×
ব্রেকিং নিউজ :
প্রধান উপদেষ্টাকে ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণ ট্রাম্প সমর্থকদের ‘আবর্জনা’ বলায় সমালোচনার মুখোমুখি বাইডেন সুপার টাইফুন কং-রে-র সাথে লড়ছে তাইওয়ান হ্যারিসের সমাবেশে ক্যাপিটলে দাঙ্গা নিয়ে সমর্থকদের উল্লাস স্পেনে প্রবল বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় বেশ কিছু লাশ উদ্ধার দক্ষিণ আফ্রিকার রান ৫শ’ ছাড়ালো আমি প্রচুর গালিগালাজ শিখেছি : পরী মণি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের আমরা যেন ভুলে না যাই : নাহিদ ইসলাম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবার বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের প্রতিবাদে মানববন্ধন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কারের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে : জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৩-২৪
  • ৩৭০ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

 মুক্তিযুদ্ধকালীন  মানবতাবিরোধী অপরাধে সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আব্দুল খালেক মন্ডল ওরফে জল্লাদ খালেকসহ দুইজনের মৃত্যুদ-াদেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শহিনুর ইসলমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল আজ এ রায় দেন।
মৃত্যুদ-াদেশ প্রাপ্ত অপর আসামি হলেন- খান রোকনুজ্জামান। তিনি পলাতক রয়েছেন।
খালেক মন্ডলসহ দুজনের রায় বৃহস্পতিবার ২৪ মার্চ ঘোষণার জন্য ধার্য ছিল। ২২ মার্চ রায়ের দিন ধার্য রেখে আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে মামলায় যে কোনো দিন রায় (সিএভি) ঘোষণার জন্য রেখে ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর আদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ।
আসামিদের বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ, অপহরণসহ মানবতাবিরোধী ছয়টি অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় সর্বোচ্চ এ দ- দেয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় এজলাস কক্ষে আসামির কাঠগড়ায় আব্দুল খালেক মন্ডল বসে ছিলেন।
সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে ২০৮ পৃষ্ঠার রায় পড়া শুরু হয়। রায়ের মূল অংশ পাঠ করেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম।
এ সময় ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল, সুলতান মাহমুদ সীমন ও রেজিয়া সুলতানা চমন উপস্থিত ছিলেন। আসামিপক্ষে এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ ও মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন উপস্থিত ছিলেন।
রায়ের পর প্রসিকিউশন সন্তেষ প্রকাশ করেন। অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।
আসামি পলাতক খান রোকনুজ্জামানের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন গাজী এম এইচ তামিম।
এ মামলায় মোট আসামি ছিলেন চারজন।  অপর দুই আসামি আব্দুল্লাহ হেল বাকী ও জহিরুল ইসলাম টেক্কা খান বিচার চলাকালে মারা যান। এর মধ্যে বাকী জামিনে থাকা অবস্থায় ও টেক্কা খান পলাতক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
২০১৮ সালের ৫ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। আনুষ্ঠানিক অভিযোগে আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ছয়জনকে হত্যা, দুজনকে ধর্ষণ, ১৪ জনকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ।
২০১৫ সালের ১৬ জুন ভোরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খলিলনগর মহিলা মাদ্রাসায় নাশকতার উদ্দেশে কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে গোপন বৈঠকের অভিযোগে আব্দুল খালেক ম-লকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই বছরের ২৫ আগস্ট খালেক মন্ডলের বিরুদ্ধ সাতক্ষীরায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলার মধ্যে শহীদ মোস্তফা গাজী হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখান ট্রাইব্যুনাল।
শিমুলবাড়িয়া গ্রামের রুস্তম আলীসহ পাঁচজনকে হত্যার অভিযোগে ২০০৯ সালের ২ জুলাই খালেক মন্ডলের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন শহীদ রুস্তম আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম গাজী।
এ মামলার চার আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট থেকে তদন্ত শুরু হয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়।
২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চারজনের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ড প্রতিবেদন প্রকাশ করেন ট্রাইব্রুনালের তদন্ডকারী সংস্থা। পরে ৮ মার্চ অন্য তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
একই বছরের ১৭ মার্চ সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আলিপুর ইউনিয়নের বুলারাটী গ্রামের বাড়ি থেকে আব্দুল্লাহ হেল বাকীকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯ মার্চ হাজির করা হলে ঢাকায় থাকা ও ধার্য দিনে হাজিরের শর্তে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী এম আব্দুর রউফের হেফাজতে ১০৩ বছর বয়স্ক বাকীকে জামিন দেয়া হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগ আনা হলেও ট্রাইব্যুনালে ছয়টি অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়।
ছয় অভিযোগের মধ্যে প্রথম অভিযোগ- ১৯৭১ সালের ১৮ আগস্ট সকাল ৮টার দিকে বেতনা নদীর পাড়ে বুধহাটা খেয়াঘাটে আফতাবউদ্দিন ও সিরাজুল ইসলামকে রাজাকার কমান্ডার ইছাহাক (মৃত) ও তার সহযোগীরা গুলি করে হত্যা করে। পরে স্থানীয় খলিলুর রহমান, মো. ইমাম বারী, মো. মুজিবর রহমান ও ইমদাদুল হককে রাজাকার বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্র ডায়মন্ড হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।
দ্বিতীয় অভিযোগ- ১৯৭১ সালের ১ ভাদ্র ধুলিহর বাজার থেকে ধরে কমরউদ্দিন ঢালীকে দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে যায় ১০/১২ জন রাজাকার সদস্য। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন সাতক্ষীরা মহকুমার রাজাকার কমান্ডার এম আব্দুল্লাহ আল বাকী ও খান রোকনুজ্জামান। পরে ঢালীর মরদেহ পাওয়া যায় বেতনা নদীর পাড়ে।
তৃতীয় অভিযোগ- ১৯৭১ সালের ১ ভাদ্র বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার দিকে রাজাকার কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল বাকী, রোকনুজ্জামান খানসহ চার থেকে পাঁচজন মিলে সবদার আলী সরদারকে চোখ বেঁধে পিকআপ ভ্যানে তুলে নিয়ে যায়। পরে আর তার সন্ধান মেলেনি।
চতুর্থ অভিযোগ- ১৯৭১ সালের ৭ আষাঢ় সকাল ৭টার দিকে আবুল হোসেন ও তার ভাই গোলাম হোসেন নিজেদের বাড়ির পাশে জমিতে হালচাষ করছিলেন। সকাল ৯টার দিকে গোলাম হোসেন বাড়িতে নাস্তা খেতে এলে আসামি আব্দুল খালেক মন্ডল ও জহিরুল ইসলাম টেক্কা খানসহ ১০/১২ জন রাজাকার সদস্য তাকে ধরে নিয়ে পাশের পাটক্ষেতে গুলি করে হত্যা করে।
পঞ্চম অভিযোগ- ১৯৭১ সালের ২ ভাদ্র সকালে বাশদহ বাজারের ওয়াপদা মোড় থেকে মো. বছির আহমেদকে ধরে নিয়ে নির্যাতনের পর তার বুড়ো আঙুলের রগ কেটে দেয় রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা।
ষষ্ঠ অভিযোগ- ১৯৭১ সালের জ্যেষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি কোনো এক সময়ে আসামি আব্দুল খালেক মন্ডল ও রাজাকার কমান্ডার জহিরুল ইসলাম টেক্কা খান একদল পাকিস্তানি সৈন্যকে সঙ্গে নিয়ে কাথণ্ডা প্রাইমারি স্কুলে স্থানীয় গ্রামবাসীদের ডেকে মিটিং করে। সেই মিটিংয়ে বলা হয়, যারা আওয়ামী লীগ করেন এবং যারা মুক্তিযুদ্ধে গেছেন- তারা ‘কাফের’। এরপর তারা কাথণ্ডা ও বৈকারি গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়া ব্যক্তিদের বাড়ি-ঘর লুট করে জ্বালিয়ে দেয়। সে সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দুই সদস্য মৃত গোলাম রহমানের স্ত্রী আমিরুনকে তার বাড়ির রান্নাঘরের পেছনে আটকে ধর্ষণ করে। এছাড়া বৈকারি গ্রামের ছফুরা খাতুনকে মৃত শরীয়তউল্লাহর ফাঁকা বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করে চার পাকিস্তানি সৈন্য।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
#
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat