মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙ্গালীর বিজয়ের পাঁচদিন পর ১৯৭১ সালের ২১ ডিসেম্বর অবরুদ্ধ নাটোরে আত্মসমর্পণ করে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী। সেদিন উত্তরা গণভবনে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর বিজয়ের উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে।
স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ঢাকায় অপারেশন সার্চলাইটে অসংখ্য বাঙ্গালীকে হত্যার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। যোগাযোগে সুবিধার কারণে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নাটোরে তাদের ২য় হেডকোয়ার্টার প্রতিষ্ঠা করে। সমগ্র উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের যুদ্ধ নাটোর থেকে পরিচালনা করা হতো। শহরের ফুলবাগানে সিও অফিসে স্থাপিত হয় প্রধান কার্যালয়। এছাড়া তৎকালীন গভর্ণর হাউস তথা বর্তমান উত্তরা গণভবন, রাণী ভবানী রাজবাড়ী, আনসার ক্যাম্প, পিটিআই এবং নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা কলেজে পাকিস্তান সেনাবাহিনী অবস্থান নেয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নবীউর রহমান পিপলু জানান, শহরের বিভিন্ন প্রান্তে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী অবস্থান নেওয়ায় নাটোর শহর ১৩ এপ্রিলের পর থেকে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ল
বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আলাউদ্দিন জানান, ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পর বীর মুক্তিযোদ্ধারা রণাঙ্গন থেকে নাটোরে ফিরে আসতে শুরু করেন। ১৬ ডিসেম্বর থেকে নাটোরে পাকিস্তানী বাহিনী নিজেদের গুঁটিয়ে নেয়।১৬ থেকে ২০ ডিসেম্বর উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন স্থান থেকে পাকিস্তানী সেনারা নাটোরে আসতে থাকে। নাটোরে আসে ভারতীয় মিত্রবাহিনী। এরপর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।
২১ ডিসেম্বর তৎকালীন গভর্ণর হাউস তথা বর্তমান উত্তরা গণভবনে ১৪১ জন অফিসার, ১১৮জন জেসিও, পাঁচহাজার ৪৫০জন সিপাহী এবং প্যারামিলিশিয়া বাহিনীর একহাজার ৮৫৬ জন সদস্য নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নওয়াব আহমেদ আশরাফ আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণ দলিলে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ডের পক্ষে স্বাক্ষর করেন মিত্র বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রঘুবীর সিং পান্নু। এ সময় অন্যান্যে মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মিত্র বাহিনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল লসমন সিং এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অধিনায়ক মেজর জেনারেল নজর শাহ্। ১০ হাজার ৭৭৩টি অস্ত্রসহ জমা হয় ট্যাংক, মর্টার এবং সাঁজোয়া যান।
নাটোরে পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সারাদিন ধরে শহরে চলে বিজয় মিছিল আর মুক্ত আকাশে গান ফায়ার। ‘জয়বাংলা’ শ্লোগানে মুখরিত হয় সারা শহর।
তৎকালীন বৃহত্তর রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও বর্তমানে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এমপি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নাটোর মুক্ত দিবসকে (২১ ডিসেম্বর) রেড লেটার ডে হিসেবে অভিহিত করে বলেন, পাঁচদিন ধরে রুদ্ধশ্বাসে প্রতীক্ষার পরে বিজয়ের এই আনন্দ আরো বেশী গৌরবের।
এদিকে, ২১ ডিসেম্বর নাটোর মুক্ত দিবস উপলক্ষে শহরে যৌথভাবে বিজয় শোভাযাত্রার আয়োজন করবে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নাটোর জেলা কমান্ডের মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড। শোভাযাত্রা শেষে স্বাধীনতা চত্বরের স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গনে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড নাটোর জেলা কমিটির সদস্য সচিব সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুল।