রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় গ্রেফতারকৃত ৫ জনের মধ্যে ৩ জন দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। এছাড়া, অন্য দু’জনের দু’দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
যশোরের গ্রামের বাড়ি থেকে ওই নারী (২৯) সন্তান-স্বামীকে দেখতে ঢাকায় এসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন বলে আদালত সূত্রে জানা যায়।
এ ঘটনায় শনিবার রাতে রাজধানীর গাবতলী, ডেমরা, বসিলা ও ভোলার তজুমুদ্দিন এলাকা থেকে আল-আমিন হোসেন (২৬), সবুজ (২৬), শফিকুল ইসলাম (২৬), বিল্লাল হোসেন (২৫) ও রাসেল ওরফে মোল্লা রাসেলকে (২৪) গ্রেফতার করা হয় ।
রোববার তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এসময় আল-আমিন হোসেন (২৬), সবুজ (২৬) ও শফিকুল ইসলাম (২৬) দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট শেখ সাদী আসামী শফিকুলের, ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট নুরুল হুদা চৌধুরি আসামি সবুজের এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট তরিকুল ইসলাম আসামি আল আমিনের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আসামি বিল্লাল হোসেন (২৫) ও রাসেল ওরফে মোল্লা রাসেলকে (২৪) সাত দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট শান্তা আক্তার তাদের দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে আজ রোববার সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক তার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ঘটনার শিকার নারী একসময় স্বামী-সন্তানসহ মোহাম্মদপুরের বছিলায় থাকতেন। কয়েক মাস আগে অসুস্থতার কারণে তিনি সন্তানদের স্বামীর কাছে রেখে গ্রামের বাড়িতে যান। এরমধ্যে কিছু না জানিয়েই স্বামী তাকে তালাক দেন। গত ২৫ জানুয়ারি তিনি গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় আসেন। এ দিন রাতে তিনি ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণের’ শিকার হন।
এ ঘটনায় তিনি গত ২৭ জানুয়ারি মোহাম্মদপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাত পাঁচ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
আজিমুল হক বলেন, ঘটনার দিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ভুক্তভোগী নারী তার সাবেক স্বামীর বাসা যান। গিয়ে দেখেন, তিনি বাসা ছেড়ে দিয়েছেন। রাত প্রায় ৯টা পর্যন্ত তিনি আশপাশের এলাকায় খোঁজাখুঁজি করেন। না পেয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। রাত সাড়ে নয়টার দিকে তিনি বছিলা ৪০ ফিট তিন রাস্তার মোড় থেকে গাবতলী যাওয়ার জন্য একটি রিকসা ভাড়া নেন।
রিকসাওয়ালা তাকে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে না নিয়ে বিভিন্ন রাস্তায় ঘোরাতে থাকেন। এ সময় চালক বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন। নারীকে তার সাবেক স্বামীর বাসা খুজে দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। প্রায় তিন ঘণ্টা ঘুরিয়ে শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বছিলা ফিউচার টাউনের শ্রমিকদের জন্য তৈরি একটি অস্থায়ী টিনের ঘরে নিয়ে যায়। ওই নারীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চালকসহ পাঁচজন মিলে তাকে ধর্ষণ করেন।
একপর্যায়ে নারীর চিৎকারে নিরাপত্তাকর্মীসহ আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে তারা পালিয়ে যান। পরে মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ ভুক্তভোগী নারীকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠায়।
পুলিশ জানিয়েছে, তারা ঘটনাস্থলসহ আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে প্রযুক্তির সহায়তায় এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে ভুক্তভোগী নারীর মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়।