বিগত বছরগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশু স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করতে সক্ষম হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর হোটেল র্যাডিসনে জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট (নিপোর্ট) পরিচালিত ‘বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে-২০২২ (বিডিএইচএস) থেকে এই তথ্য জানানো হয়। জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (নিপোর্ট) এ সভার আয়োজন করে।
প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেছে, বিশেষ করে ২০১৭ সালের তুলনায় ২০২২ সালে শিশু মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য হ্রাস পেয়েছে। ধারাবাহিক তিন বছরের গড় অনুযায়ী, ৫ বছরের নিচে জীবিত শিশু জন্মের পর মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৪৩ থেকে ৩১-এ নেমে এসেছে। এক বছরের কম বয়সের শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৫ জন এবং এক মাসের কম বয়সের শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২০ জন। পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের ক্ষেত্রে বৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ হচ্ছে অর্থাৎ সঠিক বৃদ্ধি ঘটছে না এমন শিশুর হার ৩১ থেকে ২৪ শতাংশে নেমে এলেও, কম ওজন নিয়ে জন্ম নেয়া শিশুদের সংখ্যায় কোন পরিবর্তন হয়নি।
এতে আরও বলা হয়, একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ সেবাদানকারীর সহায়তায় প্রসবের হার বিগত বছরগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালের হিসেব অনুযায়ী ৭০ শতাংশ প্রসবই একজন দক্ষ সেবাদানকারীর সহায়তা ঘটছে। এছাড়া ৬৫ শতাংশ প্রসব কোন না কোন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে হচ্ছে, যা ২০১৭ সালে ছিল ৫১ শতাংশ।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতাল কেন্দ্রিক প্রসব বৃদ্ধির ফলে সি-সেকশন বা সিজারিয়ান করা মায়েদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০২২ সালে সিজারের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়ে ৩৪ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশ দাঁড়িয়েছে। বিগত যে কোন সময়ের তুলনায় দরিদ্র মহিলাদের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০১১ সালের হিসেব অনুযায়ী মহিলাদের ক্ষেত্রে, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর তুলনায় ধনীদের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে সেবা গ্রহণের মাত্রা ছয়গুণ বেশি ছিল। ২০২২ সালে দরিদ্রদের তুলনায় ধনীদের সেবা গ্রহণ দ্বিগুণ হ্রাস পেয়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ৮৮ শতাংশ মহিলা অন্তত একবার একজন প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্য কর্মীর কাছ থেকে গর্ভকালীণ বা এএনসি সেবা গ্রহণ করেছেন যা ২০১৭ সালে ছিল ৮২ শতাংশ। কিন্তু কোভিড চলাকালীন সময়ে চারবারের অধিক গর্ভকালীণ সেবা বা এএনসি গ্রহণকারী মহিলার সংখ্যা ৪৭ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ৪১ শতাংশে নেমে এসেছিল।
জন্ম বিরতিকরণ সামগ্রী ব্যবহারের হার বিগত সময়ের চেয়ে ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। জন্ম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের হার ৩ শতাংশ বেড়ে ৫৫ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালের হিসেব অনুযায়ী মহিলা প্রতি সন্তানের সংখ্যা ২.৩ জন। কিশোরী বয়সেই সন্তান জন্ম দেয়ার মাত্রা বিগত বছরগুলোর তুলনায় কমেছে। ২০১৭ সালে এ মাত্রা ছিল ২৮ শতাংশ। ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৩ শতাংশে। অল্প বয়সে বিবাহের মাত্রা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। ২০ থেকে ২৪ বছরের মহিলাদের মধ্যে ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয়ে যাবার মাত্রা ২০১১ সালে ছিল ৬৫ শতাংশ, ২০১৭ তে তা কমে দাঁড়ায় ৫৯ শতাংশে এবং ২০২২ সালে তা ৫০ শতাংশে নেমে আসে।
বিডিএইচএস ২০২২ অনুযায়ী মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। ৯৯ শতাংশ বাড়িতে বিদ্যুৎ আছে। ৯৮ শতাংশ ঘরে কারো না কারো মোবাইল ফোন আছে। ৬০ শতাংশ বাড়িতে উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা আছে যা ২০১৭ সালে ছিল ৪৩ শতাংশ।
জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (নিপোর্ট) এর মহাপরিচালক মো: শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব আজিজুর রহমান, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু, ইউএসএইড/বাংলাদেশের পরিচালক (পপুলেশন, হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন) ক্যারি রাসমুসেন বক্তব্য রাখেন।