দুই শিশুকে নিয়ে জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরানকে গুলশানের একটি বাসায় ১৫ দিন একসঙ্গে থাকতে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি এম, ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান সমন্বয় গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ আজ এ আদেশ দেন।
আদালত আদেশে বলেন, বাচ্চাসহ সকলের কথা শুনেছি। গুলশানের একটি বাসায় বাবা-মাসহ বাচ্চারা ১৫ দিন থাকবেন। ঢাকার সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তদারকি করবেন। পরিবারের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়টি দেখার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আজ সকালে শুনানির শুরুতে মায়ের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির আদালতকে বলেন, ‘বাচ্চাদের মা ঢাকার বারিধারায় একটি বাসা ভাড়া করেছে। আমরা চাই ওই বাসায় বাচ্চারা মায়ের সাথে থাকুক। বাচ্চাদের বাবাও তার মত করে ওই বাসায় আসুক-থাকুক। কারণ, এইকয়দিনে বাচ্চাদের মধ্যে যে একটা ট্রমা তৈরি হয়েছে তা কাটুক। তারপর আপনারা এবিষয়ে চূড়ান্ত কোন আদেশ দেন।’
বাবার পক্ষে আইনজীবী ফাওজিয়া করিম বলেন, ‘বাচ্চারা বাবার বাসায় থাকুন। মা বাচ্চাদের দেখতে আসুক কোন সমস্যা নেই। মা যে বাসাটার কথা বলছে সে এরিয়ায় বাচ্চাদের থাকার বিষয়ে আমাদের আপত্তি আছে।’
শুনানিতে দু’পক্ষের এমন দ্বিমুখী অবস্থানে প্রেক্ষাপটে আদালত বলেন, ‘আমরা চাই বাচ্চা দুটি পারিবারিক পরিবেশে থাকুক। আপনারা একটু পজিটিভলি ভাবুন।’
এরপর বাবার পক্ষে আইনজীবী আদালতকে বলেন, দু’পক্ষ একটু বসে সিদ্ধান্ত নেই। তারপর জানাই। এরপর আদালত এবিষয়ে আদেশের জন্য বেলা ৩টায় সময় নির্ধারণ করেন। ৩ টায় পুনরায় আদালতে বিষয়টি উত্থাপিত হলে দু’পক্ষই ফের একমত হতে পারছিলেন না। পরে আদালত ওই আদেশ দেন।
দুই মেয়েকে নিজের জিম্মায় পেতে ঢাকায় এসে গত ১৯ আগস্ট জাপানি নারীর করা রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। আদালত তার আদেশে দুই মেয়েসহ তাদের বাবা ও ফুপুকে আজ ৩১ আগস্ট হাইকোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দেন। এছাড়া ওই দুই মেয়েকে নিয়ে বাবা ৩০ দিন বিদেশ যেতে পারবেন না বলে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। এরপর দুই মেয়েকে বাবার হেফাজত থেকে সিআইডি উদ্ধার করে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখে। এবিষয়টি গত ২৩ আগস্ট মেয়েদের বাবার পক্ষের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম আদালতের নজরে আনেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে হাইকোর্ট আজ ৩১ আগস্ট পর্যন্ত শিশুদের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারেই রাখার নির্দেশ দেন। এসময়ে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মা ও বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাবা শিশুদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেন আদালত। সে অনুযায়ী বা-মা শিশুদের সাথে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে সময় দেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষের আইনজীবী আদালতে এসে জানান শিশুদের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। তখন আদালত উভয় পক্ষকে বলেন কোথায় থাকলে ভালো হয় সে বিষয়ে সমঝোতা করে সিদ্ধান্ত জানাতে। গতকাল রাত পর্যন্ত বাবা-মা এবিষয়ে একমত হয়ে কোন সমঝোতায় আসতে পারেনি বলে জানান দুই পক্ষের আইনজীবীই। পরে আজ উভয়পক্ষের শুনানি গ্রহণ এবং দুই বাচ্চাসহ তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন আদালত।