চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনের স্পটলাইটে বাংলাদেশের অফ-স্পিনার নাইম হাসান ও শ্রীলংকার ব্যাটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ। দীর্ঘ ১৫ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেছেন নাইম। তার ১০৫ রানে ৬ উইকেট শিকারে ৩৯৭ রানে অলআউট হয় শ্রীলংকা। লংকানদের এত দূর এনেছেন ব্যাটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ। কিন্তু দিন শেষে আক্ষেপে পুড়েছেন তিনি। কারন ১৯৯ রানে আউট হন ম্যাথুজ। ১ রানের জন্য ডাবল সেঞ্চুরি মিস করেছেন লংকান অভিজ্ঞ এ ক্রিকেটার। এরপর নিজেদের ইনিংস শুরু করে দিন শেষে বিনা উইকেটে ৭৬ রান তুলেছে বাংলাদেশ। ১০ উইকেট হাতে নিয়ে ৩২১ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে ম্যাচের প্রথম দিন শেষে ৪ উইকেটে ২৫৮ রান করেছিলো শ্রীলংকা। সেঞ্চুরি তুলে ১১৪ রানে অপরাজিত ছিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ। ৩৪ রান নিয়ে ম্যাথুজের সঙ্গী ছিলেন দিনেশ চান্ডিমাল।
দলীয় স্কোর ৪শ বা ৫শ করার লক্ষ্য নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করে শ্রীলংকা। আগের দিন ৭৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়া ম্যাথুজ ও চান্ডিমাল আজও বাংলাদেশ বোলারদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে শুরু করেন। ২০৮ বল মোকাবেলা করে জুটিতে ১শ পূর্ণ করেন তারা। ম্যাচে শ্রীলংকান ইনিংসে জুটিতে প্রথম শতরান।
সেই সাথে টেস্ট ক্যারিয়ারের ৬৪তম ম্যাচে ২১তম ও বাংলাদেশের বিপক্ষে হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন চান্ডিমাল। ১২৮ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পুর্ন করেন চান্ডিমাল।
এ অবস্থায় চান্ডিমালকে থামান নাইম। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোর আউট হন চান্ডিমাল। রিভিউ নিয়েও উইকেট বাঁচাতে পারেননি তিনি। ফলে ম্যাথুজের সাথে ২৮৭ বলে ১৩৬ রানের জুটি ভাঙ্গে চান্ডিমালের। ১৪৮ বল খেলে ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৬৬ রান করেন তিনি।
চান্ডিমালকে আউট করা ওভারেই ক্রিজে নতুন ব্যাটার উইকেটরক্ষক নিরোশান ডিকবেলাকেও বিদায় দেন নাইম। ৩ বলে ৩ রান করে নাইমের বলে বোল্ড হন ডিকবেলা। এমন অবস্থায় নাইমের জোড়া আঘাতের সাফল্য নিয়ে প্রথম সেশন শেষ করে বাংলাদেশ। এ সময় শ্রীলংকার রান ছিলো ৬ উইকেটে ৩২৭। ম্যাথুজ ১৪৭ রানে অপরাজিত ছিলেন।
বিরতি থেকে ফেরার পর প্রথম ওভারেই জোড়া আঘাত হানেন সাকিবও। দ্বিতীয় বলে রমেশ মেন্ডিসকে বোল্ড করেন সাকিব। আর পরের বলে লাসিথ এম্বুলদেনিয়াকে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন তিনি। সাকিব হ্যাট্টিকের সুযোগ সৃস্টি করলেও সেটি রুখে দেন বিশ^ ফার্নান্দো। পরে এই বিশ^, ভুগিয়েছেন বাংলাদেশকে।
ম্যাথুজের সাথে উইকেটে থিতু হয়ে পড়েন দশ নম্বরে নামা বিশ^। এমন অবস্থায় ২৯৩ বলে দেড়শ ছুঁয়ে নিজের ইনিংসকে সামনের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন ম্যাথুজ। ক্যারিয়ারের চতুর্থ দেড়শ রানের ইনিংসকে ডাবল-সেঞ্চুরির দিকেই নিচ্ছিলেন তিনি। চা-বিরতি পর্যন্ত ১৭৮ রান ছিলো ম্যাথুজের পাশে।
চা-বিরতির আগের ওভারে ম্যাথুজ-বিশ^ জুটিটি ভাঙ্গতে পারতো। সাকিবের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আকাশে বল তুলে দেন বিশ^। মিড-অনে ক্যাচের সুযোগ পান মুশফিকুর রহিম। কিন্তু বল তার হাত ফসকে যায়। ১৬ রানে জীবন পান বিশ^। তবে বিরতির আগে শেষ ওভারে শরিফুল ইসলামের বাউন্সারে মাথার পেছনে হেলমেটে আঘাত পান বিশ^। বিরতির পরপরই ব্যাট হাতে নামতে পারেননি তিনি।
ফলে বিরতির পর শেষ ব্যাটার আসিথা ফার্নান্দোকে নিয়ে লড়াই শুরু করেন ম্যাথুজ। বিরতির পর প্রথম ওভারেই আসিথাকে রান আউটের সুযোগ হাতছাড়া করে বাংলাদেশ। জীবন পেয়ে বাংলাদেশের বোলারদের দক্ষতার সাথে সামলাতে থাকেন আসিথা। আর অন্য প্রান্তে গুটি-গুটি করে ডাবল-সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ম্যাথুজ।
তবে নিজের ২৮ ও ইনিংসের ১৪৯তম ওভারে আসিথাকে দারুন ঘুর্ণিতে বোল্ড করে ইনিংসে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন নাইম। মেহেদি হাসান মিরাজের ইনজুরিতে ১৫ মাস পর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমেই ইনিংসে পাঁচ উইকেটের দেখা পেলেন নাইম। ৮ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে তৃতীয়বারের মত পাঁচ উইকেট নিলেন নাইম।
পাঁচ উইকেট শিকার করা নাইমের সাথে, তখন স্পটলাইটে ছিলেন ম্যাথুজও। কারন ডাবল-সেঞ্চুরির পথে তিনি। আসিথা যখন ফিরেন, তখন ১৯২ রানে ম্যাথুজ।
এরপর ক্রিজে আসেন হেলমেটে আঘাত পাওয়া বিশ^। আহত অবসর নেয়ার আগে নবম উইকেটে ম্যাথুজের সাথে ১৪৭ বলে ৪৭ রানের জুটি গড়েছিলেন বিশ^। সেখানে তার অবদান ছিলো ৭৭ বলে ১৭ রান। তাই বিশ^কে নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল-সেঞ্চুরির পাবার ব্যাপারে আত্মবিশ^াসী ছিলেন ম্যাথুজ।
১৫২তম ওভারের পঞ্চম বলে তাইজুলকে বাউন্ডারি মারেন ম্যাথুজ। আর শেষ বলে ১ রান নেন তিনি। এতে ১৯৭ রান দাঁড়ায় ম্যাথুজের। নাইমের করা ১৫৩তম ওভারের পঞ্চম বলে ২ রান নিয়ে ১৯৯ রানে পৌঁছান ম্যাথুজ। এতে ফিল্ডারদের ৩০ গজের মধ্যে নিয়ে আসেন নাইম। ওভারের শেষ বলে উইকেট ছেড়ে ফিল্ডারদের মাথার উপর দিয়ে মারতে গিয়ে স্কয়ার লেগে সাকিবকে ক্যাচ দেন ম্যাথুজ। ফলে ১ রানের জন্য ডাবল-সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপে পড়তে হয় ম্যাথুজকে। বিশে^র ১২তম ব্যাটার হিসেবে ১৯৯ রানে আউট হওয়া ক্রিকেটার হিসেবে রেকর্ড বইয়ে নাম তুলেন ম্যাথুজ। তবে শ্রীলংকার দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে ১৯৯ রানে থামেন তিনি। ১৯৯৭ সালে কলম্বোতে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে ১৯৯ রানে আউট হয়েছিলেন সনৎ জয়সুরিয়া।
৩৯৭ বলে ১৯টি চার ও ১টি ছক্কায় নিজের নান্দনিক ইনিংসটি সাজান ম্যাথুজ। ৮৪ বলে ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন বিশ^।
ম্যাথুজকে শিকার করে টেস্টে এক ইনিংসে প্রথমবারের মত ষষ্ঠ উইকেট নেন নাইম। একই সাথে টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং ফিগার দাঁড় করান তিনি। ৩০ ওভারে ১০৫ রানে ৬ উইকেট নেন নাইম। এছাড়া সাকিব ৬০ রানে ৩টি ও তাইজুল ১০৭ রানে ১ উইকেট নেন।
শ্রীলংকার ইনিংস শেষে আজ ১৯ ওভার ব্যাট করে বাংলাদেশ। টাইগারদের দুই ওপেনার দিন শেষে অবিচ্ছিন্ন থেকে যান। মাহমুদুল হাসান জয় ৬৬ বলে ৩১ ও তামিম ইকবাল ৫২ বলে অপরাজিত ৩৯ রান করেছেন। দু’জনই ৫টি করে চার মেরেছেন।
স্কোর কার্ড (টস-শ্রীলংকা) :
শ্রীলংকা প্রথম ইনিংস (আগের দিন ২৫৮/৪, ম্যাথুজ ১১৪*, চান্ডিমাল ৩৪*) :
ওশাদা ক লিটন ব নাইম ৩৬
করুনারতেœ এলবিডব্লু ব নাইম ৯
কুশল ক নাইম ব তাইজুল ৫৪
ম্যাথুজ ক সাকিব ব নাইম ১৯৯
ধনাঞ্জয়া ক জয় ব সাকিব ৬
চান্ডিমাল এলবিডব্লু ব নাইম ৬৬
ডিকবেলা বোল্ড ব নাইম ৩
রমেশ বোল্ড ব সাকিব ১
এম্বুলদেনিয়া এলবিডব্লু ব সাকিব ০
বিশ^ ফার্নান্দো অপরাজিত ১৭
আসিথা বোল্ড নাইম ১
অতিরিক্ত (বা-৪, নো-১) ৫
মোট (অলআউট, ১৫৩ ওভার) ৩৯৭
উইকেট পতন : ১/২৩ (করুনারতেœ), ২/৬৬ (ওশাদা), ৩/১৫৮ (কুশল), ৪/১৮৩ (ধনাঞ্জয়া), ৫/৩১৯ (চান্ডিমাল), ৬/৩২৩ (ডিকবেলা), ৭/৩২৮ (রমেশ), ৮/৩২৮ (এম্বুলদেনিয়া), ৯/৩৭৫ (আসিথা), ১০/৩৯৭ (ম্যাথুজ)।
বাংলাদেশ বোলিং :
শরিফুল : ২০-৩-৫৫-০,
খালেদ : ১৬-১-৬৬-০ (ও-১),
নাইম : ৩০-৪-১০৫-৬,
তাইজুল : ৪৮-১২-১০৭-১,
সাকিব : ৩৯-১২-৬০-৩।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস :
মাহমুদুল হাসান জয় অপরাজিত ৩১
তামিম ইকবাল অপরাজিত ৩৯
অতিরিক্ত (লে বা-২, নো-৪) ৬
মোট (বিনা উইকেট, ১৯ ওভার) ৭৬
শ্রীলংকা বোলিং :
বিশ^ : ৪-০-১৭-০,
আসিথা : ৪-১-১৯-০,
রমেশ : ৭-১-১৯-০,
এম্বুলদেনিয়া : ৪-০-১৯-০