প্রধান বিচারপতি অধস্তন আদালতের জন্য মনিটরিং কমিটি গঠন করে দেয়ার পর আদালতে মামলা নিষ্পত্তির হার বেড়েছে।বর্তমান প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী দায়িত্ব গ্রহণের পর অধস্তন আদালত মনিটরিংয়ে প্রতিটি বিভাগের জন্য হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে দেন।
মনিটরিং কমিটি অধস্তন আদালতগুলোতে সফর করে বিচারিক কার্যক্রম তরান্বিত করার উদ্যোগ নেন। ফলে অধস্তন আদালতে মামলা নিষ্পত্তির হার বেড়েছে।সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, ‘প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই আমি দেশের প্রতিটি বিভাগের অধস্তন আদালত মনিটরিংয়ের জন্য হাইকোর্ট বিভাগের একজন করে বিচারপতিকে দায়িত্ব দিয়ে মনিটরিং কমিটি ফর সাবঅর্ডিনেট কোর্টস গঠন করি। দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারপতিদের নিরবচ্ছিন্ন তৎপরতা এবং প্রদত্ত দিকনির্দেশনা ও পরামর্শের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা নিষ্পত্তির গতি ইতোমধ্যে অনেকটাই বেড়েছে। মনিটরিং কমিটির বিচারপতিরা বিভিন্ন জেলার আদালতগুলো পরিদর্শন করেছেন।’সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন সূত্র জানায়, চলতি ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অধস্তন আদালতে নিষ্পত্তি হয়েছে ১০ লাখ ৭২ হাজার ২৪৮টি মামলা। আর এ সময়ের মধ্যে নতুন দায়ের হয়েছে ১১ লাখ নয় হাজার ৫৩৯টি মামলা। ফৌজদারি মামলার চেয়ে দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে বেশি।অধস্তন আদালতে এ বছরের প্রথম তিন মাসে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত মামলা নিষ্পত্তির হার ছিল শতকরা ৮৫ শতাংশ। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তা বেড়ে শতকরা ১০১ শতাংশে উন্নীত হয়। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে শতকরা ১০৫ শতাংশে। বিভাগ ভিত্তিক নিষ্পত্তিতে ঢাকা বিভাগ সব থেকে এগিয়ে আছে। এ বিভাগের নিষ্পত্তির হার শতকরা ১৩০ শতাংশ। আর জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিষ্পত্তি হয়েছে গাজীপুরে শতকরা ১৬৫ শতাংশ। শতভাগের বেশি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে যেসব জেলায়, সেগুলো হলো-ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, রাঙামাটি, নোয়াখালী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, পাবনা, খুলনা, বাগেরহাট, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, নড়াইল, বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা, রংপুর,্, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোনায়।
সুপ্রিমকোর্টে চলতি বছর দুটি অবকাশের সময় হাইকোর্ট বিভাগের ২২ জন বিচারপতি অধস্তন আদালতের বিচারকাজ তথা মামলা নিষ্পত্তিতে গতি বাড়ানোর লক্ষ্যে দেশের ৫১টি জেলা ও দায়রা জজ ও মহানগর দায়রা আদালত পরিদর্শন করেছেন। প্রধান বিচারপতি খুলনা, বাগেরহাট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার আদালত পরিদর্শনে যান। সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন সূত্র জানায়, চলতি ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অধস্তন আদালতে সর্বমোট দুই লাখ ৬৮ হাজার ৯৩৫ টি দেওয়ানী মামলা দায়ের হয়েছে। এ সময়ে নিষ্পত্তি হয়েছে দুই লাখ ৭৪ হাজার ৪৯৯টি দেওয়ানী মামলা। দেওয়ানী মামলা নিষ্পত্তির হার শতকরা ১০২ শতাংশ। একই সময়ে ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়েছে আট লাখ ৪০ হাজার ৬০৪টি। আর নিষ্পত্তি হয়েছে সাত লাখ ৯৭ হাজার ৭৪৯টি। ফৌজদারি মামলার নিষ্পত্তির হার শতকরা ৯৫ শতাংশ।হাইকোর্ট বিভাগে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট দায়ের হয়েছে ৬৪ হাজার ৬৪১টি মামলা। আর নিষ্পত্তি হয়েছে ৫০ হাজার ৯১০টি মামলা। হাইকোর্ট বিভাগে মামলা নিষ্পত্তির হার শতকরা ৭৯ শতাংশ।মামলার নিষ্পত্তিতে বিলম্ব ও ব্যয় কমাতে এবং অবাধ বিচারিক তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করে টেকসই বিচার প্রতিষ্ঠায় ‘কোর্ট প্রযুক্তি’র ব্যবহার বাড়াতে সম্প্রতি কমিটি গঠন করেছে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর অনুমোদন সাপেক্ষে চার সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়। সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মোঃ গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়।দেশের ২৩ তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী গত বছর ৩১ ডিসেম্বর শপথ নেন। দায়িত্ব নেয়ার পর দেশের আদালতসমূহে মামলাজট কমাতে এবং বিচারিক কার্যক্রম তরান্বিত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নেন প্রধান বিচারপতি।উচ্চ আদালতে বিচারাধীন ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিল নিষ্পত্তিতে বেঞ্চ সংখ্যা বৃদ্ধি করে দেন। ফলে উল্লেখযোগ্য হারে মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে। আইনজীবীরা জানান, প্রধান বিচারপতির নানামুখী উদ্যোগের ফলে মামলা নিষ্পত্তি হার বাড়ছে। পাশাপাশি বিচারপ্রার্থীদের হয়রানিও লাঘব হচ্ছে।