কাতার বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে চার বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানীকে ২-১ গোলে হারিয়ে আপসেটের জন্ম দিয়েছিল জাপান। সেই দলটিই আজ আন্ডার ডগ কোস্টা রিকার আপসেটের শিকার হয়ে অনেকটাই ছিটকে গেছে টুর্নামেন্ট থেকে।
আল-রাইয়ানের আহমাদ বিন আলি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে কোস্টা রিকার কাছে ১-০ গোলে পরাজিত হয়েছে এশিয়ার ফুটবল শক্তি জাপান। এই ম্যাচে জয়লাভ করতে পারলেই নকআউট পর্ব নিশ্চিত হয়ে যেত জাপানের। ড্র করলেও পড়তো কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে। কারণ গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ শক্তিশালী স্পেন। তবে জয় তো দূরের কথা, পরাজিত হয়েই মাঠ ছাড়তে হলো জাপানকে। প্রথম ম্যাচে স্পেনের কাছে ৭-০ গোলে বিধ্বস্ত হওয়া দলটিই আজ জাপানকে হারিয়ে সংগ্রহ করেছে মুল্যবান তিনটি পয়েন্ট। ম্যাচের শেষ মুহুর্তে কোস্টা রিকার হয়ে জয়সুচক একমাত্র গোলটি করেছেন ডিফন্ডার কেইশার ফুলার।
কিছুটা আগ্রাসী ভাব নিয়েই ম্যাচের সুচনা করে জাপান। প্রথম মিনিটেই পেয়ে যায় কর্নার। যদিও সেটি থেকে কোন সুবিধা আদায় করতে পারেনি। ইউকি সোমার কর্নারের ক্রস ফিরে আসে কোস্টা রিকার রক্ষন থেকে। এর পর থেকেই উজ্জলতা হারাতে থাকে জাপানীদের খেলা।
জোয়েল ক্যাম্পবেলের নেয়া ফ্রি কিক কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা হলে ম্যাচের ৬ষ্ঠ মিনিটে প্রথম আক্রমনে যায় কোস্টা রিকা। কর্নার থেকে নেয়া তার দ্বিতীয় ফ্রি কিকে মাথা ছোঁয়াতে পারেনি পেনাল্টি এরিয়ায় থাকা সতীর্থরা।
১৫ মিনিটে আক্রমনে যায় জাপান। এ সময় রিটসু ডোয়ান একক প্রচেস্টায় বল নিয়ন্ত্রনে নিয়ে কোস্টা রিকার ডি বক্সে ফেললেও সেখানে ছিলনা কোন সতীর্থ। ফলে বলের নিয়ন্ত্রন চলে যায় প্রতিপক্ষের কাছে।
এরপর বেশ কিছু সময় কোস্টা রিকাকে কোনঠাসা করে রাখে জাপান। যদিও গোলের বড় কোন সুযোগ সৃস্টি করতে পারেনি। ২৪তম মিনিটে এসে একবার জাপানের সিমানায় প্রবেশ করতে সক্ষম হয় তারা রক্ষনের কোলসে বন্দী হয়ে থাকা কোস্টারিকা। ৩০ মিনিট পর্যন্ত শুধু একবার করে পোস্টে বল পাঠাতে পেরেছে প্রতিদ্বন্দ্বি দল দুটি। কোস্টা রিকা অবশ্য ৫ জন খেলোয়াড়কে নিযুক্ত করে রক্ষন সামলানোর জন্য। যে কারণে জাপানকে আটকে রাখতে পেরেই খুশি তারা। ৩৬ তম মিনিটে জাপানি বক্সে আরো একটি শট নিতে সক্ষম হয় কোস্টারিকা।
মুলত অতিরিক্ত এক মিনিটসহ প্রথমার্ধের পুরো সময়টিই বল ঘুরপাক খেয়েছে মধ্যমাঠে, বিশেষ করে কোস্টা রিকার সীমান্তে। ফলে গোল শুন্য ড্র নিয়েই বিরতিতে যায় দল দুটি। প্রথমার্ধে কোস্টা রিকার পোস্টে মাত্র দুটি শট নিতে পেরেছে জাপান। তাদের রক্ষনব্যুহ্যে একাবেরর জন্যও চিড় ধরাতে পারেনি এশিয়ার দলটি। যে কারণে বিরতিতে যাবার সময় তীব্র হতাশা দেখা গেছে জাপানীদের চোখেমুখে।
বিরতি থেকে ফেরার পর কিছু উজ্জীতি হয়ে খেলতে থাকে জাপান। ৪৭ তম মিনিটে রচনা করে পরিকল্পিত একটি আক্রমন। তবে যথারিতি বক্সে এসেই খেই হারায় তারা। ৬১তম মিনিটে ওয়াতারু এন্ডো বল নিয়ে কোস্টারিকার বক্সে প্রবেশের পথে লাইনের বাইরে তাকে ফাউল করেন সেলসো বোরগেস। এ কারণে হরুদ কার্ড দেখতে হয় তাকে। ফাউলের কারণে পাওয়া ফ্রি কিক থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন জাপানের সোমা। তার ডান পায়ে নেয়া শটের বল বাঁক নিয়ে চলে যায় পোস্টের উপর দিয়ে মাঠের বাইরে।
৭১ মিনিটে ডি বক্সের লাইন থেকে আবারো ফ্রি কিক পায় জাপান। এবারো প্রতিপক্ষের রক্ষন দেয়ালে লেগে ফিরে আসে ডাইচি কামাডার নেয়া শট। ৮১ মিনিটে উল্টো গোল খেয়ে বসে জাপান। এই সময় জাপানের রক্ষনের দূর্বলতার সুযোগ বল পেয়ে যান ইয়েলিস্টিন টাজেডা। তার কাছ থেকে বল পেয়ে ডি বক্সের লাইন থেকে ডান পায়ের বাঁকানো শটে গোল করেন কোস্টারিকার ডিফন্ডার কেইশার ফুলার। তার শটের বল জাপানের গোল রক্ষক শুশি গোন্ডার মাথার উপর দিয়ে জালে প্রবেশ করে (১-০)। এরপর বেশ কয়েকটি আক্রমন চালিয়েও গোলটি পরিশোধ করতে পারেনি জাপান।
এর আগে চারবার পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছিল জাপান ও কোস্টারিকা। এশিয়ান দলটি তিনটি ম্যাচে জয়লাভ করেছিল। অপর ম্যাচটি ড্র হয়। সর্বশেষ দল দুটি পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছিল ১৯১৮ সালের সেপ্টেম্বরে। যেখানে ৩-০ গোলে জয়লাভ করে জাপান। তবে আজই বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো পরসস্পরের মোকাবেলা করতে নেমেছিল দল দুটি।
গ্রুপের প্রথম ম্যাচে স্পেনের কাছে ৭-০ গোলে বিধ্বস্ত হয় কোস্টারিকা। ফলে আজ আন্ডরডগ হিসেবেই মাঠে নামে তারা। অপরদিকে গ্রুপের প্রথম ম্যাচে শক্তিশালী জার্মানিকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল জাপান। আগামী ১ ডিসেম্বর দোহার খালিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে গ্রুপের শেষ ম্যাচে স্পেনের মোকাবেরা করবে জাপান। একই রাতে আল-খোর এর আল-বায়াত স্টেডিয়ামে জার্মানীর মুখোমুখি হবে কোস্টা রিকা।