ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে সংঘটিত জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক ও জাতিসংঘের স্বীকৃতি আদায়ে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। আগামী ৯ ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক জেনোসাইড স্মরণ’ দিবসের প্রস্ততি উপলক্ষে ঢাবি’র উপাচার্য ভবনে অনুষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সংগঠন ‘আমরা একাত্তর’ আয়োজিত এক সমন্বয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
ঢাবি উপাচার্য বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত জেনোসাইডের জাতিসংঘ স্বীকৃতি আদায়ের পথটি মসৃন নয়। তাই এ দাবি আদায়ে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠনের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকেও যুক্ত করতে হবে। একটি সম্মিলিত প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি ‘আন্তর্জাতিক জেনোসাইড স্মরণ’ দিবস উপলক্ষে জেনোসাইড বিষয়ক আলোচনা, গবেষণা, প্রকাশনাসহ সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বৃদ্ধির ওপর জোর দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ দাবি আদায়ের অগ্রণী অংশী হিসেবে কাজ করবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।
‘১৯৭১ গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’ এর ট্রাস্টি বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বাংলাদেশ জেনোসাইড বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, জেনোসাইডের জাতিসংঘ স্বীকৃতি আদায়ের প্রচেষ্টাকে গতিশীল করতে মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে আগে স্বীকৃতি আদায় করতে হবে।
সভার শুরুতেই আমরা একাত্তরের চেয়ারপারসন মাহবুব জামান জেনোসাইডের স্বীকৃতি আদায়ের দাবিতে সংগঠনের গৃহিত বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে সভাকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এ বিষয়ে জনমত তৈরি করতে হবে।তিনি আন্তর্জাতিক জেনোসাইড স্মরণ দিবস উপলক্ষে আমরা একাত্তর গৃহিত বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরেন।
বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক জেনোসাইডের স্বীকৃতি আদায়ের দাবিতে বিভিন্ন কর্মকান্ডের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলে প্রচারের জন্য জেনোসাইডের ওপর ইংরেজিতে তথ্য, উপাত্ত ও ডকুমেন্ট তৈরির পরামর্শ দেন।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম হামিদ বলেন, এ দাবি আদায়ের পথে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ যারা এ বিষয়ে কাজ করছে তাদেরও যুক্ত করতে হবে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের ওপর যে নির্মম, নিষ্ঠুর ও ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করেছিলো, বিশেষজ্ঞদের বিচারে তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ জেনোসাইড। এর ভয়াবহতা বিবেচনা করে, ইতিমধ্যেই তিনটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘লেমকিন ইন্সটিটিউট’, ‘জেনোসাইড ওয়াচ’ এবং ‘ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন ফর সাইটস অব কনসিয়েন্স’ ১৯৭১-এর জেনোসাইডকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে ২৫ মার্চকে বাংলাদেশে ‘জাতীয় জেনোসাইড দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।
বাংলাদেশ জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক ও জাতিসংঘ স্বীকৃতির দাবিতে দেশে ও বিদেশের কিছু প্রবাসী সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তারই অংশ হিসেবে, আগামী ৯ ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক জেনোসাইড স্মরণ’ দিবস পালন উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের লক্ষ্যে এ সমন্বয় সভার আয়োজন করা হয়।
ঢাবি উপাচার্যের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, ‘আমরা একাত্তর’ এর প্রধান সমন্বয়ক হিলাল ফয়েজী, বিশিষ্ট সাংবাদিক অজয় দাস গুপ্ত, জেনোসাইড বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার দত্ত, ‘প্রজন্ম ৭১’ এর সভাপতি আসিফ মুনীর, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ শাখার পরিচালক মো. মাহবুর রহমান, ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সমন্বয়কারী ইমরান আজাদ। এছাড়াও ‘আমরা একাত্তর’ এর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সভায় উপস্থিত ছিলেন।