প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, কখনো কোনদিন প্রত্যক্ষ রাজনীতি না করেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন মরহুম ব্যারিস্টার রফিক-উল হক।
বরেণ্য আইনজীবী সাবেক এটর্নি জেনারেল মরহুম ব্যারিস্টার রফিক-উল হক স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আজ এ কথা বলেন প্রধান বিচারপতি।
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। আইনজীবী হিসেবে সাফল্য এবং দানশীল ব্যক্তিত্ব হিসেবে ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আরো বক্তৃতা করেন
আপিল বিভাগের বিচারপতি নূরুজ্জামান, বিচারপতি বোরহান উদ্দিন, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সাবেক এটর্নি জেনারেল ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ, আদ-দ্বীন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুস সবুর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ প্রমূখ।
আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. শেখ মহিউদ্দিন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সাংবাদিক আমিরুল মোমেনীন মানিক ও ডা. নাহিদ ইয়াছমিন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, অত্যন্ত প্রখর মেধাবী ও যোগ্য মানুষ ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। আইনজীবী হিসেবে তিনি কিছু অত্যাবশ্যকীয় নীতি মেনে চলতেন। তিনি কখনোই নীতি থেকে বিচ্যুত হননি।
প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, যে কোনো পেশা বা বৃত্তিতে শুধু যোগ্যতা থাকলেই স্বকীয়তা আসে না। পেশার বাইরে তার জ্ঞানের পরিধি থাকতে হয়। রফিক উল হক একাধারে আইন, ইতিহাস, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতিতে জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। একজন আদর্শ নীতিবান আইনজীবী হিসেবে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক আইন পেশাকে মহীমান্বিত করেছেন। ৮৫ বছর বয়সে রফিক উল হক এতো সব কাজ করেছেন তা ভাবতে অবাক লাগে। তিনি শুধু আইনী প্রতিকারই দেননি মানুষের দুঃখ তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ব্যারিস্টার রফিক ্উল হকের জীবনের লক্ষ্যই ছিল, অব্যাহত কর্মযোগ। তার মতো মোধাবী জ্ঞানী ও কর্মঠ লোক আমার জীবনে কমই দেখেছি। কখনো কোনদিন প্রত্যক্ষ রাজনীতি না করেও ডেমোক্রেসি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন ব্যারিস্টার রফিক উল হক।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের গনতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তার সেই অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তার বৈচিত্র কর্মধারায় আরো একটি দিক হলো যুগের চাহিদা অনুযায়ী কোম্পানী আইন, আরবিট্রেশন আইনের সংশোধনী প্রনয়নে অসাধারণ ভুমিকা। কমার্শিয়াল আইন প্রনয়নে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তিনি বেঁচে থাকতে আমি বিচারপতি হয়েছি। তিনি দেখে গিয়েছেন। তার সম্পর্কে আমার অমলিন স্মৃতি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক অসংখ্য সমাজ কল্যানমূলক কাজ করেছেন উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ঢাকা শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, বারডেম হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা, আহছানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতাল ও আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠায় তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন মরহুম ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের শিক্ষাকর ও কর্ম জীবনের নানা দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আদালতে মামলা শুনানিতে তার পারদর্শীতা এবং আইনি যুক্তি পেশ ছিল অতুলনীয়।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, আইন পেশায় ব্যারিস্টার রফিক-উল হক তাকে অনন্য উচ্ছতায় নিয়ে গেছেন। আইন পেশায় তার বর্ণাঢ্য সাফল্য। তার ক্ষুরধার যুক্তি সমৃদ্ধ করেছে মামলার রায়কে। পাশাপাশি সারাজীবনে তার অর্জিত আয় মানব কল্যানে ব্যায়ের যে নজীর স্থাপন করেছেন তা বিরল।
তার কর্মময় জীবনের আদর্শ অনুসরণের মধ্যদিয়েই তার প্রতি যথাযত সম্মান জানানো হবে। তার পরিচালিত মামলাগুলো কমফাইল করে বই আকারে প্রকাশ করলে আইনপেশার প্রজন্ম উপকৃত হবে।