জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) অথবা অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) স্বাক্ষরের লক্ষ্যে যৌথ সমীক্ষা কার্যক্রম আজ থেকে শুরু হয়েছে।
সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যৌথভাবে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি। এসময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষসহ দুই দেশের ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরে এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, দুই দেশের মধ্যে এফটিএ বা ইপিএ স্বাক্ষরের বিষয়ে সমীক্ষার কার্যক্রম আজ শুরু হলো। এর উদ্দেশ্য হলো-২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হওয়ার আগেই আমরা যেন একটি চুক্তি করতে পারি, যাতে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোন নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে।
তিনি বলেন, জাপান বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক ও উন্নয়ন অংশীদার। বিগত ৫০ বছর তারা বাংলাদেশকে নানাভাবে সহযোগিতা দিয়ে আসছে। জাপান এখন বাংলাদেশের বড় রপ্তানি বাজারও।
তিনি আরও বলেন, দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি সম্প্রতি নারায়নগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জাপানি বিনিয়োগ এসেছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর জাপানের সাথে এফটিএ অথবা ইপিএ’র মতো বাণিজ্য চুক্তির প্রয়োজন হবে। সেজন্য বাংলাদেশ জাপানের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
টিপু মুনশি বলেন, গত অর্থ বছরে বাংলাদেশ জাপানে ১.৩৫৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে, একই সময়ে ২.৪১০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। জাপানের বাজারে এখন ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের পোশাক রপ্তানি হচ্ছে। আগামীতে মুক্ত বাণিজ্য সুবিধা পাওয়া গেলে এই রপ্তানি আরও বাড়বে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন,বাংলাদেশের সাথে জাপানের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক দীর্ঘ ৫০ বছরের। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের অনেক সুযোগ রয়েছে, সেই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। দুই দেশের মধ্যে এফটিএ বা ইপিএ স্বাক্ষরিত হলে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ করা সহজ হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য, সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। তবে উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের জন্য বেশকিছু সম্ভাবনা ও প্রতিবন্ধকতা থাকছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) গৃহীত সিদ্ধান্তের আলোকে এলডিসি দেশগুলো বিভিন্ন দেশে জিএসপি বা শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পেয়ে থাকে। উন্নয়নশীল দেশ হলে এসব সুবিধা হারাতে হবে। ফলে বাংলাদেশী পণ্যের রপ্তানি বাজার সংকোচনের আশঙ্কা রয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রপ্তানি বাজার সংরক্ষণ, সম্প্রসারণ ও বিভিন্ন দেশে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা পাওয়ার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের এফটিএ বা ইপিএ স্বাক্ষরের কার্যক্রম শুরু হলো।