দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের ২৪৮তম দিনে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ২৫ লাখ ছাড়িয়েছে। এছাড়া এই ভাইরাসে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমেছে, বেড়েছে সুস্থতার হার।
গত মার্চ থেকে এ পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তে ২৫ লাখ ১ হাজার ৮০০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৪ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ০৮ শতাংশ। গতকাল পর্যন্ত এই হার ছিল ১৭ দশমিক ১২ শতাংশ।
আজ স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘন্টায় ১৭ হাজার ১১২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১ হাজার ৮৪৫ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকাল ১৪ হাজার ৫২৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিলেন ১ হাজার ৭৩৩ জন। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার ১ দশমিক ১৫ শতাংশ কম।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৭৩৭ জন। গতকালের চেয়ে আজ ২২ জন বেশি সুস্থ হয়েছেন। দেশে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৮৬৮ জন। আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮০ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৮০ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ০৬ শতাংশ বেশি।
গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৩ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকালের চেয়ে আজ ৬ জন কম মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল মৃত্যুবরণ করেছেন ১৯ জন। এখন পর্যন্ত দেশে এ ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ৬ হাজার ১৪০ জন। করোনা শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। গত ৭ নভেম্বর থেকে মৃত্যুর একই হার বিদ্যমান রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৯৬৮ জনের। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৪ হাজার ৬৮৭ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ২ হাজার ২৮১টি নমুনা বেশি সংগ্রহ হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ১১৫টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৭ হাজার ১১২ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১৪ হাজার ৫২৪ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ২ হাজার ৫৮৮টি বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতি ১০ লাখে এ পর্যন্ত শনাক্ত ২৫০৮ দশমিক ৪১ জন। সুস্থ হয়েছেন প্রতি ১০ লাখে এ পর্যন্ত ২০২৪ দশমিক ৯৮ জন এবং প্রতি ১০ লাখে মারা গেছেন এ পর্যন্ত ৩৬ দশমিক ০৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণকারী ১৩ জনের মধ্যে পুরুষ ৯ জন, আর নারী ৪ জন। এ পর্যন্ত পুরুষ মৃত্যুবরণ করেছেন ৪ হাজার ৭২৮ জন, আর নারী মৃত্যুবরণ করেছেন ১ হাজার ৪১২ জন। শতকরা হিসেবে পুরুষ ৭৭ শতাংশ; নারী ২৩ শতাংশ। ২৪ ঘন্টায় ১৩ জনই হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৫১ থেকে ৬০ বছরের ৪ জন এবং ষাটোর্ধ্ব রয়েছেন ৯ জন। এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে রয়েছেন ২৯ জন; যা দশমিক ৪৭ শতাংশ। ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে রয়েছেন ৪৮ জন; যা দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে রয়েছেন ১৪১ জন; যা ২ দশমিক ৩০ শতাংশ। ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে রয়েছেন ৩৩১ জন; যা ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ; ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে রয়েছেন ৭৫৭ জন; যা ১২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে রয়েছেন ১ হাজার ৬১৯ জন; যা ২৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং ৬০ বছরের বেশি বয়সের রয়েছেন ৩ হাজার ২১৫ জন; যা ৫২ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
মৃত্যুবরণকারীদের বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২৪ ঘন্টায় ঢাকা বিভাগে ৮ জন, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগে ১ জন করে এবং রংপুরে ২ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের বিশ্লেষণে ঢাকা বিভাগে মারা গেছেন ৩ হাজার ২১৩ জন; যা ৫২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে ১ হাজার ২০৯ জন; যা ১৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগে ৩৭৫ জন; যা ৬ দশমিক ১১ শতাংশ। খুলনা বিভাগে ৪৮০ জন; যা ৭ দশমিক ৮২ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে ২০৫ জন; যা ৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ। সিলেট বিভাগে ২৫৭ জন; যা ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। রংপুর বিভাগে ২৭৩ জন; যা ৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১২৮ জন; যা ২ দশমিক ০৮ শতাংশ।
ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৩ হাজার ৫১৯টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৮৬২ জন ও শয্যা খালি আছে ১ হাজার ৬৫৭টি। আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩১৪টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি রোগী আছে ১৮৬ জন ও শয্যা খালি আছে ১২৮টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৭৭০টি, ভর্তিকৃত রোগী ১২৮ জন ও শয্যা খালি আছে ৬৪২টি। আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩৯টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ১১ জন ও শয্যা খালি আছে ২৮টি। সারাদেশে অন্যান্য হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৭ হাজার ১৬৪টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগী ৫৪৩ জন ও শয্যা খালি আছে ৬ হাজার ৬২১টি এবং আইসিইউ শয্যা রয়েছে ২১১টি ও আইসিইউ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৭১ জন ও শয্যা খালি আছে ১৪০টি । সারাদেশে হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১১ হাজার ৪৫৩টি, রোগী ভর্তি আছে ২ হাজার ৫৩৩ জন এবং শয্যা খালি আছে ৮ হাজার ৯২০টি। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৫৬৪টি, রোগী ভর্তি আছে ২৬৮ জন এবং খালি আছে ২৯৬টি। সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১৩ হাজার ৬১৩টি। সারাদেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ৫৯৯টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ৩৯৩টি।
০১৩১৩-৭৯১১৩০, ০১৩১৩-৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩৭৯১১৪০ এই নম্বরগুলো থেকে হাসপাতালের সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা খালি আছে। কত রোগী ভর্তি ও কতজন ছাড় পেয়েছেন এবং আইসিইউ শয্যা খালি আছে কি না এই ফোন নম্বরগুলোতে ফোন করে জানা যাবে। এছাড়া www.dghs.gov.bd এর CORONA কর্ণারে ‘করোনা বিষয়ক অভিযোগ প্রেরণ’ লিঙ্ক অথবা http:/app.dghs.gov.bd/covid19-complain লিঙ্ক ব্যবহার করে করোনা বিষয়ক যেকোন অভিযোগ পাঠানো যাবে।
গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হওয়া ১ হাজার ৭৩৭ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে রয়েছেন ১ হাজার ২৯৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৯০ জন, রংপুর বিভাগে ৭২ জন, খুলনা বিভাগে ৭৩ জন, বরিশাল বিভাগে ১৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৫ জন, সিলেট বিভাগে ৫৫ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৯ জন সুস্থ হয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘন্টায় কোয়ারেন্টিনে যুক্ত হয়েছেন ৮৮৫ জন, আর কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৮৫৫ জন। এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে যুক্ত হয়েছেন ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৬৮৫ জন, আর এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৫ লাখ ২৪ হাজার ১১১ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে আছেন ৩৯ হাজার ৫৭৪ জন।
গত ২৪ ঘন্টায় আইসোলেশনে যুক্ত হয়েছেন ১৭৭ জন, আর ছাড় পেয়েছেন ১৩১ জন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশনে যুক্ত হয়েছেন ৮৭ হাজার ৯৮৪ জন, আর ছাড় পেয়েছেন ৭৫ হাজার ৮০৭ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১২ হাজার ১৭৭ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৪ হাজার ৭৮২ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ১১ লাখ ৬৮ হাজার ৮১০ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ হটলাইন নম্বরে ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৫ হাজার ৮১৩টি, ৩৩৩ এই নম্বরে ৩ হাজার ৬৩০টি এবং আইইডিসিআর’র হটলাইন ১০৬৫৫, এই নম্বরে ফোন এসেছে গত ২৪ ঘন্টায় ২১৮টি। সব মিলিয়ে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৬৬১টি। এ পর্যন্ত হটলাইনে ফোনকল এসেছে ২ কোটি ২৪ লাখ ৯৯ হাজার ২৭১টি।
কোভিড বিষয়ে হটলাইনে ২৪ ঘন্টায় ফোন করে স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছেন ২ হাজার ৩৪৯ জন, এবং এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৩২৬ জন।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১১ নভেম্বর পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯৭ লাখ ৯৭ হাজার ৯৬৬ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১ লাখ ৫১ হাজার ১৯১ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১১ নভেম্বর পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫ কোটি ১২ লাখ ৫১ হাজার ৭১৫ জন এবং ১২ লাখ ৭০ হাজার ৯৩০ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।