স্বাস্হ্য ডেস্ক:- আপনি হয়তো কাজ করতে করতে একটু কাঁধটা টান টান করতে গেলেন। আর তখনই দেখলেন কাঁধে শুরু হল অসহ্য ব্যথা। আর আপনি যখনই কোনও ভারী জিনিস তুলতে যান, তখনই এই ব্যথা বেড়ে যায়। নিশ্চয়ই আপনার কথাগুলো খুব চেনা চেনা লাগছে। এই কাঁধের ব্যথার থেকের অসহ্য কিন্তু খুব একটা কিছু হয় না। আর এই ব্যথা হলে কোনও কাজ করতেও কিন্তু বেশ সমস্যা হয়, মন দেওয়া যায় না। অনেক কারণে এই সমস্যা হয়। কখনও হয়তো অনেক ক্ষণ ধরে বসে থাকলে বা ভুল ভাবে শুলে এই ব্যথা হয়। আবার এমনও অনেক কারণ থাকে যা হয়তো পরীক্ষা করে দেখার দরকার আছে। যাই হোক, আজ আপনাদের জানাবো কী ভাবে আপনি ঘরেই এই সমস্যার সমাধান করতে পারেন।
কাঁধের ব্লেডের মাঝে ঘটে যাওয়া ব্যথা খুবই কমন। একে ডাক্তারি ভাষায় বলে ইন্টারস্কেপুলার পেইন, আর এই ব্যথা থেকে পরে লিভার বা হার্টের ব্যথাও হতে পারে। এই ব্যথা যখন হয় তখন মনে হয় যেন ভিতরে কেউ বন্দুকের গুলি ছুঁড়ছে। চিনচিন করে একটানা ব্যথাও হয়। আর এই ব্যথা হয় পিঠের দিকে উপরে।
সোলডার ব্লেড হল তিনকোণা আকারের হাড়, যা পিঠের দিকে থাকে আর ডাক্তারি ভাষায় একে বলে স্কেপুলা। এই সোলডার ব্লেড কলার বোন আর আপার আর্ম বোনের সংযুক্তি ঘটায়। আবার এর সঙ্গে যুক্ত পেশি এই হাড় নাড়াতে সাহায্য করে। আপনার কাঁধ আপনি ইচ্ছে মতো উপর-নীচ, ডান দিক বা বাঁ দিক নাড়াতে পারেন এই ব্লেডের জন্যই। আর এই নাড়াবার সময়েই ব্লেডে আঘাত লাগতে পারে। দেখা যাক কী কী কারণে ব্লেড ব্যথা হতে পারে।
বেশ কয়েকটি কারণে এই ব্যথা হতে পারে। সেগুলি নীচে বলা হল,
ক. বসা বা শোয়ার ধরন ভুল হলে।
খ. ভারী কিছু তুলতে গেলে।
গ. অনেক ক্ষণ ধরে কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করলে।
ঘ. ব্যায়াম করতে গিয়ে কোনও ভাবে ব্যথা লাগতে পারে।
এগুলো তো সরাসরি কাঁধের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু শরীরের অন্য সমস্যা থেকেও এই ব্যথা হতে পারে। যেমন –
ক. ফুসফুসে কোনও সমস্যা হলে, কোনও কিছু জমাট বাঁধলে বা ক্যানসার দেখা দিলে সেখান থেকে কাঁধে ব্যথা হতে পারে।
খ. হার্টের সমস্যা থাকলে বা হার্ট অ্যাটাক হলে সেখান থেকেও এই ব্যথা হয়। এটি মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি হয়।
গ. গলব্লাডারের সমস্যা থাকলে।
ঘ. লিভারের কোনও সমস্যা হলে তার থেকেও এই ব্যথা হয়।
ঙ. হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা থাকলে বা অস্টিয়োপরোসিস, আর্থারাইটিস, স্কোলিওসিস থাকলে।
চ. কোনও গুরুতর অপারেশন হলে তার থেকেও এই কাঁধে ব্যথা হয়।
আপনার ডাক্তার নিশ্চয়ই আপনার সঙ্গে কথা বলে ব্যথার কারণ বোঝার চেষ্টা করবেন। যদি উনি বোঝেন ব্যথার কারণ অন্যত্র তাহলে উনি এই পরীক্ষাগুলো করতে দিতে পারেন,
ক. এনডোসকপি
খ. ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম
গ. এমআরআই বা সিটি স্ক্যান
ঘ. নানা রকমের ব্লাড টেস্ট
এর পর উনি আপনাকে ওষুধ দেবেন। সেই ওষুধের পাশাপাশি আপনি বাড়িতে কিছু নিয়ম মেনেও কিন্তু এই ব্যথা কমাতে পারেন, যেমন
কোল্ড কমপ্রেস ব্যথা কমাতে পারে কারণ এটির মধ্যে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান আছে। আর গরম সেক রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, ফলে ব্যথা কমে।
উপকরণঃ সেক দেওয়ার জন্য কাপড়।
পদ্ধতিঃ
ক. একটি কাপড় নিয়ে সেটি ঠাণ্ডা বরফে নিয়ে বা গরম করে সেক দিতে হবে।
খ. ৫ মিনিট করে রেখে দিতে হবে।
গ. তারপর আবার একই ভাবে সেক দিতে হবে।
কতবার করা উচিৎ
এটি দিনে ৩ বার মতো করলে ভালো হয়।
এপসোম সল্টে আছে ম্যাগনেসিয়াম। আর ম্যাগনেসিয়ামের মধ্যে আছে ব্যথা কমানোর জন্য অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান। তাই এটি ব্যথা কমায় সহজেই।
উপকরণঃ ১ কাপ এপসোম সল্ট, জল
পদ্ধতিঃ
ক. জলের পাত্রে জল নিয়ে তার মধ্যে এই সল্ট দিয়ে দিন।
খ. সল্ট জলে মিশে যেতে দিন। তারপর সেই জলে ১৫ মিনিট মতো থাকুন।
কতবার করা উচিৎ
রোজ একবার করে করতে পারেন বা এক দিন ছাড়া ছাড়া করতে পারেন।
আপনি নিশ্চয়ই ‘ওয়ার্ম আপ’ কথাটার সঙ্গে পরিচিত। কোনও ব্যায়াম করার আগে এটি করা হয়। এক্ষেত্রে আপনি যদি স্ট্রেচিং বেছে নেন তাহলে তা ব্যায়ামের পরের ব্যথা থেকে আপনাকে বাঁচাবে। এটি না করলে কিন্তু অনেক সময়ে ব্যথা হতে পারে। আপনার ট্রেনারকে বলুন যেন উনি আপনাকে এই বিষয়ে সাহায্য করেন।
ম্যাসাজ থেরাপিও কিন্তু খুব সহজেই এই কাঁধের ব্যথা কম করতে পারে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল এটি খুব তাড়াতাড়ি আরাম দেয়। কিন্তু এটি অবশ্যই দেখে নেবেন যেন এই ম্যাসাজ কোনও প্রফেশনাল মানুষই করে থাকেন, নইলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
এই টেপ আপনার ঘাড়কে একটি সাপোর্ট দেবে। ফলে আপনি যখন ঘাড় নাড়াবেন তখন আর ঘাড়ে ব্যথা করবে না। একটি আবেষ্টনীর মধ্যে আপনার ঘাড় থাকবে।
উপকরণঃ একটি কিনসিওলজি টেপ
পদ্ধতিঃ এই টেপ নিয়ে আপনার ঘাড়ের চারদিকে লাগান, যেন ঘাড় একটা সাপোর্ট পায়। আপনি চাইলে কোনও প্রফেশনাল ব্যক্তির সাহায্য নিতে পারেন।
কতবার ব্যবহার করবেন
আপনি এটি সপ্তাহে ৫দিন ব্যবহার করতে পারেন।
আগেই বলেছি, ঘুমের দোষে অর্থাৎ ঠিক করে, ঠিক পজিশনে না ঘুমোলে ব্যথা হতে পারে। তাই ঠিক করে ঘুমোন। একটি নরম বালিশ নিন। আর খাটের ম্যাট্রেস যেন খুব নরম বা খুব শক্ত না হয়। এতে কিন্তু ব্যথা বাড়ে। আর ঘুমের পজিশন পালটান।
যখনই আপনি গাড়ি করে যাবেন তখনই সিট বেল্ট ব্যবহার করুন। এর ফলে আপনার কাঁধ এক জায়গায় একটি সাপোর্টের মধ্যে থাকবে। নইলে গাড়ির ঝাকুনিতে আপনার কাঁধে ব্যথা লেগে যেতে পারে। আর এটি আপনাকে অনেক বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করবে।
একটা কথা বলা হয়, শরীরকে খাটালে তা আরও ভালো থাকে। তাই রোজ ব্যায়াম করুন। দেখবেন এতে কাঁধের পেশির উপর চাপ পড়বে। এতে সঙ্কোচন আর প্রসারণ ক্ষমতা বাড়বে। স্থিতিস্থাপকতা ক্ষমতা বাড়বে কাঁধের। তাই নিয়ম করে হাল্কা করে ব্যায়াম করুন, যখনই সময় পাবেন।
আপনার কাঁধে ব্যথা হলে এটি একদমই করা যাবে না। এর ফলে ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। ব্লেডের উপর চাপ পড়তে পারে। তাই ভারী জিনিস একদমই তুলবেন না।
কাঁধের ভালো যত্ন নিতে হলে তাকে মজবুত করা দরকার। আর তার জন্য আপনাকে খুব ভালো করে খেতে হবে। আপনার ডায়েটে রাখতে হবে সুষম খাদ্য। তার মধ্যে অবশ্যই রাখতে হবে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার। কারণ ক্যালসিয়াম হাড়ের জোর বাড়ায়। তাই হেলদি ডায়েট মেনে চলুন।
একটি পাত্রে হলুদের পেস্ট নিন হাফ বাটি, তাতে একটা আদার রস মেশান। পরিষ্কার একটি কাপড় গরম জলে ভিজিয়ে জল নিংড়ে নিন। ব্যাথা হওয়া জায়গায় কাপড় রেখে তার ওপর পেস্টটা দিয়ে রাখুন। প্রথমে হালকা ম্যাসাজ করুন ১০ মিনিট। তারপর আরও ৩০ মিনিট মত রেখে দিন। কিছুক্ষণের মধ্যে দেখবেন ব্যাথা কমতে শুরু করে দিয়েছে।
তাহলে এখন আর নিশ্চয়ই হাড়ের সমস্যায় আপনাকে জেরবার হতে হবে না। এখনই এই নিয়মগুলো মানতে শুরু করুন আর দেখুন কাঁধের ব্যথা কোথায় চলে যায়!