২ ওভার) ১৫৭
উইকেট পতন : ১/১৪ (সাদমান), ২/১৪ (শান্ত), ৩/১৫ (মোমিনুল), ৪/২৫ (সাইফ), ৫/৪৩ (মুশফিক), ৫/৯০* (ইয়াসির), ৬/১১৫ (মিরাজ), ৭/১৫৩ (নুরুল), ৮/১৫৭ (লিটন), ৯/১৫৭ (আবু জায়েদ), ১০/১৫৭ (তাইজুল)।
পাকিস্তান বোলিং :
আফ্রিদি : ১৫-৮-৩২-৫,
হাসান : ১১-০-৫২-২,
ফাহিম : ৮-৩-১৬-০,
নোমান : ৯-৩-২৩-০,
সাজিদ : ১৩.২-১-৩৩-৩।
পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংস :
আবিদ অপরাজিত ৫৬
শফিক অপরাজিত ৫৩
অতিরিক্ত ০
মোট (বিনা উইকেট, ৩৩ ওভার) ১০৯
বাংলাদেশ বোলিং :
তাইজুল : ১৬-৩-৩৭-০,
এবাদত : ৫-১-২৩-০,
মিরাজ : ১০-২-৩৬-০,
আবু জায়েদ : ২-০-১৩-০।