ফোনে আড়িপাতা বন্ধ ও ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার ঘটনাগুলোর তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে রিট পিটিশনের ওপর দুই সপ্তাহ পর শুনানি হবে।
আজ রাষ্ট্রপক্ষের সময়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে এই আদেশ দেন বিচারপতি এম, ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত একটি ভার্চুয়াল হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন এডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
আাইনজীবর শিশির মনির বলেন, আড়িপাতার রিট শুনানিতে এটর্নি জেনারেল থাকবেন বলে রাষ্ট্রপক্ষ সময় চাওয়ায় দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছেন আদালত।
সুপ্রিমকোর্টের ১০ আইনজীবী গত ১০ আগস্ট রিটটি করেছেন। রিটে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যানকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
আড়ি পাতা প্রতিরোধ ও ফাঁস হওয়া ফোনালাপের ঘটনায় কমিটি গঠন করে তদন্তের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিটে।
রিটকারী আইনজীবীরা হলেন : এডভোকেট মুস্তাফিজুর রহমান, এডভোকেট রেজওয়ানা ফেরদৌস, এডভোকেট উত্তম কুমার বনিক, এডভোকেট শাহ্ নাভিলা কাশফি, এডভোকেট ফরহাদ আহমেদ সিদ্দীকী, এডভোকেট মোহাম্মদ নওয়াব আলী, এডভোকেট মোহাম্মদ ইবরাহিম খলিল, এডভোকেট জি এম মুজাহিদুর রহমান (মুন্না), এডভোকেট ইমরুল কায়েস ও এডভোকেট একরামুল কবির।
রিট আবেদনে ২০১৩ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সংঘটিত ২০টি আড়িপাতার ঘটনা উল্লেখ করার পাশাপাশি রিটের পক্ষে সুনির্দিষ্ট চারটি আইনি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে। যেখানে বলা হয় : ১) বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০১ এর ৩০ (চ) ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের দায়িত্ব হল নাগরিকের ‘টেলিযোগযোগের একান্ত গোপনীয়তা রক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। কিন্তু এক্ষেত্রে কমিশন কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে নি।
২) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৩(খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘নাগরিকের গৃহ ও যোগাযোগের রক্ষণ’ একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকার। কিন্তু কমিশন সংবিধানের এই অনুচ্ছেদের বিধান প্রতিপালনে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে নি। ৩) অন্তত ২০টি ঘটনা ফাঁসের তথ্য উপস্থাপন করে কমিশনকে আইনি নোটিশ দেয়া সত্ত্বেও কমিশন যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে কোন জবাব প্রদান করেনি। ৪) টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০১ এর ৭১ ধারা অনুযায়ী আড়িপাতা দন্ডনীয় অপরাধ। যেখানে দোষী ব্যক্তি দুই বছর কারাদন্ড অথবা অনধিক ৫ কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন। অথচ আজ অবধি কমিশন স্বঃপ্রণোদিত হয়ে কারও বিরুদ্ধে কোন মামলা দায়ের করেনি।
এর আগে ফোনালাপে আড়িপাতা প্রতিরোধে আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের গৃহীত পদক্ষেপ জানতে চেয়ে গত ২২ জুন ১০ আইনজীবী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাবরে আইনি নোটিশ পাঠান। নোটিশের জবাব না পেয়ে আজ হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দাখিল করা হয় ।
এডভোকেট শিশির মনির বাসস’কে বলেন, সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদে চিঠিপত্র ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনীয়তা সংরক্ষণ নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ অধিকার সংবিধান কর্তৃক নিশ্চিত করা হয়েছে। অর্থাৎ সংবিধানের তৃতীয় ভাগে উল্লেখিত মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা সংরক্ষণ অন্যতম। ২০০১ সালের ১৬ এপ্রিল বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করা হয়। বিটিআরসি আইনের ৩০ (চ) ধারা অনুসারে টেলিযোগাযোগের একান্ত গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা কমিশনের দায়িত্ব। কিন্তু লক্ষ করা যাচ্ছে, এ ধরনের ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনা অহরহ ঘটছে। অথচ দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী কমিশনের দায়িত্ব হলো, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিশ্চিত করা। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের ৭১ ধারা অনুযায়ী আড়িপাতা দন্ডনীয় অপরাধ। এ অপরাধে দোষী ব্যক্তি দুই বছরের কারাদন্ড অথবা অনধিক পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। অথচ কমিশন স্বঃপ্রণোদিত হয়ে কারও বিরুদ্ধে মামলা করেনি।