বাংলাদেশ উন্নয়নের সঠিক পথে থাকায় চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ২ শতাংশ অর্জিত হবে বলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা আগেই আমরা ৭ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করেছিলাম। আমি বিশ্বাস করি এবার আমরা এটি অর্জন করতে সক্ষম হবো।’
সোমবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটির (সিসিজিপি) সভাশেষে তিনি এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন। ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত সভায় অর্থমন্ত্রী সভাপতিত্ব করেন।
চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হবে বলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গতকাল পূর্বাভাস দিয়েছে। এর আগে গত অক্টোবরে সংস্থাটি জানায় এবার প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। পূর্বের পূর্বাভাসের চেয়ে প্রবৃদ্ধি বেশি হবে বলে আইএমএফের গতকাল দেওয়া প্রক্ষেপনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপনের বিষয়ে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ সবসময় রক্ষণশীল থাকে। তবে, ভাল খবর হল যে তারা জিডিপি প্রবৃদ্ধির আগের পূর্বাভাসকে বাড়িয়ে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ করেছে।এটি আমাকে বিশ্বাস করতে সাহায্য করেছে যে আমরা এবছর ৭ দশমিক ২ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হব। ইনশাল্লাহ।’
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের পরিসংখ্যাণ থেকে দেখা যায়, প্রায় সবক্ষেত্রেই বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। গত নভেম্বর মাসে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩১ শতাংশের বেশি এবং জুলাই-নভেম্বর সময়ে রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ হারে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জণ করা গেছে।
তিনি বলেন, যেভাবে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, তাতে বছর শেষে ৪৭ থেকে ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি আয় হবে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন মাইলফলক তৈরি করবে। কামাল বলেন, বর্তমানে রৈমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা কম হলেও বছর শেষে সেটা ২১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যাবে। তবে তিনি মনে করেন মুসলিমদের বড় উৎসব দুই ঈদে বেশি রেমিট্যান্স আসে, সেটাকে বিবেচনায় নিলে চলতি অর্থবছরে ২৫ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসবে।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জণের বিষয়ে চানতে চাইলে কামাল বলেন, বিগত বছরগুলোতে সমানুপাতিকহারে অর্জণ হয়নি। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর দেশের জিডিপির আকার ১০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে প্রায় ৩৮ বছর লেগেছে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব ও দূরদর্শী চিন্তাভাবনার কারণে অধিকাংশ অর্জণ এসেছে গত ১৩ বছরে।
তিনি বলেন,জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, প্রতিটি নাগরিক দেশের আরও উন্নয়ন দেখতে চায়। ‘আমরা আমাদের অগ্রগতির মূল ক্ষেত্রগুলোকে আরও শক্তিশালী করার মাধ্যমে কাক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে যাব’ যোগ করেন তিনি।
আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশে উন্নীত হবে বলে অর্থমন্ত্রী দৃঢ় আশা প্রকাশ করেন।
সম্প্রতি বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আয়োজিত রোড শো’র ফলাফল সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে কামাল বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করেন এই রোড শো পুঁজিবাজারের উন্নয়নের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তিনি বিশ্বাস করেন রোড শো বাংলাদেশ সম্পর্কে বর্হিবিশ্বে ইতিবাচক ধারনা তৈরিতে ভূমিকা রাখছে।
কামাল বলেন, সারা বিশ্বের মানুষ মনে করে বাংলাদেশের সাফল্য একটি অলৌকিক ঘটনা, কিন্তু এটি অলৌকিক নয়, এটি বাস্তব ঘটনা। তিনি বলেন, এর আগে বাংলাদেশ তার সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারেনি। তবে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বেশ কিছু পরিকল্পনা যেমন, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা এবং ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়ন হচ্ছে। আমি মনে করি আমরা সঠিক পথে আছি।
জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পের আওতায় ৩ লাখ ৯৫ হাজার ট্যাব কেনার প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি জানান, মন্ত্রীসভায় এই প্রস্তাবটি অনুমোদন হয়নি। আরও কিছু তথ্য সহ পুনরায় প্রস্তাবটি ১০ দিনের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে।