দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিভিন্ন পন্থায় বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা) ও তার ভাই অনন্ত কুমার সিনহার বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের করেছে।
দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদি হয়ে আজ বৃহস্পতিবার সংস্থার সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি দায়ের করেন।
দুদক’র সচিব মো. মাহবুব হোসেন আজ রাজধানীর সেগুন বাগিচাস্থ কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে ২ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার বা প্রায় ২ কোটি ৫২ লাখ টাকা (প্রতি ডলার ৯০ টাকা হিসেবে) ক্যাশ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে নিউজার্সিতে (১৭৯, জ্যাপার স্ট্রিট, প্যাটারসন নিউ জার্সি ০৭৫২২) একটি তিনতলা বাড়ি কেনায় এ মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
মানিলন্ডারিং আইনে দায়েরকৃত এ মামলায় এসকে সিনহার বিরুদ্ধে ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন অবৈধভাবে ওই অর্থ অর্জন’ ও তা ‘যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের’ অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, অনন্ত কুমার সিনহা বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ছোট ভাই। অনন্ত কুমার সিনহার যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যালি ন্যাশনাল ব্যাংক, প্যাটারসন, নিউজার্সির অ্যাকাউন্টে (নং: ৮৫৮০৩৩৭৫) ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল থেকে ২০ জুন পর্যন্ত সময়ে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৪৫৮ ডলার জমা হয়। ২০১৮ সালের ১২ জুন অনন্ত কুমার সিনহা ১৭৯ জ্যাপার স্ট্রিট, প্যাটারসন নিউজার্সিতে ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার ক্যাশ দিয়ে একটি বাড়ি ক্রয় করেন।
এতে আরো বলা হয়, অনন্ত কুমার সিনহা যুক্তরাষ্ট্রের একজন ডেন্টিস্ট হিসেবে কর্মরত থেকে ১ লাখ ৪৫ হাজার ডলার দিয়ে একটি বাড়ি ক্রয় করেন এবং ২০১৮ সালের ১২ জুন ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার ক্যাশ দিয়ে আর একটি বাড়ি কিনেন। মূলত সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বাংলাদেশে প্রধান বিচারপতি থাকাকালে বিভিন্নভাবে অবৈধ টাকা অর্জন করেন এবং তা হুন্ডিসহ বিভিন্ন কায়দায় যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করে ছোট ভাইয়ের অ্যাকাউন্টে ওই টাকা ট্রান্সফার করেন। ওই অর্থ দিয়েই ১৭৯, জ্যাপার স্ট্রিট, প্যাটারসন নিউজার্সিতে ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার ক্যাশ দিয়ে একটি বাড়ি কেনা হয়। ওই বাড়িটি পরোক্ষভাবে সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নিজের বাড়ি।
সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ও তার ছোটভাই অনন্ত কুমার সিনহা অসৎ উদ্দেশ্যে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়। উল্লেখ্য, তারা দু’জন মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪ (২), ৪ (৩) ধারা ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর দুর্নীতি সংক্রান্ত এক মামলায় এসকে সিনহাকে ১১ বছরের কারাদন্ড দেন আদালত। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে এসকে সিনহাকে এক ধারায় সাত বছর ও আরেক ধারায় চার বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়। দ’ুটি ধারায় দেওয়া সাজা একসঙ্গে চলবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।