স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে অর্ধেকের বেশি মানুষ করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার আওতায় আসবেন। পর্যায়ক্রমে সবাই ডাবল ডোজ টিকার আওতায় আসবেন এবং এ কার্যক্রমে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে ১৫ তম অবস্থানে চলে আসবে। টিকা কার্যক্রমে পৃথিবীর সকল মহলে বাংলাদেশ প্রশংসিত হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে স্বাস্থ্য বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সাথে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালকের (স্বাস্থ্য) কার্যালয় এ সভার আয়োজন করে।
স্বাস্থ্য সচিব বলেন, কোভিডের মতো এত বড়ো মহামারি বিগত ১০০ বছরে কেউ দেখেনি। বৈশ্বিক মহামারির এ সময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে দেশের ১৮ কোটি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্বে ডাক্তার-নার্স, প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সকলে সমন্বিতভাবে কাজ করার কারণে আমরা কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি। অনেক উদার মনের প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার কারণে কোভিডের টিকা নিয়ে এখন আর কোন সমস্যা নেই। দেশের ৭ কোটি ১৩ লাখ মানুষকে টিকা প্রদান করা হয়েছে। মজুদ রয়েছে আরও ২ কোটি। কয়েকদিনের মধ্যে আসবে আরও ৩ কোটি ডোজ টিকা। প্রধানমন্ত্রীর ৭৫ তম জন্মদিন উপলক্ষে সারাদেশে ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ৭৫ লাখ ও নিয়মিত আরও ৫ লাখসহ মোট ৮০ লাখ ডোজ টিকা এক দিনে প্রয়োগ করা হয়েছে।
চট্টগ্রামে স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড চিকিৎসা ও ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্বল্প সময়ের মধ্যে চীন, রাশিয়া, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে আমরা চুক্তি করেছি। এসব দেশ থেকে কোভ্যাক্স, অ্যাস্ট্রোজেনেকা, মর্ডানা, সিনোফার্মা ও ফাইজার টিকা এনে মানুষের মাঝে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দিচ্ছি। প্রতি মাসে দুই থেকে আড়াই কোটি ডোজ টিকা আমরা পাচ্ছি। ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদেরকে টিকার আওতায় নিয়ে এসেছি।
চিকিৎসক-নার্স সংকটের কথা তুলে ধরে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব বলেন, কোভিডকালীন সময়ে বিশেষ ব্যবস্থায় ৪ হাজার চিকিৎসক ও ১৪ হাজার মিডওয়াইফারি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যেখানে চিকিৎসক-নার্স সংকট রয়েছে সেখানে অল্পদিনের মধ্যে তাদের পদায়নের মাধ্যমে সংকট নিরসন করা হবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ১২ বছর সময়কালে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের স্বাস্থ্য সেবায় ৫ লাখ ডাক্তার-নার্স-কর্মচারী সম্পৃক্ত হলে এদেশ থেকে চিকিৎসার জন্য আর কাউকে ভারত, থাইল্যান্ড ও অন্যান্য দেশে যেতে হবে না। বিদেশিরা আমাদের দেশে চিকিৎসা নিতে আসবে। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নত করতে পারলে হাজার হাজার ডলার দেশের বাইরে যাবে না। এ ব্যাপারে সরকার মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
সচিব বলেন, দেশে আমরা দ্রুত অক্সিজেনারেটর আমদানি করছি। এই মেশিন বাতাস থেকে প্রতি মিনিটে ৫০০ লিটার অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে। এই একটি মেশিন ১০০ জনকে অক্সিজেন দিতে সক্ষম। ইতোমধ্যে আমরা ৩ টি অক্সিজেনারেটর আমদানি করেছি। এগুলো চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও গোপালগঞ্জে ব্যবহৃত হচ্ছে। ১২৫ মেট্রিক টন থেকে বর্তমানে ৩৩০ মেট্রিক টন অক্সিজেন মজুদ রয়েছে। আরও ৮০ টি অক্সিজেনারেটর মেশিন বসলে প্রত্যেক বিভাগে ও জেলায় মানুষ এটির সুবিধা পাবেন। দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ২ হাজার ২০০ টি আইসিইউ বেড রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীরের সভাপতিত্বে ও কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মীর মুবারক হোসাইনের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোমিনুর রহমান, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইকবাল হোসেন, সিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সানা শামীমুর রহমান ও রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম এহেছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তার, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. শেখ সফিউল আজম, বিএমএ সভাপতি অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক খান ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আক্তার চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ হোসেন চৌধুরী। মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিভাগের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি ও চিকিৎসা বিষয়ে আলোকপাত করেন চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও উপ-পরিচালক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে করোনা মোকাবিলায় উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সম্পর্কে আলোকপাত করেন ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাবীল চৌধুরী। ২০২০ সালের মার্চ থেকে চলতি সালের অক্টোবর পর্যন্ত কোভিড-১৯ নিয়ে গবেষণার বিষয়ে আলোকপাত করেন চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের আউটব্রেক ইনভেস্টিগশন অফিসার ডা. মুশতারী মমতাজ মিমি।
মতবিনিময় সভার পূর্বে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া নগরীর কাজির দেউড়ি বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ উপলক্ষে ক্ষুদে ডাক্তার কার্যক্রম ও চমেক হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম পরিদর্শন করেন এবং সভাশেষে নগরীর সিনেমা প্যালেস সংলগ্ন স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ে বিভাগীয় আরটিপিসিআর ল্যাব ও মুজিব কর্নারের উদ্বোধন করেন।
চট্টগ্রাম বিভাগের অধীন ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ৬ টি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, ১১ জেলার সিভিল সার্জন, বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম মহানগরীর সরকারি বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন।