ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯৮৬ সালের বিশ^কাপে হাত দিয়ে গোল করার জন্য বিশ্বখ্যাত ও সমালোচিত দুটোই হয়েছিলেন দিয়েগো ম্যারাডোনা। পরবর্তীতে যা ‘হ্যান্ড অব গড’ এর আখ্যা পায় এবং ম্যাচে তার দ্বিতীয় গোলটি শতাব্দীর সেরা গোল হিসেবেই বিবেচিত হয়। ঐ ম্যাচটিতে ম্যারাডোনার দুর্দান্ত দ্বিতীয় গোলের পিছনে সহায়তাকারী তিউনিশিয়ান রেফারি আলি বিন নাসির বিষয়টি নিয়ে বেশ গর্বিত।
বিশ^কাপের কোয়ার্টার ফাইনালের ঐ ম্যাচটিতে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে পরাজিত করে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছিল আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে হাত দিয়ে ঐতিহাসিক ঐ গোলের চার মিনিটর পর নিজেদের অর্ধ থেকে একক প্রচেষ্টায় ইংলিশ রক্ষনভাগকে ভেঙ্গে দুর্দান্ত এক গোল করে ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনার জয় নিশ্চিত করেছিলেন।
বর্তমানে ৭৬ বছর বয়সী রেফারি আলি বিন নাসির সেদিনের সেই স্মৃতি মনে করে স্বীকার করেছেন তার হাতে আসলে কোন উপায় ছিলনা। ২০১৫ সালে ম্যারাডোনার সাথে যখন আবারো দেখা হয়েছিল তখন নিজের স্বাক্ষর করা একটি জার্সি উপহার দিয়েছিলেন এই তিউনিশিয়ানকে।
দ্বিতীয় গোলটি প্রসঙ্গে বিন নাসির বিবিসি স্পোর্টকে বলেছেন, ‘মধ্যমাঠ থেকে তিনি বলটি নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। আমি তাকে নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষনে রেখেছিলাম। কেউ যখন ম্যারাডোনার মত কোন খেলোয়াড়কে রেফারিং করবে তখন তার উপর থেকে চোখ সড়ানো কঠিন হয়ে পড়ে। তিন বার ইংলিশ খেলোয়াড়রা তাকে ফাউল করতে চেষ্টা করেও সফল হয়নি। অদম্য ইচ্ছাশক্তির বলেই সেদিন ঐ গোলটি করতে পেরেছিল ম্যারাডোনা, যা শুধু তার পক্ষেই করা সম্ভব। বক্স পর্যন্ত পৌঁছানোর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আমি ম্যারাডোনাকে ‘এডভানটেজ’ দিয়েছি, ফাউলের বাঁশি বাজাইনি। বারবারই আমার মনে হয়েছে এই বুঝি ডিফেন্ডাররা তাকে ফেলে দেয়। এমনকি আমি পেনাল্টির বাঁশি বাজানোর জন্য প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু আমি বিস্মিত হয়েছি তার গোল করার দক্ষতা দেখে। ঐতিহাসিক এই গোলটিতে ম্যারাডোনাকে সহযোগিতা করতে পারাটা আমার জন্য ক্যারিয়ারের অন্যতম গর্বিত একটি মুহূর্ত। প্রথম তিনটি প্রচেষ্টায় আমি যদি ফাউল ধরতাম তবে বিশ^বাসী অতি অসাধারন ঐ গোলটি দেখা থেকে বঞ্চিত হতো।’
তবে বিতর্কিত প্রথম গোলটি সত্বেও মেক্সিকো সিটির ঐ ম্যাচটি ক্যারিয়ারের সবচেয়ে স্মরণীয় ম্যাচ হিসেবে অভিহিত করেছেন বিন নাসির। প্রথম গোলটিতে সহকারী রেফারি বুলগেরিয়ার বোগডান ডোচেভের দিকেই অবশ্য আঙ্গুল তুলেছেন বিন নাসির। ঐ গোলটি সবচেয়ে ভাল দেখেছেন ডোচেভ। যে কারনে বিন নাসির প্রথমে কিছুটা সংশয়ে ছিলেন। ডোচেভ হ্যান্ডবলের সিগনাল না দেয়ায় গোলটির সিদ্ধান্ত বহাল রাখতে হয়।
২০১৭ সালে ৮০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন ডোচেভ। তিনি নিজেও স্বীকার করেছিলেন কোন সিদ্ধান্তের ব্যপারে সহকারী রেফারিকে ম্যাচ পরিচালনাকারী রেফারির সাথে আলোচনার কোন অনুমতি দেয়নি ফিফা।