মোবাইল ফোন নোটবুক ও রিমাইন্ডার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়
তথ্য ও প্রযুক্তি ডেস্ক:-
আমরা অনেকেই মোবাইলের ব্যবহার বলতে ফেসবুক, গেম খেলা আর মোবাইলে কথা বলাকেই বুঝি। কিন্তু একটি ভালো মানের মোবাইল আপনার ব্যবসা বা অফিসের অনেক কাজকে সহজ করে দিতে পারে। এ জন্য আপনার দরকার হবে কিছু প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার। মোবাইল ফোন দিয়ে আপনি যে কাজগুলো করতে পারবেন তা নিয়েই আমাদের এবারের আয়োজন। লিখেছেন এম হোসাইন।
যেমন মোবাইল দরকার
অফিস কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাজগুলো কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ছাড়া করতে হলে আপনার প্রয়োজন হবে একটি ভালো মানের মোবাইল ফোন। অবশ্যই তা হতে হবে স্মার্ট ফোন। তবে আইফোন, উইন্ডোজ ও অ্যানড্রয়েড—সব ফোনেই সুবিধাগুলো পাওয়া যায়।
উইন্ডোজ ফোনে স্থায়ীভাবে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, পাওয়ারপয়েন্ট ও এক্সেল দেওয়া হয়। সঙ্গে স্ক্যানিংয়ের জন্য অফিস লেন্স ও ভিডিও কলের জন্য স্কাইপও দেওয়া থাকে। ড্রপবক্স ও ওয়ানড্রাইভের মতো ফাইল শেয়ার করার সুবিধাও থাকে। চাইলে আপনি আরও ফিচার যুক্ত করে নিতে পারেন। আইফোন বা অ্যান্ড্রয়েডের জন্য আলাদা আলাদ ভার্সনের সফটওয়্যার পাওয়া যায়। সবচেয়ে সহজে পাওয়া যায় অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন সফটওয়্যার।
স্মার্ট ফোন যেটাই হোক, সেক্ষেত্রে ব্যাটারি-লাইফ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। প্রথমেই দেখতে হবে ফোনটির ব্যাটারি যেন এমএএইচ বেশি থাকে। স্টোরেজ সাইজ, ক্যামেরা রেজ্যুলেশন, প্রসেসর যেন চাহিদা সম্পন্ন হয়। ইউএসবি ওটিজি সুবিধা থাকলে সরাসরি পেনড্রাইভ, কি-বোর্ড ও মাউস ব্যবহার করতে পারবেন।
নিরাপত্তা বিষয়ক কাজ
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আপনি আপনার অফিস বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা জনিত কাজগুলো তদারকি করতে পারবেন। আপনার প্রতিষ্ঠানে যদি সিসি ক্যামারা লাগানো থাকে আর তাতে যদি ইন্টারনেট কানেকশন থাকে তাহলে আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় বিষয় আপনার আয়ত্বে রাখতে পারবেন। এজন্য আপনার মোবাইল ফোনের ফিচার হতে হবে উন্নত।
ডকুমেন্ট তৈরি
ওয়ার্ডে কিছু লেখা, ষ্প্রেডশিটে হিসাব রাখা, প্রেজেন্টেশন স্লাইড তৈরি, ই-মেইল আদান-প্রদান কিংবা ফাইল সংরক্ষণে পিডিএফে রূপান্তর—কম্পিউটারে এসব কাজে সাধারণত ‘মাইক্রোসফট অফিস’ ব্যবহার করা হয়। সম্প্রতি মাইক্রোসফট স্মার্টফোনের জন্যও এ ধরনের অ্যাপ্লিকেশন বিনা মূল্যে ব্যবহারের সুবিধা দিচ্ছে। তাই ফোনেও ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ারপয়েন্ট বা আউটলুক ব্যবহার করা যাবে। স্মার্টফোনে অফিসের কাজ সারার জন্য গুগলেরও রয়েছে অ্যাপ্লিকেশন ‘জি-স্যুট’। পিডিএফ করার ক্ষেত্রে ফোনে কম্পিউটারের চেয়েও সুবিধা বেশি। ফোনের ক্যামেরা দিয়ে ডকুমেন্ট স্ক্যান করে পিডিএফ করা যায়। এ ক্ষেত্রে স্ক্যান করার জন্য ক্যামস্ক্যানার এবং পিডিএফ ফাইল পড়ার জন্য এডোবি রিডার অ্যাপ ডাউনলোড করে নিতে হবে।
ই-মেইল আদান-প্রদান
অফিশিয়াল কাজে ই-মেইল আদান-প্রদান খুবই জরুরি। এ কাজ আরো ভালোভাবে করা যায় আউটলুক ও গুগল ইনবক্স ব্যবহার করে। অনেক প্রতিষ্ঠানেই আজকাল নিজস্ব ই-মেইল সার্ভারের মাধ্যমে অফিশিয়াল মেইল অ্যাড্রেস ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে। এ কাজের জন্য আউটলুক আদর্শ। তবে স্মার্টফোনে অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের সুযোগ থাকলেও অনেক সময় টাচ স্ক্রিনে টাইপ করতে সমস্যা হয়। এ ক্ষেত্রে ব্লুটুথ কি-বোর্ড ব্যবহারে সুবিধা পাওয়া যাবে।
বাইরে থেকে অফিসে কাজ
অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের জন্য স্বতন্ত্র কম্পিউটার না দিয়ে একটি মূল সার্ভারে লগইন করে কাজ করার ব্যবস্থা রাখে। এতে খরচ ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা কমে।
এ ব্যবস্থায় অফিসের বাইরে থেকেও স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের মাধ্যমে কাজ করা যায়। এ জন্য সাধারণত টিম ভিউয়ার, মাইক্রোসফট রিমোট ডেস্কটপ ও ষ্প্ল্যাশটপ অ্যাপ ব্যবহার করা হয়।
ফাইল শেয়ার
অফিসের কাজ বাইরে থেকে করা গেলেও সেগুলো দ্রুত পৌঁছাতে না পারলে সমস্যা। এ ক্ষেত্রে ড্রপবক্স ও গুগল ড্রাইভ কাজের অ্যাপ্লিকেশন।
ড্রপবক্স বা গুগল ড্রাইভের মাধ্যমে অনলাইনে ফোল্ডার তৈরি করে সেখানে ফাইল রেখে লিংকটি ই-মেইল করে কাঙ্কি্ষত ব্যক্তিকে পাঠিয়ে দিলেই হলো। এ ক্ষেত্রে ডেস্কস্টপ ও স্মার্টফোনের নির্দিষ্ট কোনো ফোল্ডার নির্বাচন করে রাখলে সুবিধা পাওয়া যাবে বেশি। এতে ফাইল সহজে হারাবে না।
ভিডিও কনফারেন্স
ভিডিও কলের মাধ্যমে এখন জরুরি মিটিংও সেরে নেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কাজের অ্যাপ্লিকেশন হচ্ছে স্কাইপ। অ্যাপটির মাধ্যমে টিম মিটিং ও সরাসরি আউটলুকে ইভেন্ট তৈরির সুযোগ আছে।
রিমাইন্ডার হিসেবে ব্যবহার
আপনার মোবাইল ফোনটিকে নোটবুক ও রিমাইন্ডার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। প্রত্যেকটি স্মার্ট ফোনে রিমাইন্ডার ফিচারটি যুক্ত থাকে। এছাড়াও গুগল ক্যালেন্ডার, মাইক্রোসফট মেইল অ্যান্ড ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে একটি সম্মিলিত ক্যালেন্ডার ও শিডিউল তৈরি করা সম্ভব। এর মাধ্যমে কার, কোথায়, কখন কোন কাজ রয়েছে, তা প্রতিষ্ঠানের সবাই জানতে পারে। নোটবুক হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলে গুগল প্লেস্টোর থেকে বিভিন্ন অ্যাপস ডাউনলোড করে নিতে পারেন। এই ধরনের অ্যাপের মধ্যে কালার নোট অনেক জনপ্রিয়।