‘করোনা ভাইরাস’ নিয়ে কোনো ধরনের গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি আজ বিকেলে রাজধানীর সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে দেশের নাট্যাঙ্গনের প্রতিনিধিদের সাথে ‘করোনা পরিস্থিতিগত’ মতবিনিময় শেষে দেয়া বক্তব্যে এ আহ্বান জানান।
নাট্যকার মামুনুর রশীদের নেতৃত্বে ডিরেক্টরস গিল্ড, নাট্যকার সংঘ, প্রযোজক সমিতি ও অভিনয় শিল্পী সংঘের প্রতিনিধিবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেশবাসীকে অনুরোধ জানাবো, কেউ দয়া করে গুজব ছড়াবেন না। যেমন একটি গুজব ছড়ানো হয়েছে যে, ইউনাইটেড হাসপাতালে চারজন ডাক্তার করোনায় আক্রান্ত, যেটি পুরোপুরি গুজব। এধরণের গুজব ছড়িয়ে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করলে সরকার আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বদ্ধপরিকর উল্লেখ করে তিনি এধরণের গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, “সাংবাদিক ভাইদের অনুরোধ জানাবো কেউ এধরণের গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করলে আপনারাও তা প্রতিহত করবেন।”
ড. হাছান জানান, ‘বুধবার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যিনি মৃত্যুবরণ করেছেন, তার মেয়ে আমেরিকায় থাকেন। মেয়ে এসে বাবার সাথে ছিলেন, চলে গেছেন, বাবা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। অর্থাৎ পরিবারের মধ্যে সংক্রমণটা হয়েছে পরিবারের সদস্যের মাধ্যমে। সুতরাং সতর্কতার বিষয়গুলো আমাদের অবশ্যই মেনে চলা প্রয়োজন বলে আমি মনেকরি।’ ‘আমাদের দেশে সরকারের পক্ষ থেকে সমস্ত প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে’ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এতদসত্ত্বেও আপনারা জানেন বাংলাদেশের এক কোটি মানুষ বিদেশে থাকে। কয়েক লক্ষ মানুষ ইতালী এবং স্পেনে থাকে। ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতেও লাখ লাখ বাঙ্গালি বসবাস করে। ইউরোপে যখন এই করোনা ভাইরাস ব্যাপকতা পায়, তখন আমাদের প্রবাসী বাঙ্গালীরা অনেকেই দেশে চলে এসেছেন। মূলত: তাদের মাধ্যমেই আমাদের দেশে করোনা ভাইরাস এসেছে।’
হাছান মাহমুদ বলেন, করোনা ভাইরাস থেকে দেশকে মুক্ত রাখার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সে মোতাবেক অনেক নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে, কিন্তু অনেক প্রবাসী ভাই সেটি অনেকক্ষেত্রে মানেননি, যে কারণে অনেকের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপও নিতে সরকার বাধ্য হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রবাসীরা যখনই আসেন, তাদেরকে সেলফ কোয়ারেন্টাইনে যাওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া আছে। কিন্তু অনেকে মানছেন না। যেহেতু অনেকে মানছেন না, আমি প্রবাসী ভাই-বোনদেরকে অনুরোধ জানাবো, আমি নিজে প্রবাসে ছিলাম বহুদিন, নিজেকে ও নিজের পরিবারকে রক্ষা করার জন্য, নিজের আত্মীয়-স্বজনকে রক্ষা করার জন্য, দেশকে রক্ষা করার জন্য, প্রত্যেকের সতর্কতামূলক প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সরকার যে নির্দেশনা দিয়েছে, ১৫ দিন সেলফ কোয়ারেন্টাইনে থাকার, নিজের স্বার্থে, নিজের পরিবারের স্বার্থে এবং দেশের স্বার্থে এটি সবার মেনে চলার প্রয়োজন।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মনেকরি, বাংলাদেশে যাতে এই করোনা ভাইরাস ব্যাপকতা না পায়, এটি আরো মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন, তবে এক্ষেত্রে কোনো ‘প্যানিক’ (আতঙ্ক) তৈরি উচিত নয়’। মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এবং মহান ¯্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করি, এই বৈশ্বিক দুর্যোগ থেকে আমরা আমাদের দেশকে যেন রক্ষা করতে পারি। তবে এজন্য সবার সর্তকতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। আজকে বোম্বে বা কোলকাতায় কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, আমাদের দেশেও অনেক কিছু সীমিত করা প্রয়োজন। সেজন্যই আমরা আজকে বৈঠকে বসেছি।’
ড. হাছান বলেন, ‘আপনারা জানেন, বোম্বে ও কালকাতায় সব স্যুটিং বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, সমস্ত ব্যবস্থা নেয়া সত্ত্বেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ করোনা ভাইরাস থেকে নিজেদেরকে মুক্ত রাখতে পারেনি। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোও এ বৈশ্বিক দুর্যোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি। ইটালী এবং স্পেন পৃথিবীর উন্নত দেশ, সেখানের পরিস্থিতি ভয়াবহ। আশার কথা একটি- সেটি হচ্ছে চীনে, যেখান থেকে করোনা ভাইরাসের সূত্রপাত, সেখানে তারা এটিকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। চীনের তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘন্টায় সেখানে একজনও নতুনভাবে আক্রান্ত হয়নি। এটি আশার দিক।’
নাট্যকার মামুনুর রশীদ জানান , দেশের নাট্যাঙ্গনের সকল সমিতির প্রতিনিধিরা এদিন সন্ধ্যায় বৈঠকে আগামী ২২ থেকে ৩১ মার্চ সকল নাটকের স্যুটিং স্থগিত রাখা হবে কি না, সেবিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন হবে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন অনুষ্ঠান করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন নির্দিষ্ট সময়ে হবে কি হবে না, সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্বও নির্বাচন কমিশনের। নিশ্চয়ই নির্বাচন কমিশন সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
নাট্যকার মামুনুর রশীদের নেতৃত্বে এস এ হক অলীক, ইরেশ জাকের, শহীদুজ্জামান সেলিম, সাজু মুন্তাসির, এজাজ মুন্না প্রমুখ সভায় অংশ নেন।