অধিনায়ক লিওনেল মেসির হ্যাটট্রিকে কাল প্রীতি ম্যাচে পুঁচকে কুরাকাওকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। এই ম্যাচে মেসি শততম আন্তর্জাতিক গোলের মাইলফলকও স্পর্শ করেছেন।
সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী মেসি আর্জেন্টিনার উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ সান্তিয়াগো ডেল এস্তেরোতে ক্যারিবিয়ান দ্বীপ কুরাকাওয়ের বিপক্ষে ২০ মিনিটে গোলের খাতা খুলেন। এই গোলের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে শততম গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন সাবেক এই বার্সেলোনা তারকা। ২০০৬ সালে মার্চে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে ৩-২ গোলের পরাজয়ের ম্যাচটিতে প্রথম আন্তর্জাতিক গোল করা মেসি ১৭ বছর পর শততম গোলের দেখা পেলেন। ৩৫ বছর বয়সী মেসি এরপর ৩৩ ও ৩৭ মিনিটে পরপর দুই গোল করে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন। জাতীয় দলের হয়ে এটি মেসির সপ্তম হ্যাটট্রিক।
কালকের ম্যাচের আরেক গোলদাতা নিকোলাস গঞ্জালেজ বলেছেন, ‘মেসিকে ভাষায় প্রকাশ করা যায়না। সে-ই বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়। প্রতিদিন, প্রতিটি ম্যাচেই সে এটা প্রমান করছে। যতবারই সে বল ধরে ততবাই সবাইকে আনন্দে ভাসান।’
আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বোচ্চ গোলের গর্বিত মালিকও মেসি। এই তালিকায় ৫৬ ও ৪১ গোল করে পরের দুই অবস্থানে থাকা গাব্রিয়েল বাতিস্তুতা ও সার্জিও এগুয়েরো উভয়ই জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছেন।
ডিসেম্বরে কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সকে নাটকীয় ম্যাচে হারিয়ে শিরোপা জেতার পর এটা আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় ম্যাচ। বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটি নির্ধারিত সময় ও অতিরিক্ত সময় মিলিয়ে ৩-৩ গোলে ড্র থাকার পর আর্জেন্টিনা পেনাল্টিতে ৪-২ গোলে জয়ী হয়ে শিরোপা ছিনিয়ে নিয়েছিল। টুর্ণামেন্ট সেরা মেসি ফাইনালে দুই গোল করেছিলেন। তখন থেকেই মেসির শততম গোলের রেকর্ড স্পর্শ করার দিনক্ষনের অপেক্ষা ছিল।
হ্যাটট্রিক করে মেসি তার এই গোলসংখ্যা ১০২’এ নিয়ে গেছেন। এই তালিকায় চির প্রতিদ্বন্দ্বী পর্তুগালের ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো (১২২ গোল) ও ইরানের আলি দাইয়ের (১০৯ গোল) পরে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন মেসি।
এর আগে বিশ্বকাপের পর প্রথম প্রীতি ম্যাচে বৃহস্পতিবার পানামার মোকাবেলা করেছিল আর্জেন্টিনা। ২-০ গোলের জয়ের ম্যাচটিতে শেষ মিনিটে দ্বিতীয় গোলটি করেছিলেন মেসি। ৮৯ মিনিটে মেসি ব্যবধান দ্বিগুন করার আগে ৭৮ মিনিট পর্যন্ত মধ্য আমেরিকান দল পানামা আর্জেন্টিনাকে রুখে দিয়েছিল। ২১ বছর বয়সী এমএলএস সেনসেশন থিয়াগো আলমাডা ৭৮ মিনিটে ডেডলক ভাঙ্গেন। এরপর মেসি শেষ মুহূর্তে নিখুঁত ফ্রি-কিক থেকে গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করেন। এই গোলের মাধ্যমে মেসি পেশাদার ফুটবলে ৮০০তম গোলের রেকর্ড স্পর্শ করেন।
একইসাথে ঐ গোলের মাধ্যমে ৯৯ গোল করা মেসির জন্য কালকের ম্যাচটি ছিল শততম গোলের রেকর্ড স্পর্শ করার দারুন এক সুযোগ। বিশ্ব ফুটবল র্যাঙ্কিংয়ে ৮৬তম অবস্থানে থাকা কুরাকাও কাল ২০ মিনিট পর্যন্ত আলবিসেলেস্তেদের ধরে রেখেছিল। গিওভানি লো সেলসোর পাসে মেসি শেষ পর্যন্ত দূর্বল ডান পায়ের লো শটে স্বাগতিকদের এগিয়ে দেন। তিন মিনিট পর গঞ্জালেজ চার গজ দুর থেকে কুরাকাও গোলরক্ষক এলয় রুমকে পরাস্ত করলে ব্যবধান দ্বিগুন হয়। ৩৩ মিনিটে মেসির দ্বিতীয় গোলের যোগানদাতা ছিলেন গঞ্জালেজ। এবার মেসি তার বাম পায়ের সহায়তায় গোল পেয়েছেন। দুই মিনিট পর এনজো ফার্নান্দেজকে দিয়ে গোল করিয়েছেন মেসি। এরপর লো সেলসোর আরো একটি পাস থেকে ৩৭ মিনিটে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন পিএসজির এই ফরোয়ার্ড।
৫-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যাওয়া আর্জেন্টিনা দ্বিতীয়ার্ধেও সেই ধারা বজার রাখার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামে। তারই ধারাবাহিকতায় এ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া ও গঞ্জালো মনটিয়েলের আরো দুই গোলে বড় জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।