নিঃশঙ্কচিত্তে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার এমন কোনো অপ্রত্যাশিত নীতি কার্যক্রম গ্রহণ করবে না যা আপনাদের বিনিয়োগের বিপক্ষে যেতে পারে। আপনাদের বিনিয়োগ এই দেশের আইন দ্বারা সুরক্ষিত থাকবে।
প্রতিমন্ত্রী আজ ঢাকায় রেডিসন হোটেলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২১ এর ‘পরিবহন ও লজিস্টিকস’ শীর্ষক কারিগরি/প্যারালাল অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
লজিস্টিকস ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কিং কমিটি, বাংলাদেশ এর কো-চেয়ার আবুল কাশেম খান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশ এর সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পিপিপি অথরিটির মহাপরিচালক মো. আবুল বাশার, পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিেিটড সিঙ্গাপুরের রিজিওনাল সিইও ওয়ান চী ফুং, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম, ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্স কর্পোরেশনের ভিক্টোরিয়া রিগবি ডেলমন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট সোসাইটির সভাপতি নকীব খান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, লজিস্টিক খাতের সামগ্রিক উন্নয়ন ও বিকাশে বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যেই বিভিন্ন ধরণের প্রণোদনামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং ২০৪১ সালের বাংলাদেশের জন্য প্রণীত প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় লজিস্টিক খাতকে একটি প্রাধিকারমূলক খাত হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যে দু’টি কর্মকৌশলের উপর ভিত্তি করে ২০২৩ সালের মধ্যে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেগুলো হলো, অধিকতর সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ ও বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি এবং রপ্তানি বহুমুখীকরণ। এই দ’ুটি কৌশল সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে প্রয়োজন একটি গতিশীল লজিস্টিক খাত। লজিস্টিক খাতের উন্নয়নে অধিকতর বেসরকারি বিনিয়োগ আনয়নে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এ জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী বলেন, লজিস্টিকস খাতের মধ্যে রয়েছে সকল ধরণের পরিবহন, পণ্যাগার, সংরক্ষণাগার, কোল্ড চেইন, ফ্রেইট এন্ড ফরওয়ার্ডারস, ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ারডিং এজেন্ট এবং বন্দর সেবাসমূহ।
আগামী ২০৩১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার জন্য ভৌত অবকাঠামো এবং লজিস্টিকস খাতে বিনিয়োগ বর্তমানে জিডিপি’র ২-৩ শতাংশ হতে বৃদ্ধি করে ৮-১০ শতাংশে উন্নীত করার কোন বিকল্প নেই। সরকার এ খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব এই উভয় প্রকারের বিনিয়োগ উৎসাহিত করছে। এ ছাড়াও এ খাতটিকে বিনিয়োগবান্ধব করার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, লজিস্টিকস খাতে যৌথ উদ্যোগে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগগ্রহন বৃদ্ধি করা।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, লজিস্টিকস খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা অপরিসীম। ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের পরিবহন ও অবকাঠামো খাতে প্রায় ২৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে এবং এ খাতসমূহের প্রদত্ত সেবার জন্য বছরে প্রায় ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজার রয়েছে। ব্যবসার আয়তন বৃদ্ধির সাথে সাথে এই বাজারও আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির মূল্য বর্তমানের ৩৩.৭ বিলিয়ন ডলার হতে অচিরেই বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৫ সালে প্রায় ৫৬.৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। এ ছাড়া আমদানি পণ্যের মূল্যও বর্তমানের ৫১ বিলিয়ন ডলার হতে বৃদ্ধি পেয়ে ৮৩.৯০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।
খালিদ মাহ্মুদ বলেন, ব্যবসা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির সাথে সাথে পণ্যাগার, সংরক্ষণাগার, কোল্ড চেইন ব্যবসা, সড়ক, নৌ, সমুদ্র এবং বিমানপথে পণ্য পরিবহন, নৌ, বিমান ও স্থল বন্দরের কার্যক্রম আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পাবে। ২০২২ সালের মধ্যে এই ব্যবসার প্রবৃদ্ধি হবে প্রায় ৬৪%। এ কারণে এফ শ্রেণির বিমান, যেমন এ-৩৮০, বি৭৪৭-৮এফ, ইত্যাদির অবতরণ ও উড্ডয়ন সহজতর করার জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সমুদ্রবন্দরের ক্ষেত্রে, অত্যাধুনিক বে কন্টেইনার টার্মিনাল, পতেঙ্গা টার্মিনাল, অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ডিপোসমূহের পারস্পরিক আন্তঃসংযোগ বৃদ্ধি, মাতারবাড়িতে ন্যূনতম ১৬ মিটার গভীরতার সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ইত্যাদি কার্যক্রম বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। পায়রা বন্দরকে ২০২২ সালের মধ্যে চালু করার লক্ষ্যে এর সকল ভৌত ও সহায়ক কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।