বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো: শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেবার পাশাপাশি গবেষণাও বৃদ্ধি করতে হবে। আজ স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অর্থায়নে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) এক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
নিপসম মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপাচার্য বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, গবেষণা ফলাফলের উপর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নির্ভর করে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোর্সের সময় ভিন্নতা দেখা যায়। একই কোর্স এমপিএইচ কোথাও ৬ মাস, কোথাও ৯ মাস, কোথাও ১২ মাস আবার কোথাও ১৮ মাস।’ তিনি বলেন, কোর্সের সময়সীমার ভিন্নতার কারণে সময় নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়ে থাকে। এ জটিলতা দূর করতে হলে, সকল স্বাস্থ্যসেবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এই এমপিএইচ কোর্সকে ২ বছর মেয়াদী করতে হবে’।
গবেষণা দলের প্রধান নিপসম’র পরিচালক অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন। তিনি বলেন, পিটিএসডি আক্রান্ত স্বাস্থ্যসেবা পেশাদাররা সবার থেকে দূরে সরে থাকতে পারেন বা চাকরি ছেড়ে দিতে পারেন বা তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা থাকতে পারে। এই স্বাস্থ্য সমস্যাটির সমাধান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের করা উচিত।
গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত বিবাহিত স্বাস্থ্যকর্মীরা বেশী মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়।‘বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারীকালে স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর এর মনস্তাত্বিক প্রভাব, কুশলবস্থা, সংশ্লিষ্ট ফ্যাক্টরসমূহ এবং মানিয়ে নেবার কৌশল’ শীর্ষক জাতীয় জরিপের প্রকাশিত ফলাফল থেকে এ তথ্য জানা যায়। প্রকাশিত জরিপ গবেষণায় স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের মানসিক সুস্থতায় কাউন্সেলিং প্রোগ্রামের ব্যবস্থা জোরদার ও প্রবর্তনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত বিবাহিত স্বাস্থ্যকর্মীরা বেশী মানসিক রোগে আক্রান্ত হন। দেশে করোনা মহামারির সময় স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের ওপর মানসিক প্রভাব, সংশ্লিষ্ট কারণ ও মোকাবিলার কৌশল শীর্ষক গবেষণাটি ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে পরিচালিত হয়েছে ১ হাজার ৩৯৪ জন স্বাস্থ্যকর্মীর ওপর। তাদের মধ্যে ছিলেন ৫৯৬ জন চিকিৎসক, ৭১৩ জন নার্স এবং ৮৫ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট। এসব স্বাস্থ্যকর্মীরা অন্তত এক মাস করোনা রোগীদের সঙ্গে কাজ করেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়,নারীদের পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (পিটিএসডি) ঝুঁকি ছিল বেশি। যাদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে ৬২ দশমিক ৯ শতাংশেরই পিটিএসডি ছিল। তাদের মধে ৮৩ দশমিক ৬ শতাংশ ছিলেন বিবাহিত। স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের কাজের চাপ অনেক বেশি ছিল, তারা ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রীর (পিপিই) অপ্রতুলতায় ছিলেন এবং করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে ছিলেন। বাংলাদেশে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে ২৩ দশকি ৫০ শতাংশ পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে (পিটিএসডি) আক্রান্ত হয়। স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের মধ্যে চিকিৎসকদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ হয়েছিল। এরপরেই ছিলেন টেকনোলজিস্ট ও নার্স। পিটিএসডিতে আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসক ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ, টেকনোলজিস্ট ২৩ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং নার্স ২২ দশমিক ৮০ শতাংশ।