স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের কারণে নিজকে ‘ইউনিভার্স বস’ দাবী করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটার ক্রিস গেইল বয়সের কথা বিবেচনায় না এনে নিজেকে প্রমাণ করার দিকেই বেশী মনোযোগ দিচ্ছেন।
বয়স ৪২ বছরে পা রাখা গেইলের ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যান ও পারফর্মেন্স গর্ব করার মত, যা নিয়ে প্রতিপক্ষরা কেবল ইর্ষাই করতে পারে।
টেস্টে ট্রিপল, ওয়ানডেতে ডাবল এবং আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করা একমাত্র ক্রিকেটার গেইল। আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্রিকেটে দুটি সেঞ্চুরিসহ ৩০ এর সামান্য নিচে ব্যাটিং গড়ে তার মোট রানা ১,৮৫৪।
অবশ্য আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্রিকেটে গেইলের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটি এসেছে ২০১৬ সালের বিশ্বকাপে। যে বছর দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে এর পর থেকে গেইলের রানের ধারাবাহিকতা কমতে থাকে। বিগত ৫ বছরে আন্তর্জাতিকি ক্রিকেটের ২৬ ইনিংসে জ্যামাইকান এই ক্রিকেট তারকা একটি মাত্র হাফ সেঞ্চুরি করতে পেরেছেন।
এমনকি টপ অর্ডারের আসন ইতোমধ্যে হারিয়ে ফেলেছেন গেইল। ২০২১ সালে দক্ষিন আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হোম সিরিজে তিন নম্বরে ব্যাটিং করেছেন তিনি। স্বনামধন্য ক্যারিবীয় ক্রিকেট সাংবাদিক ও ধারাভাষ্যকার ফাজির মোহাম্মদ এএফপিকে বলেন,‘ মেধার কারনে নয়, খ্যাতির কারণে সর্বশেষ এই আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলতে যাচ্ছেন ক্রিস গেইল।
২০১৬ বিশ্বকাপের পর থেকে তার ধারাবাহিক ফর্মহীনতার অর্থ হচ্ছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিজেকে মেলে ধরতে না পারলে ক্রিকেটিং ধারায় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দলে তিনি হবেন একেবারেই শেষ প্রান্তের এক ক্রিকেটার।’
প্রায় ছয় বছর আগে বিশ্বকাপ খেলা ৩৬ বছর বয়সি পেস বোলার রবি রামপাল ও গেইলের দলভুক্তি ওই অঞ্চলে মত পার্থক্যের সৃস্টি করেছে।
উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে গেইল প্রয়োজনীয় ফিটনেসের ন্যুনতম মান অর্জন করতে পারেনি। অথচ তার কারণে দলে স্থান পাননি ব্যাটসম্যান শেরফেন রাদারফোর্ড ও ম্যাচ উইনিং স্পিনার সুনিল নারিন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফ্র্যাঞ্চাাইজি ভিত্তিক টি-২০ আসরের ফেরিওয়ালা গেইল রান তোলায়ও ধুকছেন। সর্বশেষ ১০ ইনিংসে একটিও হাফ সেঞ্চুরি নেই তার। গেইলের ফর্ম হীনতা নিয়ে এই সপ্তাহেই মিডিয়ার সঙ্গে অপ্রত্যাশিত ঝগড়া হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক ফাস্ট বোলার কার্টলি এ্যাম্ব্রোসের। তিনি বলেছিল গেইল ‘ অবধারিত(অটোমেটিক) পছন্দ নয়’।
এটি সত্যি যে, ২০১৩ সালের আইপিএলে (ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ) বিধ্বংসি এক ব্যাটিং কৃতিত্ব রয়েছে ক্রিস গেইলের। তার ৬৬ বলে গড়া ১৭৫ রানের ইনিংসটি এখনো টি-২০ ক্রিকেটের সেরা। অবশ্য নিজেকে ক্ষয়িষ্ণু সৈনিক হিসেবে মানতে রাজি নন গেইল। তার বিশ্বাস ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিতব্য ২০২১ টি-২০ বিশ্বকাপটি হবে সঠিক ব্যক্তির সঠিক সময়ের সঠিক স্থানে থাকা একজন খেলোয়াড়ের উপযুক্ত বিদায়।
জোহানেসবার্গে ২০০৭ সালে টি-২০ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী আসরে স্বাগতিক দক্ষিন আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বপ্রথম সেঞ্চুরি হাকিয়েছিলেন গেইল। ম্যাচে ৫৭ বলে ১১৭ রান সংগ্রহ করেন তিনি। ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শিরোপা জয়ে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকার রেখেছিলেন দীর্ঘদেহী এই ব্যাটসম্যান। ওই আসরে তিনটি হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন গেইল। তন্মধ্যে ছিল সেমি-ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭৫ রানের অপরাজিত ইনিংসটিও।
অবশ্য ফাইনালে তাকে নিয়ে বেশী প্রত্যাশা করা হলেও এর প্রতিদান দিতে পারেননি। ২০১২ ও ২০১৬ আসরের ফাইনালে তার ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ৭ রান। চলতি বছর সেন্ট লুসিয়ায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচজয়ী ৬৭ রানের ইনিংস খেলার পর গেইল বলেছিলেন,‘ রান নিয়ে কিছু মনে করবেন না। ক্রিস গেইল রান করতে যাচ্ছে না। আপনাদের খুশি হওয়া উচিৎ এটি দেখে যে, অচিরেই ৪২ বছরে পদার্পন করতে যাওয়া গেইল এখনো মাঠে আছে।
আশা করি ক্রিস গেইল যতদূর সম্ভব টিকে থাকবে। সেই মুহুর্তগুলোকে ধারণ করুন। মন্তব্যকারীরা ক্রিস গেইলের হাফ সেঞ্চুরির হিসাব রাখবেন না। শুধু ‘ইউনিভার্সেল বসের’ ক্রিকেট খেলাকে সম্মান দিন, মজা করুন এবং মুহুর্তগুলোকে উপভোগ করুন।’