বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ব্যবসা ও উন্নয়ন কার্যক্রমের বিবেচনায় চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অংশীদার। রপ্তানি পণ্যের কাঁচামাল, এক্সেসরিজসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা রয়েছে। ফলে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে রাজনীতির চেয়ে ব্যবসার গুরুত্ব বেশি।
রোববার বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রি (বিসিসিসিআই) ও ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বাণিজ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
‘বাংলাদেশ-চীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর সেরা রিপোটিং অ্যাওয়ার্ড’ বিতরণ উপলক্ষে রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত থেকে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।
প্রথমবার বিসিসিসিআই ও ইআরএফ যৌথভাবে এ ধরনের অ্যাওয়ার্ডের আয়োজন করলো। এতে ইআরএফের অর্ধশতাধিক সদস্য প্রতিবেদন জমা দেন। এর মধ্য থেকে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের বিভিন্ন খাতভিত্তিক ১০টি ক্যাটাগরিতে ১০টি রিপোর্টকে সেরা হিসেবে অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে। বিজয়ী রিপোর্টারদের ক্রেস্ট, সনদ ও ৫০ হাজার টাকা করে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বাণিজ্যমন্ত্রী, বিসিসিসিআই সভাপতি গাজী গোলাম মুর্তজা, ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভীসহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্যরা।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীটাই ব্যবসার ওপর চলছে। বৈশি^ক রাজনীতি এখন অর্থনৈতিক রাজনীতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে থাকেন শুধু রাজনৈতিক কূটনীতিতে হবে না। ব্যবসা বাণিজ্যের বিষয়ে কূটনীতি করতে হবে। সেই কূটনীতিতে যে সফল হবে, সে-ই প্রকৃত সফল। তিনি বলেন, ব্যবসা ও উন্নয়ন কার্যক্রমের বিবেচনায় চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অংশীদার। বাংলাদেশ যত কাঁচামাল আমদানি করে তার বড় অংশই আসে চীন থেকে। এজন্য করোনা মহামারী শুরুর সময় সবাই দুশ্চিন্তায় পড়েছিলো যে কাঁচামাল সরবরাহের কি হবে। কাঁচামাল না পাওয়া গেলে সময়মত পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হবে না। বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প। এছাড়া এক্সেসরিজ খাতেও একই অবস্থা সৃষ্টি হয়। যদিও এক্সেসরিজে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। তারপরও চীনের ওপর নির্ভরশীলতা রয়েছে। এছাড়া দেশের মধ্যে যত বড় বড় নির্মাণ কার্যক্রম আছে, তার অনেক ক্ষেত্রেই চীনের অংশগ্রহণ আছে। ফলে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে রাজনীতির চেয়ে ব্যবসার গুরুত্ব বেশি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং জাতিসংঘের ৭৬ তম অধিবেশনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিংয়ের বক্তব্যের উদ্বৃত্তি দিয়ে বলেন, চীন বৈশি^ক উন্নয়নে কাজ করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। সবুজ ও স্বাস্থ্যসম্মত বৈশি^ক উন্নয়ন চায় চীন। মানব কল্যাণ এবং কাউকে পেছনে ফেলে নয় এমন উন্নয়ন চায় চীন। এজন্য আঞ্চলিক উন্নয়ন ও বিভিন্ন উদ্ভাবনে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশও চীনের এই বৈশি^ক উন্নয়ন উদ্যোগ থেকে সহায়তা পাবে। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের অসাধারণ অগ্রগতি হয়েছে। সহ¯্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) নির্ধারিত সময়ে অর্জিত হয়েছে। আগামী উন্নয়ন লক্ষ্যগুলোও সময়মত অর্জিত হবে। ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটবে বাংলাদেশের। আর ২০৩০ সালের মধ্যে বিশে^র ৩৫ তম অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হবে।
বিসিসিসিআইয়ের যুগ্ম মহাসচিব আল মামুন মৃধার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির মহাসচিব শাহাজাহান মৃধা বেনু। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-চীনের উষ্ণতম অর্থনৈতিক, ব্যবসায়িক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক সৃষ্টি করাই বিসিসিসিআইয়ের মূল লক্ষ্য। এ ধরনের রিপোর্টিং এ লক্ষ্যকে এগিয়ে নেবে।
ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম বলেন, চীন বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার। ব্যবসা বাণিজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা রয়েছে। মহামারী মোকাবেলায় করোনার টিকা এবং অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকান্ডে চীন সহযোগিতা করছে। আশা করা যায় বিসিসিসিআই এ সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নেবে।
পরে, ধন্যবাদ জানান বিসিসিসিআই সভাপতি গাজী গোলাম মুর্তজা ও ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভী। বিসিসিসিআইয়ের যুগ্ম মহাসচিব আল মামুন মৃধা তার সমাপনী বক্তব্যে এই অ্যাওয়ার্ডের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং সাংবাদিকদের জন্য ফেলোশীপ চালু করা হবে বলে জানান।
যারা অ্যাওয়ার্ড পেলেন ঃ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক ক্যাটাগরিতে দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ডের বিশেষ প্রতিনিধি আবুল কাশেম, বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্পে চায়নিজ রাষ্ট্রীয় কোম্পানির বিনিয়োগ ক্যাটাগরিতে দ্য নিউ এইজ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সাখাওয়াত হোসেন, বাংলাদেশে চাইনিজ বেসরকারি বিনিয়োগ ক্যাটাগরিতে দ্য ডেইলি স্টারের স্টাফ রিপোর্টার আহসান হাবীব, বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধিতে চায়নিজ কোম্পানির সম্পৃক্ততা ক্যাটাগরিতে আলোকিত বাংলাদেশের স্টাফ রিপোর্টার মৌসুমী ইসলাম (বর্তমানে নিউজবাংলাটোয়েন্টিফোর ডটকম এ কর্মরত), বাংলাদেশে চাইনিজ বিনিয়োগকারী ও তাদের কর্মীদের জীবনাচরণ ক্যাটাগরিতে দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের বিশেষ প্রতিনিধি জসিমউদ্দিন হারুণ, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ ক্যাটাগরিতে দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের ইকোনমিক এডিটর প্রয়াত এ জেড এম আনাস পুরস্কার পেয়েছেন।
এছাড়া বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য চীন ক্যাটাগরিতে নিউজ২৪ টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার বাবু কামরুজ্জামান, করোনাভাইরাস মহামারীর সময়ে বাংলাদেশ-চায়নিজ বেসরকারি খাতের উদ্যোগ ক্যাটাগরিতে যমুনা টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার আলমগীর হোসেন, পর্যটন, আপ্যায়ন ও সাংস্কৃতিক খাতে বাংলাদেশ চীন বেসরকারি খাতের উদ্যোগ ক্যাটাগরিতে গাজী টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার তৌহিদুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ-চীন ভোগলিক অর্থনীতি অথবা অর্থনৈতিক কূটনীতি ক্যাটাগরিতে যমুনা টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার মাসুদুজ্জামান রবীন পুরস্কার পেয়েছেন।
এই পুরস্কারের বিচারক মন্ডলীতে ছিলেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ড পত্রিকার চীফ নিউজ এডিটর এ এম এম হারুনর রশিদ, বিসিসিসিআইর সহ সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল শাহ মোঃ সুলতান উদ্দিন ইকবাল, গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্কের অন্যতম সম্পাদক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী। পুরস্কারের পুরো প্রক্রিয়াকে সমন্বয় করেছেন বার্তা সংস্থা রয়াটর্সের সাবেক ব্যুরো প্রধান সিরাজুল ইসলাম কাদির।