চিকিৎসার ক্ষেত্রে বহি:বিশে^র ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দেশে রোগীদের চিকিৎসামুখী করতে বর্তমান সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। উন্নততর চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করাসহ সুলভ মূল্যে সকল জনগোষ্ঠীকে এই চিকিৎসা সেবার আওতায় আনা হচ্ছে।
আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ‘মুজিব শতবর্ষ লিভার ট্রান্সপ্লান্ট প্রোগ্রাম’ নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ এতথ্য জানান।
উপাচার্য বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যে ভিশন ২০৪১ অর্থাৎ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনায় গড় আয়ু বৃদ্ধি, নন-কমিউনিকেবল এবং কমিউনিকেবল ডিজিজ হ্রাসের পরিকল্পনা রয়েছে। বিশ^বিদ্যালয়ে লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশনের মতো একটি সুপার স্পেশালাইজড কেয়ার চালু করার ফলে লিভার রোগ, লিভারের শল্য চিকিৎসা, লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন বিষয়ে শিক্ষা/প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একদিকে যেমন মানবসম্পদে উন্নয়ন ঘটবে তেমনি বিশেষজ্ঞগণের মাধ্যমে উন্নততর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত হবে। সুস্থ সবল জাতি গঠনের সহায়ক হবে।
তিনি বলেন, হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মোহছেন চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে ‘মুজিব শতবর্ষ লিভার ট্রান্সপ্লান্ট প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। লিভার ট্রান্সপ্লান্টের মতো একটি জটিল চিকিৎসা প্রক্রিয়া সুচারুরূপে সম্পন্ন করার জন্য এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির লিভার ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগের সহযোগিতা নেওয়া হয়।
তিনি আরো জানান, করোনাভাইরাস পরবর্তী চিকিৎসা ব্যবস্থায়ও দীর্ঘমেয়াদী ও জটিল রোগের বিষয়ে আগের চেয়ে বেশি নজরদারি করা হচ্ছে। পাশাপাশি রোগীর চিকিৎসা নয় বরং রোগ প্রতিরোধের দিকে বেশি মনোযোগ দেয়া হচ্ছে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কাজকে আরও বেগবান করার জন্য এ খাতে বরাদ্দ পাঁচগুণ বৃদ্ধি করেছে। গবেষণা খাতে বরাদ্দ ৪ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ২২ কোটি ২০ লাখ টাকায় উন্নীত করেছে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোমধ্যে একসঙ্গে ২৪ চিকিৎসক গবেষককে পিএইচডি কোর্সে ইনরোলমেন্ট করেছে।
উপাচার্য জানান, আমাদের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ নানাধরণের হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জনসংখ্যার মাত্র ৫-১০ শতাংশ এ ভাইরাসের জন্য টিকা নিয়েছে। যা অত্যন্ত অপ্রতুল। ফলশ্রুতিতে হেপাটাইটিস ভাইরাস সংক্রান্ত রোগব্যাধী বেড়েই চলেছে। প্রতিবছর বাংলাদেশে আনুমানিক ৪-৫ হাজার রোগীর লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন চিকিৎসা প্রয়োজন। দেশে পূর্বে লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি বছর এসব রোগীদের একটি বিশাল অংশ দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য চলে যাচ্ছে। পাশর্^বর্তী দেশসহ বহি:বিশে^ লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন একটি ব্যয়বহুল চিকিৎসা। ফলে দেশের স্বল্প আয়ের ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এ চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এরূপ অবস্থা বিবেচনায় বিশ^বিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয়ে ‘মুজিব শতবর্ষ লিভার ট্রান্সপ্লান্ট প্রোগ্রাম’ চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য ( প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন ) অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম, অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, রেজিস্ট্রার ডা. স্বপন কুমার তপাদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।