মহামারী করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যেই শেষ হওয়া ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হলো মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। গতরাতে টুর্নামেন্টের ত্রয়োদশ আসরের ফাইনালে দিল্লি ক্যাপিটালসকে ৫ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন মুম্বাই। এই নিয়ে রেকর্ড পাঁচবার আইপিএলের শিরোপা জিতলো রোহিত শর্মার দল।
গেল আসরের চ্যাম্পিয়ন মুম্বাই, শিরোপা ধরে রাখার মিশন নিয়ে দুবাইয়ে ফাইনাল খেলতে নামে। প্রথমবারের মত ফাইনালে উঠা দিল্লিরও লক্ষ্য ছিলো সেরার মুকুট মাথায় পড়া। সেই লক্ষ্যে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত নেয় দিল্লির অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ার।
ইনিংসের প্রথম বলেই দিল্লির উইকেট তুলে নেন মুম্বাই পেসার নিউজিল্যান্ডের ট্রেন্ট বোল্ট। অস্ট্রেলিয়ার মার্কাস স্টয়নিকে খালি হাতে বিদায় দেন বোল্ট। তৃতীয় ওভারে আবারো বোল্টের আঘাত। এবার শিকার ২ রান করা আজিঙ্কা রাহানে।
বোল্টের জোড়া আঘাতের পর দিল্লির চাপ আরও বাড়িয়ে দেন এবারের আসরে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামা অফ-স্পিনার জয়ন্ত যাদব। ইনফর্ম শিখর ধাওয়ানকে ১৫ রানেই বিদায় দেন জয়ন্ত। ফলে ২২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই মহাচাপে পড়ে দিল্লি। এ অবস্থায় চাপমুক্ত হবার আশায় ছিলো দিল্লি।
আর সেই কাজটি দক্ষতার সাথেই করেছেন দিল্লির দুই মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান অধিনায়ক আইয়ার ও উইকেটরক্ষক ঋসভ পান্থ। মুম্বাইয়ের বোলারদের সর্তকতার সাথে খেলে উইকেটে সেট হন তারা। পরবর্তীতে রানের গতি বাড়িয়েছেন আইয়ার ও পান্থ। ১৪তম ওভারে দিল্লির স্কোর শতরানে পৌঁছে দেন তারা।
৩৬ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করে আউট হন পান্থ। তাকে থামিয়ে জুটি ভাঙ্গেন মুম্বাইয়ের পেসার অস্ট্রেলিয়ান নাথান কলটার নাইল। ৩৮ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫৬ রান করেন পান্থ। চতুর্থ উইকেটে ৬৯ বলে ৯৬ রান যোগ করেন পান্থ-আইয়ার।
পান্থ ফিরে গেলেও, শেষ ৫ ওভারে খুব বেশি রান তুলতে পারেননি আইয়ার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের শিমরোন হেটমায়ার ও অক্ষর প্যাটেল ডেথ ওভারে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই অন্যপ্রান্তে সতীর্থদের সহায়তায় ছাড়াই দিল্লিকে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫৬ রানের পুঁিজ এনে দেন আইয়ার। ৫০ বলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় অপরাজিত ৬৫ রান করেন তিনি। মুম্বাইয়ের বোল্ট ৪ ওভারে ৩০ রানে ৩ উইকেট নেন। নাইল ২টি ও জয়ন্ত ১টি উইকেট নেন।
১৫৭ রানের টার্গেটে মারমুখী মেজাজে শুরু করে মুম্বাই। ৪ ওভারে ৪৫ রান তোলেন দুই ওপেনার অধিনায়ক রোহিত ও দক্ষিণ আফ্রিকার কুইন্টন ডি কক। পঞ্চম ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসেই ব্রেক-থ্রু এনে দেন দিল্লির স্টয়নিস। ১২ বলে ২০ রান করেন ডি কক।
ডি কককে হারালেও, রানের চাকা দ্রুত ঘুড়িয়ে প্রতিপক্ষের বোলারদের উপর চাপ অব্যাহত রাখেন রোহিত। সঙ্গী ছিলেন ইনফম সূর্যকুমার যাদব। ১০ ওভারে ৮৮ রানে পেয়ে যায় মুম্বাই। ১১তম ওভারে রোহিতের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউট হন ১৯ রান করা সূর্য।
এরপর ৩৬ বলে এবারের আসরে তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান আইপিএলে ২শতম ম্যাচ খেলতে নামা রোহিত। হাফ-সেঞ্চুরি তুলে দলকে জয়ের কাছে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু জয় থেকে ২০ রান দূরে থাকতে থামতে হয় তাকে। ৫১ বলে ৫টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৬৮ রান করা রোহিত শিকার হন দক্ষিণ আফ্রিকার এনরিচ নর্টির।
এরপর আরও দুই উইকেট হারায় মুম্বাই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাইরন পোলার্ড ৯ ও হার্ডিক পান্ডিয়া ৩ রান করেন। তবে ৮ বল বাকী রেখে জয় পেতে কোন সমস্যা হয়নি মুম্বাইয়ে। ইষান কিশান ও ক্রুনাল পান্ডিয়ার হাত ধরে শিরোপা নিশ্চিত হয় মুম্বাইয়ের।
তৃতীয় উইকেটে রোহিতের সাথে ৪৭ রান যোগ করা কিশান ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন। তার ১৯ বলের ইনিংসে ৩টি চার ও ১টি ছক্কা ছিলো। ক্রুনালের ব্যাট থেকে জয়সূচক রানটি। তাই ১ রানেই অপরাজিত থাকেন তিনি। ম্যাচ সেরা হয়েছেন মুম্বাইয়ের বোল্ট। আর টুর্নামেন্ট সেরা হন রাজস্থান রয়্যালসের জোফরা আর্চার। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছেন কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের লোকেশ রাহুল। ১৪ ম্যাচে ৬৭০ রান করেছেন তিনি। আর ১৭ ম্যাচে ৩০ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী দিল্লির দক্ষিণ আফ্রিকান খেলোয়াড় কাগিসো রাবাদা।