সাকিব আল হাসানকে ছাড়াই বঙ্গবন্ধু টি-টুয়েন্টি কাপের শিরোপা জিতলো মাহমুদুল্লাহ-মাশরাফির জেমকন খুলনা। আজ ফাইনালে অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ব্যাটিং নৈপুন্যে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামকে ৫ রানে হারায় খুলনা। শ্বশুরের মৃত্যুর কারনে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ায় এই ফাইনালে খেলতে পারেননি সাকিব।
শিরোপা নির্ধারনী ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫৫ রান করে জেমকন খুলনা। পাঁচ নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে ৪৮ বলে অপরাজিত ৭০ রানের দারুন এক ইনিংস খেলেন মাহমুদুল্লাহ। জবাবে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৫০ রান করতে পারে চট্টগ্রাম।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ম্যাচে টস জিতে প্রথমে বোলিং করতে নামে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম। বল হাতে প্রথমেই আক্রমনে আসেন স্পিনার নাহিদুল ইসলাম। প্রথম বলেই খুলনার ওপেনার জহিরুল ইসলামকে শিকার করেন চট্টগ্রামকে দারুন সূচনা এনে দেন নাহিদুল। মিড-অফে মোসাদ্দেক হোসেনকে ক্যাচ দেন জহিরুল।
এখানেই ক্ষান্ত হননি নাহিদুল। নিজের দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলে আবারো খুলনা শিবিরে আঘাত হানেন তিনি। তিন নম্বরে নামা ইমরুল কায়েসকে ৮ রানের বেশি করতে দেননি নাহিদুল। মিড-অফে বাউন্ডারি লাইনে কাছে ফিল্ডার থাকা সত্বেও ছক্কা মারতে গিয়ে সৌম্য সরকারকে ক্যাচ দেন ইমরুল। ফলে ২১ রান তুলতেই ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে খুলনা।
চাপ থেকে দলকে চিন্তা মুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন ওপেনার জাকির হাসান ও চার নম্বরে সাকিব আল হাসানের পরিবর্তে নামা আরিফুল হক। জুটিতে ২২ রান আসার পর তাদের বিচ্ছিন্ন করেন স্পিনার মোসাদ্দেক। ২০ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৫ রান করা জাকিরকে শিকার করেন মোসাদ্দেক।
দলীয় ৪৩ রানে জাকিরের বিদায়ের পর ক্রিজে আরিফুলের সঙ্গী হন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। দ্রুত পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিয়ে দলের রানের চাকা ঘুড়াতে থাকেন তারা। ১১ ওভার শেষে ৭৭ রান পেয়েও যায় খুলনা। তখন রান রেট ছিলো ওভারপ্রতি ৭ করে।
এখান থেকে রানকে আরও বাড়ানোর পরিকল্পনায় ছিলেন আরিফুল-মাহমুদুল্লাহ। কিন্তু ১২তম ওভারে আরিফুলকে শিকার করে চট্টগ্রামকে খেলায় ফেরানোর পথ দেখান বাঁ-হাতি পেসার শরিফুল ইসলাম। উইকেটে পেছনে লিটন দাসকে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ২১ রানে থামেন আরিফুল। ২৩ বল খেলে ২টি চার মারেন তিনি।
দলের স্কোর যখন ৮৩ রানে, তখন আউট হন আরিফুল। এরপর শুভাগত হোমের সাথে ৩৪ রানের জুটি গড়ে দলকে ভালো অবস্থায় নিয়ে যান মাহমুদুল্লাহ। জুটিতে ১৫ রান অবদান রেখে শরিফেুলের বলে ফিরেন শুভাগত। তার ১২ বলের ইনিংসে ১টি করে চার ও ছক্কা ছিলো।
শুভাগত আউট হবার পর খুলনার ইনিংসে ২৬ বল বাকী ছিলো। এক প্রান্ত দিয়ে শামিম হোসেন শুন্য ও মাশরাফি বিন মর্তুজা ৫ রান করে থামলেও, অন্য প্রান্ত আগলে রেখে সংক্ষিপ্ত ভার্সনে ৩৯তম বলে হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান মাহমুদুল্লাহ। ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে চট্টগ্রামের পেসার মুস্তাফিজুর রহমানকে বাউন্ডারি মেরে এবারের আসরে প্রথম অর্ধশতকের দেখা পান তিনি।
ফাইনালের মঞ্চে মাহমুদুল্লাহর এই হাফ-সেঞ্চুরি শেষ পর্যন্ত খুলনাকে লড়াকু সংগ্রহই এনে দেয়। সৌম্যর করা শেষ ওভারের তৃতীয় বলে চার, চতুর্থ বলে ছক্কা ও পঞ্চম বলে চার মারেন মাহমুদুল্লাহ। ঐ ওভার থেকে ১৭ রান পায় দল। ফলে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫৫ রান করে খুলনা।
৪৮ বলে ৮টি চার ও ২টি ছক্কায় অপরাজিত ৭০ রান করেন খুলনার দলনেতা মাহমুদুল্লাহ। বল হাতে চট্টগ্রামের নাহিদুল-শরিফুল ২টি করে, মোসাদ্দেক-মুস্তাফিজ ১টি করে উইকেট নেন।
শিরোপা জয়ের জন্য ১৫৬ রানের টার্গেটে শুরুটা ভালোই ছিলো চট্টগ্রামের। ৩ ওভারে ২৩ রান যোগ করেন চট্টগ্রামের দুই ওপেনার লিটন দাস ও সৌম্য সরকার। খুলনার পেসার মাশরাফির করা প্রথম ওভার থেকে ৭ ও দ্বিতীয় ওভারে স্পিনার শুভাগত দেন ২ রান। তবে মাশরাফির করা তৃতীয় ওভার থেকে ১৪ রান নেন লিটন ও সৌম্য। লিটন ১টি চার ও সৌম্য ১টি ছক্কা মারেন।
ইনিংসের চতুর্থ ওভারে খুলনাকে প্রথম সাফল্যের দেখা দেন শুভাগত। ১২ রান করা সৌম্যকে বোল্ড করেন তিনি।
পরের ওভারে খুলনাকে আবারো উইকেট শিকারের আনন্দে মাতিয়ে তুলেন খুলনার পেসার আল-আমিন হোসেন। তিন নম্বরে ব্যাট হাতে নামা চট্টগ্রামের অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুনকে ৭ রানে লেগ বিফোর আউট করেন আল-আমিন। এতে ৩৫ রানে ২ উইকেটের পতন ঘটে চট্টগ্রামের।
এক প্রান্ত ধরে দেখেশুনে খেলছিলেন লিটন। কিন্তু রান আউটের ফাঁদে পড়ে থামতে হয় তাকে। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রানের মালিক ফাইনালে করলেন ২৩ বলে ২৩ রান। আসরে ৩৯৩ রান করেছেন তিনি।
দলীয় ৫১ রানে তৃতীয় ব্যাটসম্যান লিটনের আউটের পর বড় জুটি লক্ষ্যে নির্ধারন করেন দুই মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান সৈকত আলি ও শামসুর রহমান। রানের গতি কম থাকায় কিছুটা মারমুখী মেজাজেও ছিলেন তারা। ১৪ ওভার শেষে দলের স্কোর ৯৬তে নিয়ে যান সৈকত ও শামসুর। তখনও শেষ ৬ ওভারে ৬০ রানের প্রয়োজন পড়ে চট্টগ্রামের।
এই অবস্থায় খুলনাকে দুর্দান্ত এক ব্রেক-থ্রু এনে দেন পেসার হাসান মাহমুদ। ১৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে শামসুরকে বিদায় দেন তিনি। ৩৪ বলে ৪৫ রানের জুটি গড়েন সৈকত ও শামসু। ২১ বলে ৩টি চারে ২৩ রান করেন শামসুর।
শামসুর আউটের পর দলকে লড়াইয়ে রাখেন সৈকত। ১৬তম ওভারে মাশরাফিকে ও ১৮তম ওভারে শহিদুলকে একটি করে ছক্কা মারেন একবার জীবন পাওয়া সৈকত। কিন্তু রানের গতি দ্রুত ঘুড়াতে পারেনি সৈকত ও মোসাদ্দেক। ফলে শেষ ২ ওভারে জিততে ২৯ রান প্রয়োজন পড়ে চট্টগ্রামের। ১৮তম ওভার শেষে ৪১ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পুর্ন করেন ডান-হাতি ব্যাটসম্যান সৈকত।
হাসানের করা ১৯তম ওভারে ১টি করে চার-ছক্কা মারেন মোসাদ্দেক। ঐ ওভারে ১৩ রান পায় চট্টগ্রাম। ফলে শেষ ওভারে জিততে ১৬ রানের প্রয়োজন পড়ে চট্টগ্রামের।
শেষ ওভারে খুলনার হয়ে বল হাতে নেন শহিদুল। প্রথম দুই বলে ৩ রান দেন তিনি। তৃতীয় বলে মোসাদ্দেককে ও চতুর্থ বলে সৈকতকে শিকার করে খুলনাকে জয়ের ত্বার প্রান্তে নিয়ে যান এই পেসার। হ্যাট্টিকে সুযোগ পেয়েছিলেন শহিদুল। কিন্তু সেটি হতে দেননি চট্টগ্রামের নাদিফ চৌধুরি। পঞ্চম বলে ১ রান নেন নাদিফ। আর শেষ বলে শহিদুলকে ছক্কা মেরেও দলের হার এড়াতে পারেননি নাহিদুল। ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৫০ রান তুলে শিরোপা হাতছাড়া করে টুর্নামেন্ট জুড়ে দুর্দান্ত খেলা চট্টগ্রাম।
এ ম্যাচে চট্টগ্রামের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৩ রান করেন সৈকত। তার ৪৫ বলের ইনিংসে ৪টি ছক্কা ছিলো। খুলনার শহিদুল ২টি, হাসান-আল আমিন-শুভাগত ১টি করে উইকেট নেন। ৪ ওভারে ৪০ রান দিয়ে উইকেটশুন্য ছিলেন মাশরাফি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
জেমকন খুলনা : ১৫৫/৭, ২০ ওভার (মাহমুদুল্লাহ ৭০*, জাকির ২৫, নাহিদুল ২/১৯)।
গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম : ১৫০/৬, ২০ ওভার (সৈকত ৫৩, শামসুর ২৩, শহিদুল ২/৩৩)।
ফল : জেমকন খুলনা ৫ রানে জয়ী।