কাতার বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচে দুটি করে জয়কে পুঁজি করে গ্রুপ-এইচ চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল কাল শেষ ষোলর শেষ ম্যাচে লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে গ্রুপ-জি’র রানার্স-আপ সুইজারল্যান্ডের মুখোমুখি হবে।
এবারের বিশ^কাপে নক আউট পর্বে এখন পর্যন্ত একটি মাত্র অল-ইউরোপীয়ান ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে, ফ্রান্স বনাম পোল্যান্ড। দ্বিতীয় অল-ইউরোপীয়ান ম্যাচে কাল একে অপরের মোকাবেলা করবে পর্তুগাল ও সুইজারল্যান্ড। উভয় দলই গ্রুপের শেষ ম্যাচে ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে।
কাতার বিশ^কাপে শুরুটা দারুনভাবে হওয়ায় নক আউট পর্বে যেতে পর্তুগালের সামনে শেষ ম্যাচে মাত্র এক পয়েন্টের প্রয়োজন ছিল শীর্ষস্থান দখলের। প্রথম দুই ম্যাচে জয়ী হওয়ায় এক ম্যাচ হাতে রেখে পর্তুগালের পরের রাউন্ড নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। ফার্নান্দো সান্তোসের দল দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে পাঁচ মিনিটেই রিকায়ো হোর্টার গোলে এগিয়ে গিয়ে নিজেদের আধিপত্য ভালই প্রমান করেছিল। কিন্তু ম্যাচের শেষের চিত্র ছিল ভিন্ন। বিরতির আগে এক গোল করে সমতায় আসার পর ৯১ মিনিটে দ্বিতীয় গোল করে নাটকীয় ভাবে জয় ছিনিয়ে নেয় উজ্জীবিত দক্ষিণ কোরিয়া। এই পরাজয় সত্তেও ঘানার বিরুদ্ধে দিনের আরেক ম্যাচে উরুগুয়ে জয়ী হওয়ায় পর্তুগালের গ্রুপের শীর্ষস্থান নিশ্চিত হয়। ২০০৬ সালের পর জার্মানী বিশ্বকাপে চতুর্থ হওয়া পর্তুগাল এবার ক্রিস্টিয়ানো রোনল্ডোর জন্য অন্তত শেষ চেষ্টাটা করতে চায়। যদিও রোনাল্ডোকে ছাপিয়ে এবার পর্তুগীজ দলে ব্রুনো ফার্নান্দেসকে নিয়ে বেশী আলোচনা হচ্ছে। উরুগুয়ের বিরুদ্ধে ২-০ গোলের জয়ের ম্যাচটিতেই দুটি গোলই করেছিলেন ফার্নান্দেস। ইউরো ২০১৬ বিজয়ী দলটি এবার বিশ^কাপে নতুন কিছু করে দেখাতে চায়।
১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে ইউসেবিওর পর্তুগাল তৃতীয় হয়েছিল । কিন্তু কখনই বিশ^মঞ্চের ফাইনালে ওঠা হয়নি। শেষ তিনটি আসরের দুটিতেই নক আউট পর্বের প্রথম ম্যাচেই বিদায় ঘটেছিল।
দলের গোল মেশিন খ্যাত রোনাল্ডোর ফর্ম ও ফিটনেস নিয়ে শুরু থেকেই শঙ্কা নিয়ে বিশ^কাপে এসেছে পর্তুগাল। নক আউট পর্বে পরিচিত প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে কোন চাপ নিয়ে খেলতে চায়না সান্তোসের দল। সর্বশেষ এ বছরের শুরুতে উয়েফা নেশন্স লিগে সুইসদের মোকাবেলা করেছিল পর্তুগাল। লিসবনের ম্যাচে পর্তুগাল দাপটের সাথে ৪-০ গোলে জয়ী হয়েছিল, যে ম্যাচটিতে রোনাল্ডো প্রথমার্ধে দুই গোল করেছিলেন। কিন্তু জেনেভাতে ফিরতি ম্যাচে সুইসরা ১-০ গোলে জয়ী হয়। পর্তুগালকে ঐ ম্যাচে হারানোর পর একই প্রতিযোগিতায় সুইজার্যান্ড একে একে স্পেন ও চেক প্রজাতন্ত্রকে হারিয়েছে। এরপর বিশ^কাপে গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচের দুটিতেই জয় তুলে নিয়েছে সুইজারল্যান্ড। ক্যামেরুনের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয় দিয়ে বিশ^কাপ শুরু করা সুইজারল্যান্ড এরপর ব্রাজিলের কাছে একই ব্যবধানে পরাজিত হয়। শেষ ম্যাচে এক পয়েন্ট হলেই সুইসদের পরের রাউন্ড নিশ্চিত হয়ে যেত। কিন্তু শেষ ম্যাচে ব্রাজিলকে হারিয়ে দিয়ে ক্যামেরুন পুরো গ্রুপের চেহারা পাল্টে দেয়। সার্বিয়ার বিরুদ্ধে তাই শেষ ম্যাচে ৩-২ গোলের কঠিন লড়াইয়ের পর জয় নিশ্চিত হলে সুইসরা নক আউটের টিকিট পায়।
এর আগে বিশ^কাপের কোন আসরে সুইসরা তিনটি ম্যাচে জয়ী হতে পারেনি। সাত বারের প্রচেষ্টায় কখনই কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছাতে পারেনি। কিন্তু এবারের কোচ মুরাত ইয়াকিনের দলটি নিয়ে অনেকেই আরো কিছুদুর প্রত্যাশা করছে।
১৯৫৪ সালে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে সুইজারল্যান্ড শেষ আটে পৌঁছেছিল। কিন্তু সম্প্রতি বেশ কিছু সাফল্য তাদের নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে।
আগেই নক আউট নিশ্চিত হওয়ায় পর্তুগাল সান্দোস শেষ ম্যাচে ছয়টি পরিবর্তন করেছিলেন। কিন্তু কালকের ম্যাচে আবারো মূল দলে সকলকে ফিরিয়ে আনা হবে বলেই জানিয়েছেন পর্তুগীজ কোচ। বেনফিকা ডিফেন্ডার ১৯ বছর বয়সী এন্টোনিও সিলভার দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে বিশ^কাপে অভিষেক হয়েছে। তার থেকে ২০ বছরের বড় পেপের সাথে তিনি রক্ষনভাগ সামলানোর দায়িত্বে ছিলেন। সবচেয়ে কম বয়সী পর্তুগীজ খেলোয়াড় হিসেবে সিলভার বিশ্বকাপে খেলার রেকর্ড হলো। চার জনের রক্ষনভাগে রুবেন ডিয়াস ফিরছেন, সাথে ডিয়োগো ডালট তো থাকছেনই। শুক্রবারের ম্যাচে ৬৫ মিনিটে একসাথে পরিবর্তিত হওয়া তিন খেলোয়াড়ের মধ্যে অধিনায়ক রোনাল্ডো ছিলেন। রেকর্ড গোলদাতা রোনাল্ডোর সাথে কাল আন্দ্রে সিলভা ও গনসালো রামোসের থাকা প্রায় নিশ্চিত। ইনজুরির কারণে পুরো বিশ^কাপ থেকে ছিটকে গেছেন নুনো মেনডেস। পাঁজরের হাড়ে চিড় ধরা ডানিলো সাইডলাইনে রয়েছেন। ফিটনেস শঙ্কা রয়েছে ওটাভিওকে নিয়েও।
এ দিকে অভিজ্ঞ গোলরক্ষক ইয়ান সোমারের পুনরায় মূল দলে ফেরার আশা করছে সুইজারল্যান্ড। অসুস্থতার কারনে শেষ ম্যাচটি তিনি খেলতে পারেননি। সুইসদের জার্সি গায়ে ৭৬ ম্যাচ খেলা সোমারের পরিবর্তে আগের ম্যাচে খেলেছেন বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের গ্রিগর কোবেল। অপরিবর্তিত দল নিয়েই সুইসদের মাঠে নামার সম্ভাবনা বেশী। মধ্যমাঠে যথারীতি থাকবেন গ্রানিত জাকা ও রেমো ফ্রুলার। আক্রমণাভাগে থাকবেন ব্রীল এম্বোলো। রুবেন ভারগাস ও জিহার্দান শাকারি দুই উইংয়ে থাকবেন।